Jammu And Kashmir

কাশ্মীর নিয়ে তোলপাড় সংসদ, পক্ষে-বিপক্ষে ওলটপালট জোটের হিসাব

এই সিদ্ধান্তের প্রবল বিরোধিতা করেন কংগ্রেস-সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাংসদরা।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৯ ১২:৩২
Share:

সংসদের বাইরে বিক্ষোভ পিডিপি সাংসদ ফৈয়াজ আহমেদ মীরের। ছবি: এএফপি।

জম্মু-কাশ্মীরের ৩৭০ ধারা বাতিল নিয়ে সোমবার দফায় দফায় উত্তাল হয়ে উঠল সংসদ। রাজ্যসভায় প্রবল বিরোধিতার মুখে পড়েও প্রস্তাবকে পাশ করিয়ে নিয়েছে বিজেপি। ফলে এখন থেকে আর বিশেষ মর্যাদা থাকছে না জম্মু-কাশ্মীরের।

Advertisement

এ দিন রাজ্যসভায় জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে বিবৃতি দেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি ৩৭০ ধারা বাতিলের প্রস্তাব দেন। তাঁর এই প্রস্তাব পেশের সঙ্গে সঙ্গে তুমুল হইচই জুড়ে দেন কংগ্রেস, পিডিপি, তৃণমূল কংগ্রেস, ডিএমকে-র সাংসদরা। তারা রাজ্যসভার মেঝেতেই ধর্নায় বসে পড়েন। পাশাপাশি এই প্রস্তাবের প্রবল বিরোধিতা করে আরজেডি ও সমাজবাদী পার্টি এবং সিপিএম। রাজ্যসভা থেকে ওয়াক আউট করে বিজেপির শরিক দল জেডি (ইউ)। নিজের জামা ছিঁড়ে প্রতিবাদ জানান রাজ্যসভায় পিডিপি সাংসদ ফৈয়াজ আহমেদ মীর। সংবিধানের কপি ছিঁড়ে ফেলার জন্য পিডিপি সাংসদ ফৈয়াজ ও নাজির আহমেদকে সংসদ ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন রাজ্যসভার চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নায়ডু।

কংগ্রেস সাংসদ গুলাম নবি আজাদ কেন্দ্রের শাসক দলকে তীব্র আক্রমণ করে বলেন, “এক ঝটকায় ৩-৪টে জিনিসকে শেষ করে দিল বিজেপি। এক দিকে ওরা যেমন ৩৭০ ধারার অবলুপ্তি ঘটাল, সেই সঙ্গে ৩৫এ ধারাকেও শেষ করে দিল। গণতন্ত্রকে আজ খুন করল বিজেপি।” আজাদ যখন আক্রমণ শানাতে শুরু করেছেন সে সময় তাঁকে থামিয়ে দিয়ে অমিত শাহ পাল্টা বলেন, “১৯৫২ ও ১৯৬২ সালে কংগ্রেস একই পদ্ধতিতে ৩৭০ ধারার সংশোধন করেছিল। অতএব বিরোধিতা না করে আমাকে বলতে দিন। আপনাদের সব সন্দেহ এবং ভুল বোঝাবুঝির বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে।” কিন্তু তার পরেও বিরোধীদের সুর চড়াতে দেখা যায় সংসদে।

Advertisement

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

৩৭০ ধারা সম্পর্কে এই তথ্যগুলি জানেন?

আরও পড়ুন: কাশ্মীর নিয়ে চাপানউতোরের মধ্যেই অনুপমের টুইট, ‘সমাধান শুরু হয়ে গিয়েছে’

কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের প্রবল বিরোধিতা করেন পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতি। তিনি বলেন, “আজ ভারতীয় গণতন্ত্রের কালো দিন। ৩৭০ ধারাকে বাতিল করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত কেন্দ্রের। এটা সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক।” এর পাশাপাশি বলেন, “কেন্দ্রের পরিকল্পনাটা এখন স্পষ্ট। রাজ্যের মানুষকে ভয় দেখিয়ে জম্মু-কাশ্মীর দখল করতে চাইতে তারা। কাশ্মীরকে যে কথা দেওয়া হয়েছিল, তা রাখতে ব্যর্থ হয়েছে ভারত।” ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লা এক বিবৃতি জারি করে জানান, এটা একটা হতাশাজনক সিদ্ধান্ত। কাশ্মীরের মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হল।

কেন্দ্রের অনেক সিদ্ধান্ত বা নীতির বিরোধিতা করলেও ৩৭০ ধারার বিষয়ে কিন্তু তাদের পাশেই দাঁড়িয়েছে বহুজন সমাজ পার্টি, বিজু জনতা দল, ওয়াইএসআর কংগ্রেস, তেলঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতি, এআইএডিএমকে, আম আদমি পার্টি-র মতো দলগুলি। আপ সুপ্রিমো অরবিন্দ কেজরীবাল বলেন, “ জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে সরকারের এই সিদ্ধান্তকে আমরা সমর্থন করছি। আশা করি এই সিদ্ধান্তের ফলে রাজ্য শান্তি ফিরে আসবে। উন্নয়ন হবে।” প্রধানমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রশংসা করে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অরুণ জেটলি বলেন, “একটা ঐতিহাসিক ভুলের সংশোধন হল। সংবিধানের ৩৬৮ ধারাকে না মেনে পিছন দরজা দিয়ে ৩৫এ ধারাকে আনা হয়েছিল।”

সোমবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাসভবনে কাশ্মীর নিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়। এই বৈঠককে ঘিরে এ দিন সকাল থেকেই জল্পনা ছিল তুঙ্গে। কী সিদ্ধান্ত হতে চলেছে বৈঠকে সে দিকে তাকিয়ে ছিল গোটা দেশ। অবশেষে সেই জল্পনার অবসান হল রাজ্যসভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বিবৃতির পর। বিশেষ মর্যাদা তুলে নেওয়া হল জম্মু-কাশ্মীরের। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে জম্মু-কাশ্মীরকে পুনর্গঠিত করে দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করা হল। একটি জম্মু কাশ্মীর অন্যটি লাদাখ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement