বক্তৃতা করছেন নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।
ইন্টারনেট বন্ধ। মোবাইল-টেলিফোন বন্ধ। কেব্ল পরিষেবা বন্ধ। ডিশ-অ্যান্টেনা না থাকলে টিভি চলার কথা নয়।
কাশ্মীর উপত্যকার কত মানুষ আজ দূরদর্শনে জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা শুনতে পেলেন, জানা নেই। কিন্তু নরেন্দ্র মোদী তাঁদের ইদের আগাম শুভেচ্ছা জানালেন। আশ্বাস দিলেন, আগামী সোমবার ইদের সময় কাশ্মীরের বাইরে থাকা মানুষ ঘরে ফিরতে পারবেন। সরকার তার জন্য সব রকম পদক্ষেপ করবে।
৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ করার পর ইদই এখন মোদী সরকারের সবথেকে বড় মাথাব্যথা। কারণ ইদের সময় কার্ফু না-তুললে ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত লাগবে। অন্য দিকে কার্ফু শিথিল করলে সেই সুযোগে বিক্ষোভ শুরু হতে পারে। এই দ্বন্দ্বের মুখে দাঁড়িয়েই আজ মুসলিমদের কাছে টানার চেষ্টা করেছেন মোদী। এ দিন তিনি স্বীকার করেছেন যে, বর্তমান পরিস্থিতিতে কাশ্মীরের সাধারণ মানুষকে অনেক অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। কিন্তু তাঁর দাবি, সাধারণ মানুষই তার মোকাবিলা করছেন। পরিস্থিতি ক্রমশ স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
দ্বিতীয় বার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পরই মোদী বলেছিলেন, সবকা সাথ, সবকা বিকাশ-এর সঙ্গে এ বার তাঁর নতুন মন্ত্র হবে সবকা বিশ্বাস। বিশেষত সংখ্যালঘুদের বিশ্বাস। ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ করার সিদ্ধান্তের পর সংসদে বিরোধীরা প্রশ্ন তোলেন, এটাই কি ‘সবকা বিশ্বাস’-এর পথ? উত্তরে বিজেপি নেতা-মন্ত্রীরা বোঝানোর চেষ্টা করেন, এটি মুসলিম-বিরোধী পদক্ষেপ নয়। আজ প্রধানমন্ত্রীও কাশ্মীরের বীর পুত্র-কন্যাদের তালিকা খুলে প্রথমেই উল্লেখ করেন, পুঞ্চ জেলার মৌলবি গুলাম দিন-এর কথা। ১৯৬৫ সালের যুদ্ধে পাক অনুপ্রবেশকারীদের খবর সেনাকে জানিয়েছিলেন তিনিই। জঙ্গিদের মেরে কীর্তিচক্র জয়ী রাজৌরির রুকসানা কওসর, পুঞ্চে জঙ্গিদের হাতে নিহত ঔরঙ্গজেবের কথাও মনে করিয়েছেন মোদী। বলতে ভোলেননি, ঔরঙ্গজেবের দুই ভাই সেনায় যোগ দিয়েছেন। জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের অনেক অফিসার-জওয়ানও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে শহিদ হয়েছেন।
ইদ নিয়ে মোদী আশ্বাস দিলেও তার রোডম্যাপ এখনও চূড়ান্ত করেনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। যদিও মন্ত্রক সূত্রে খবর, কার্ফু শিথিল করা হবে। কিন্তু কত ক্ষণের জন্য করা হবে, শুধু ইদের দিনই করা হবে, না কি ইদের আগের কেনাকাটার কথা মাথায় রেখে কার্ফু ঢিলে হবে, তা নিয়ে এখনও চূড়ান্ত নির্দেশ যায়নি দিল্লি থেকে। তবে কার্ফুর কারণে রসদে যাতে টান না পড়ে, তার জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় বস্তু আজ পঠানকোট থেকে বিমানে শ্রীনগরে পাঠানো হয়েছে।
ইদে প্রবাসী কাশ্মীরিদের নিরাপদে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার ব্যাপারে আজ রাজ্যপাল সত্যপাল মালিকও বৈঠক ডাকেন। একাধিক অফিসারকে জেলা ভাগ করে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।