—ফাইল চিত্র।
শুধুই কি উন্নয়ন? সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা? বিচ্ছিন্নতাবাদ রোখা? পাকিস্তানের ষড়যন্ত্র বানচাল করা?
প্রায় চল্লিশ মিনিটের বার্তায় সুকৌশলে বিজেপি-র সম্প্রসারণের পরিকল্পনা জানিয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। জম্মু ও কাশ্মীরে মুফতি-আবদুল্লা পরিবারের দলগুলিকে অপ্রাসঙ্গিক করে বিজেপি নতুন করে কী ভাবে ‘দেশভক্ত’ যুব নেতৃত্ব তৈরি করতে চায়, পরোক্ষে শুনিয়ে দিলেন তা-ও।
প্রধানমন্ত্রী আজ বলেন, ‘‘জম্মু-কাশ্মীরের পরিবারতন্ত্র যুবকদের সুযোগ দেয়নি। এ বার আমার যুবকরাই জম্মু-কাশ্মীরের উন্নয়নে নেতৃত্ব দেবেন, নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবেন।… কিছু মুষ্টিমেয় লোক পরিস্থিতি বিগড়োতে চাইছেন। কিন্তু দেশভক্ত লোকেরাই ধৈর্যের সঙ্গে জবাব দেবেন।… আগামী দিনে ভোট হবে। জম্মু-কাশ্মীরে আগের মতোই মুখ্যমন্ত্রী, বিধায়ক, মন্ত্রিসভা হবে। আপনাদের মধ্যে থেকেই হবে।… পরিবারতন্ত্র বড় দুর্নীতি ছাড়া কিছু করেনি। অতীতের সরকার লুঠত।…যে স্বপ্ন সর্দার পটেল, বাবা সাহেব অম্বেডকর, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, অটলজি ও কোটি দেশভক্ত দেখেছিলেন, আজ তা পূর্ণ হল।’’
বিজেপি নেতারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী এই সব বক্তব্য যে ভাবে শুনিয়েছেন, তাতে দলের কাছে বার্তা স্পষ্ট। এক, বহু বছর ধরে ফারুক ও ওমর আবদুল্লা এবং মুফতি পরিবার শুধুই দুর্নীতি করেছেন। এখন সময়, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে নতুন করে যুবকদের নেতৃত্ব তৈরি করা। প্রধানমন্ত্রী নেহরু-গাঁধীর নাম নেননি। কিন্তু যাঁদের নাম করেছেন, তাঁরা সকলে এখন বিজেপিরই ‘আইকন’। বার্তা স্পষ্ট, ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপের পর এখন বিজেপি-র যুব ব্রিগেড তৈরি করে তাদের হাতে ধীরে ধীরে নেতৃত্ব সঁপে দেওয়া।
সপ্তাহ দুয়েক আগে অবশ্য জম্মু-কাশ্মীরের নেতাদের দিল্লিতে ডেকে ভোটের জন্য তৈরি হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন অমিত শাহ। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী ভোটের জন্য সময়সীমার কোনও ইঙ্গিত দেননি আজ। যা দেখে বিজেপি-র কিছু নেতা মনে করছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া পর্যন্ত কেন্দ্র যেমন অপেক্ষা করবে, তেমন দলের ভিত মজবুত করার জন্যও সময় নেওয়া হতে পারে। জম্মু-কাশ্মীর সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হলে তবেই ফের রাজ্যের মর্যাদা দেওয়া হবে।
কংগ্রেসের নেতা কর্ণ সিংহ আজই বিবৃতি জারি করে মোদী সরকারের সিদ্ধান্তের অনেকটাই সমর্থন করেছেন। একই সঙ্গে আবদুল্লা পরিবারের নেতা ও মেহবুবা মুফতিদের যে ভাবে বন্দি রাখা হয়েছে, তার সমালোচনা করেছেন। অবিলম্বে তাঁদের ছেড়ে দিয়ে আলোচনায় বসারও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
কিন্তু সংসদে ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপের বিতর্কের সময় থেকেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল, এ বারে জম্মু-কাশ্মীরের আঞ্চলিক দলগুলিকে অপ্রাসঙ্গিক করে দিয়ে বিজেপি-র ভিত গড়াই মূল লক্ষ্য। তারপর আসন পুনর্বিন্যাস করে কাশ্মীরের বদলে জম্মুকে ক্ষমতার কেন্দ্রে নিয়ে এসে বিধানসভায় দলের শক্তি আরও বাড়ানো। যাতে ভবিষ্যতে বিজেপির-ই মুখ্যমন্ত্রী মসনদে বসতে পারেন।
মোদী সরকারের এক মন্ত্রী বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত ভোটের সময়েই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল, দুই পরিবারের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি হয়েছে। মানুষ তাঁদের এখন পছন্দ করেন না। বরং আজ প্রধানমন্ত্রী উন্নয়নের যে স্বপ্ন দেখিয়েছেন, তার বাস্তবায়ন হলে সে সব দল ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের পক্ষে যে টুকু সমর্থন রয়েছে, তা-ও দূর হবে।’’