গ্রেফতার মেহবুবা মুফতি এবং ওমর আবদুল্লা। —ফাইল চিত্র।
গ্রেফতার করা হল জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতি। হেফাজতে নেওয়া হয়েছে রাজ্যের আর এক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাকেও। কাশ্মীরস পিপলস কনফারেন্সের দুই নেতা সাজ্জাদ লোন এবং ইমরান আনসারিকেও বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। রবিবার মধ্যরাত থেকে গৃহবন্দি ছিলেন তাঁরা। শ্রীনগরের বাড়ি থেকে মেহবুবাকে সরিয়ে নিকটবর্তী সরকারি গেস্ট হাউসে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে খবর। সরকারি সিদ্ধান্তকে আদালতে চ্যালেঞ্জ জানাবেন বলে এ দিনই বিবৃতি দেন ওমর আবদুল্লা। তাঁকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তা সোমবার রাত পর্যন্ত জানা যায়নি। এ নিয়ে কোনও বিবৃতি দেওয়া হয়নি কেন্দ্রীয় সরকার বা উপত্যকার প্রশাসনের তরফেও।
উপত্যকার জন্য সংরক্ষিত ৩৭০ এবং ৩৫এ ধারা বিলোপের পক্ষে বহু দিন ধরেই সওয়াল করে আসছিল বিজেপি। এ বছর তাদের নির্বাচনী ইস্তাহারেও তার উল্লেখ ছিল। মে মাসে ক্ষমতায় আসার পরেই সেই প্রতিশ্রুতি পূরণে উদ্যত হন নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহরা, শুরু থেকেই যার তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন উপত্যকার রাজনৈতিক নেতৃত্ব। ‘আগুন নিয়ে খেলবেন না,’ বলে কেন্দ্রীয় সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন মেহবুবা নিজেও। তার মধ্যেই গত সপ্তাহে আচমকা অমরনাথ যাত্রা বন্ধ করে দেওয়া হয়। সমস্ত তীর্থযাত্রী এবং পর্যটকদের নির্দেশ দেওয়া হয় কাশ্মীর ছেড়ে চলে যেতে।
এর পাশাপাশি, নিরাপত্তাও আঁটোসাঁটো করা হয় গোটা উপত্যকার। দফায় দফায় আধা সামরিক বাহিনী পাঠানো হয় সেখানে। তার জেরে শনিবার সর্বদলীয় বৈঠক করেন মেহবুবা-ওমররা। রবিবার রাতেই গৃহবন্দি করা হয় তাঁদের। এর পর এ দিন সকালে রাজ্যসভায় কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সম্মতিপত্র নিয়েই সংসদে হাজির হয়েছিলেন তিনি, যা একেবারেই ভারতের গণতান্ত্রিক এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থার পরিপন্থী বলে অভিযোগ তোলে কংগ্রেস, তৃণমূল-সহ বিরোধীরা। যদিও অমিত শাহ দাবি করেন, এ ক্ষেত্রে কোনও অনিয়ম হয়নি। এতে উপত্যকাবাসীই উপকৃত হবেন।
আরও পড়ুন: ৩৭০ রদ নিয়ে চিন-আমেরিকাকে জানাল ভারত, সম্ভাব্য সব রকম পদক্ষেপের হুমকি দিল পাকিস্তান
এ নিয়ে এখনও টানাপড়েন অব্যাহত। কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিরোধীরা। তার মধ্যেই মেহবুবা মুফতি এবং ওমর আবদুল্লাকে গ্রেফতার করা হল। সেই সঙ্গে এ দিন উপত্যকায় আরও আট হাজার আধাসেনা পাঠানো হয়েছে। বন্ধ রয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা। বন্ধ রয়েছে স্কুল, কলেজ এবং অফিসও। জম্মু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান বিনয় থুসু জানান, আগামী ৬ অগস্ট পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর স্তরের সমস্ত পরীক্ষা এবং ভর্তিও স্থগিত রাখা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ৩৭০ বাতিল, বিশেষ অধিকারের সঙ্গে রাজ্যের মর্যাদাও হারাচ্ছে জম্মু-কাশ্মীর, ভেঙে আলাদা হচ্ছে লাদাখ
জম্মু-কাশ্মীরের প্ল্যানিং কমিশনের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি রোহিত কানসল জানান, যথেষ্ট পরিমাণে খাবার এবং প্রয়োজনীয় সামগ্রী মজুত করে রাখা হয়েছে। তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে সাধারণ মানুষের কাছেও। আগামী তিন মাস চাল, গম, মাংস, ডিম এবং জ্বালানির জন্য ভাবতে হবে না উপত্যকাবাসীকে।