মেহবুবা মুফতিদের গ্রেফতার করা হয়েছে। ছবি সংগৃহীত।
‘কনপট্টী’-তে ‘গান’ রেখে ওঁকে বাড়ি থেকে বার করে আনতে পারব না।
অমিত শাহ তাঁর ডান হাতের দুই আঙুল পিস্তলের মতো করে নিজের কপালের পাশে (কান ও চোখের মাঝের যে অংশ হিন্দিতে কনপট্টী) ঠেকালেন। তার পর যুক্তি দিলেন, ‘‘ফারুক আবদুল্লা নিজের বাড়িতে রয়েছেন। তাঁকে গৃহবন্দি করা হয়নি। যদি তিনি নিজে থেকে বাড়ির বাইরে বার হতে না চান, তা হলে আমি ওঁর কানের গোড়ায় বন্দুক ঠেকিয়ে বার করে আনতে পারব না।’’
সোমবার রাজ্যসভায় ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ করার প্রস্তাব পেশ করার দিনই ওমর আবদুল্লা, মেহবুবা মুফতিদের গ্রেফতার করা হয়েছে। রাখা হয়েছে শ্রীনগরের সরকারি অতিথিশালায়। আজ লোকসভায় সেই প্রস্তাব নিয়েই আলোচনার সময় বারবার প্রশ্ন ওঠে, ফারুক আবদুল্লা কোথায়? তিনি লোকসভার সাংসদ। তাঁকেও কি গৃহবন্দি করা হয়েছে?
সত্যি সত্যিই মাথায় বন্দুক না ঠেকালেও, অমিত শাহ থেকে বিজেপির নেতারা আজ স্পষ্ট ভাষায় বুঝিয়ে দিয়েছেন, ফারুক-ওমর আবদুল্লার ন্যাশনাল কনফারেন্স ও মেহবুবা মুফতির পিডিপি-ই এখন জম্মু-কাশ্মীরে বিজেপির প্রধান রাজনৈতিক নিশানা। আঞ্চলিক দলের বাধা কেটে গেলেই কাশ্মীর উপত্যকায় বিজেপির জয়যাত্রায় বাধা থাকবে না বলে বিজেপি নেতাদের অঙ্ক।
লোকসভায় এ দিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ নাম না-করে অভিযোগ তোলেন, নেহরু-গাঁধী, আবদুল্লা ও মুফতি, এই তিন পরিবারই কাশ্মীরের সমস্যার মূলে। এঁরাই নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে ৩৭০ অনুচ্ছেদ জিইয়ে রেখেছেন। জম্মুর বিজেপি নেতা, প্রধানমন্ত্রী দফতরের প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ আরও সরাসরি ন্যাশনাল কনফারেন্স, পিডিপি-কে আক্রমণ করে বলেছেন, ‘‘এঁদের গদিতে বসিয়ে দিলে এঁরা বলেন, কাশ্মীর ভারতের অখণ্ড অঙ্গ। আর গদিচ্যুত হলেই কাশ্মীরের স্বশাসন, গণভোটের কথা বলতে শুরু করেন। দুই পরিবার কাশ্মীরের মানুষকে ঠকানোর চেষ্টা করেছে। ঠকিয়ে চলেছে। এ বার তাঁদের
সময় শেষ।’’
ফারুক শ্রীনগরে দাবি করেছেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মিথ্যে কথা বলছেন। তাঁকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। তাঁর বাড়ির বাইরে এক জন ডিএসপি-কে বসিয়ে রাখা হয়েছে। গত দু’দিন ধরে তাঁর সঙ্গে কাউকে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না। ওমরকেও জেলে বন্দি করে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ ফারুকের। লোকসভায় বিরোধীদের বারবার প্রশ্নের উত্তরে অমিত জানান, ফারুককে গৃহবন্দি, আটক বা গ্রেফতার কিছুই করা হয়নি।
কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধীর অভিযোগ, কাশ্মীরের মূলস্রোতের রাজনৈতিক নেতাদের গোপন জায়গায় বন্দি করে রাখা একেবারেই অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক। এটা অদূরদর্শিতা ও বোকামো। কারণ এই শূন্যতা পূরণ করবে সন্ত্রাসবাদীরা। এখনই বন্দি নেতাদের মুক্তি দেওয়া হোক।
সে পথে হাঁটা দূরের কথা। এক ধাপ এগিয়ে জিতেন্দ্র আজ মত দিয়েছেন, এনসি, পিডিপি ৮ থেকে ১০ শতাংশের ভোট এদিক-ওদিক করার খেলা খেলতে থাকে। এমন ভাবনা আসা উচিত যাতে নির্দিষ্ট মাত্রার ভোট না পেলে কেউ সাংসদ হতে পারবেন না। ফারুককে নিশানা করে লোকসভায় তাঁর ফাঁকা আসনের দিকে ইঙ্গিত করে জিতেন্দ্র বলেন, এনসি নেতৃত্ব স্বশাসনের কথা বলেন। কিন্তু জম্মু-কাশ্মীরের পঞ্চায়েত ভোটে যোগ দেন না। কিন্তু নিজেদের ক্ষমতার প্রশ্ন এলে তাঁরাই লোকসভা ভোটে আংশ নেন। লাদাখের বিজেপি সাংসদ জামইয়াং শেরিং নামগিয়ালও আজ লোকসভায় লাদাখের বঞ্চনার জন্য আবদুল্লা-মুফতি পরিবারকে দায়ী করেছেন।
পিডিপি নেত্রী মেহবুবা ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদের প্রস্তাব আনার পরে বলেছিলেন, এতে ভারতে কাশ্মীরের অন্তর্ভুক্তি বাতিল হয়ে গেল। ভারত জম্মু-কাশ্মীরে দখলদারি শক্তি হয়ে উঠল। আজ তাঁর মেয়ে ইলৎজা জাভেদ বলেন, ‘‘সরকারের সিদ্ধান্ত অগণতান্ত্রিক।’’ ফারুকেরও দাবি, অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ
করা একেবারেই অগণতান্ত্রিক। এর বিরুদ্ধে তাঁরা আদালতে যাবেন। জিতেন্দ্রর জবাব, ‘‘কারা অংশীদার? দেশের ১৩০ কোটি মানুষই কাশ্মীরের বিষয়ে অংশীদার।’’