ছবি: সংগৃহীত।
সংসদে নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহদের সরকার যখন বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইন (ইউএপিএ) সংশোধন করল, অন্য বিরোধীদের সঙ্গে তার প্রতিবাদে সরব হয়েছিল বামেরাও। সংশোধিত ‘কালা কানুন’কে তুলনা করা হয়েছিল ব্রিটিশ আমলের রাওলাট আইনের সঙ্গে। এ বার বাম-শাসিত কেরলে মাওবাদী দমনের নামে সেই ইউএপিএ প্রয়োগ ঘিরেই বাম শিবিরে বিবাদের জেরে হস্তক্ষেপ করতে হল সিপিএমের পলিটব্যুরোকে।
কেরলে মাওবাদী কার্যকলাপ মাথাচাড়া দিয়েছে বেশ কয়েক বছর ধরেই। পালাক্কাড জেলার আট্টাপাড্ডিতে জঙ্গলঘেরা গ্রামে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে মৃত্যু হয় চার জন মাওবাদীর। ওই অভিযানের দায়িত্বে ছিল কেরল পুলিশের সন্ত্রাস দমনের বিশেশ বাহিনী ‘থান্ডারবোল্ট’। সেই ‘সংঘর্ষ’ সাজানো ছিল কি না, এই বিতর্কের মাঝে দু’দিন আগে কোঝিকোড়ে সিপিএমেরই ছাত্র সংগঠনের সমর্থক দুই আইন পড়ুয়াকে আটক করে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা হয়েছে ইউএপিএ। বাম শরিক সিপিআইয়ের সুরেই সিপিএমের শীর্ষ স্তরের নেতারাও কেরল পুলিশের ওই আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এমন বিতর্কের জেরে পলিটব্যুরোর পরামর্শে শেষ পর্যন্ত রাজ্য পুলিশকে ভেবেচিন্তে পা ফেলার নির্দেশ দিতে হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নকে।
ঘটনাপ্রবাহ অনেককে মনে পড়িয়ে দিচ্ছে বাংলায় বাম জমানায় একটি টিভি স্টুডিয়ো থেকে বেরোনোর পরে সিপিআই (মাওবাদী)-র মুখপাত্র গৌর চক্রবর্তীকে গ্রেফতারের কথা। তাঁর বিরুদ্ধে পুরনো ইউএপিএ প্রয়োগ নিয়েও বামফ্রন্টে বিতর্ক বেধেছিল।
আরও পড়ুন: ৫০:৫০ সঙ্ঘাতের আবহেই অজিত পওয়ার-সঞ্জয় রাউত কথা, এনসিপি-সেনা জোট জল্পনা চরমে
ধৃত দুই ছাত্রের কাছ থেকে মাওবাদী প্রচারপত্র পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি পালাক্কাড জেলা পুলিশের। আট্টাপাড্ডির সংঘর্ষ নিয়ে তদন্তের দাবিও সে সব প্রচারপত্রে আছে বলে পুলিশের বক্তব্য। সিপিআই নেতারা প্রশ্ন তুলেছেন, ওই সংঘর্ষের বিরুদ্ধে মুখ খুললেই কি ইউএপিএ দিতে হবে? সিপিএমের পলিটব্যুরোর সদস্য এবং রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী এম এ বেবি সামাজিক মাধ্যমের সাহায্য নিয়ে বলেছেন, ‘ইউএপিএ যে একটা কালা কানুন, এই নিয়ে সিপিএম ও বামেদের কোনও সংশয় নেই। কিন্তু পুলিশের আধিকারিকেরা মনে হচ্ছে এখনও সেটা বোঝেননি! মানুষ বিশ্বাস করেন, কেরলের সরকার এই বিষয়ে অবস্থান স্পষ্ট করবে’।
কোঝিকোড়ের ধৃত ছাত্রদের পরিবারও মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ‘সুবিচার’-এর আর্জি জানিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বিজয়ন এ সবের প্রেক্ষিতেই নির্দেশ জারি করেছেন, জেলা পুলিশ এ বার থেকে যে কোনও ঘটনায় এমন গুরুতর আইন প্রয়োগ করতে পারবে না। আইজি পদমর্যাদার কোনও অফিসারের সঙ্গে আলোচনাসাপেক্ষে পদক্ষেপ করতে হবে।
সিপিআই নেতারা অবশ্য এতেই সন্তুষ্ট নন। ঘটনাস্থল ঘুরে এসে সিপিআইয়ের প্রতিনিধিদল দাবি করেছে, সেখানে ভাত-মাংস ছড়িয়ে ছিল। তার মানে মাওবাদীরা সংঘর্ষ চালানোর অবস্থায় ছিল না, তারা খাওয়া-দাওয়া করছিল। সিপিআই (মাওবাদী) দলের নেতা মনিবাসকমকে তুলে নিয়ে গিয়ে পুলিশ হত্যা করেছে বলেও প্রতিনিধিদলের অভিযোগ। সিপিআইয়ের কেরল রাজ্য সম্পাদক কানম রাজেন্দ্রনের বক্তব্য, ‘‘মাওবাদী দমনের নামে আমরা পুলিশ বা আইনের অপপ্রয়োগ করব না— এই অবস্থানে সিপিএম ও সিপিআইয়ের ফারাক নেই। ক্ষমতায় আছি বলে কি সেই অবস্থান ভুলে যেতে হবে?’’