ভগবদ্গীতা। —ফাইল চিত্র।
পড়ুয়াদের মধ্যে সাংস্কৃতিক গর্ব ও মূল্যবোধ জাগিয়ে তোলার লক্ষ্যে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্যবইতে ভগবদ্গীতা অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছিল গুজরাত সরকার। সেই উদ্যোগের সমর্থনে সর্বসম্মতিক্রমে একটি প্রস্তাব পাশ হয়ে গেল রাজ্যের বিধানসভায়।
শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী প্রফুল্ল পানশেরিয়া বিধানসভার অধিবেশনে এই প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন, যা দু’টি দলের সমর্থন পেয়েছে। আম আদমি পার্টি গুজরাত সরকারের আনা প্রস্তাবে শুরু থেকেই সমর্থন জানিয়েছিল। কংগ্রেস প্রথমে আপত্তি করলেও শেষ পর্যন্ত প্রস্তাবের পক্ষেই ভোট দেয়।
গত ডিসেম্বর মাসেই রাজ্যের শিক্ষা দফতর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, জুন মাসে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হলে ভগবদ্গীতার নীতি ও মূল্যবোধগুলি ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী প্রফুল্ল ২০২০ সালের জাতীয় শিক্ষা নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ছাত্রছাত্রীদের ভারতীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচিত এবং একাত্ম করার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছিলেন। তাঁর দাবি, ভারতের বৈচিত্র্যপূর্ণ জ্ঞান এবং ঐতিহ্যের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংযুক্ত করা উচিত।
এই প্রস্তাবের অধীনে ভগবদ্গীতাকে বিভিন্ন শ্রেণির জন্য ভিন্ন ভাবে পাঠ্যক্রমের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হবে, যা শিক্ষার্থীদের গীতার দার্শনিকতা উপলব্ধি করতে সাহায্য করবে। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জন্য গল্প এবং আবৃত্তি আকারে গীতার পাঠ দেওয়া হবে। আবার নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের প্রথম ভাষার পাঠ্যপুস্তকের মাধ্যমে ভগবদ্গীতার শিক্ষা দেওয়া হবে।
ভগবদ্গীতার কালজয়ী প্রাসঙ্গিকতা এবং বিশ্বজনীন তাৎপর্যের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে ভারতীয় সাধক এবং পাশ্চাত্য চিন্তাবিদ-উভয়ের উপরেই এই ধর্মগ্রন্থের প্রভাবের কথা বিধানসভায় তুলে ধরেন প্রফুল্ল।
সরকারের এই প্রস্তাবে প্রাথমিক ভাবে আপত্তি জানান কংগ্রেস বিধায়ক কিরিট প্যাটেল। তাঁর দাবি ছিল, এতে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাগত সমস্যা থেকে নজর সরে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কংগ্রেস এমন সময়ে এই প্রস্তাব আনার উদ্দেশ্যের সমালোচনা করলেও নীতিগত ভাবে পাঠ্যক্রমে গীতা শিক্ষার অন্তর্ভুক্তকরণকে সমর্থন জানিয়েছে। তবে আপ বিধায়ক উমেশ মাকওয়ানা এই প্রস্তাবে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন। সংস্কৃত ভাষার শিক্ষক নিয়োগ সহ পাঠ্যক্রমে গীতা শিক্ষার অন্তর্ভুক্তিকরণের প্রস্তাব বাস্তবায়িত করার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
২০২২ সালের মার্চ মাসে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী জিতু ভাঘানি প্রথম ছাত্রদের ভগবদ্গীতা এবং এর শ্লোকগুলি বোঝার গুরুত্বের প্রসঙ্গ বিধানসভায় উত্থাপন করেছিলেন। তার পর সরকারের তরফে একটি সিদ্ধান্ত জারি করা হয়েছিল, যাতে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জন্য ভগবদ্গীতার মূল্যবোধ এবং নীতির পাঠ দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়।