প্রতীকী ছবি।
বেঙ্গালুরুতে মোটা বেতনের চাকরি করতেন তিনি। কিন্তু করোনার সময় আচমকাই চাকরি হারিয়ে বসেন নয়ডার বাসিন্দা জ্যাসি আগরওয়াল। ব্যাঙ্কে জমানো টাকায় কোনও রকমে দৈনিক খরচ চালাতেন। তবে সেই টাকা ফুরিয়ে যাওয়ার পরেই বিপদে পড়েন। অনেক চেষ্টা করেও দ্বিতীয় কোনও চোকরি জোগাড় করতে পারেননি জ্যাসি। অভিযোগ, সেই থেকেই বাড়ি বাড়ি ঘুরে সুযোগ বুঝে ল্যাপটপ চুরি করতে থাকেন তিনি। চুরি করা সেই সব ল্যাপটপ নিয়ে গিয়ে নিজের শহরে কালোবাজারে বিক্রি করে দিতেন তিনি। পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করেছে।
করোনা অতিমারি যেমন অনেক মানুষের প্রাণ কেড়েছে, তেমনই লক্ষাধিক ভারতীয় চাকরি খুইয়েছেন। প্রায় সকলকেই এই অতিমারি এক অনিশ্চিয়তার সামনে ঠেলে দিয়েছিল। এমন পরিস্থিতিরই শিকার হন জ্যাসি। পুলিশ সূত্রে খবর, বছর ২৬-এর এই তরুণী বেঙ্গালুরুর একটি তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানিতে কাজ করতেন। থাকতেন ‘পেয়িং গেস্ট’ (পিজি) হিসাবে। কিন্তু কোভিডের সময় সেই চাকরি হারিয়ে বসেন জ্যাসি।
কী ভাবে নিজের খরচ চালাবেন সেই চিন্তায় ঘুম উড়ে যায় তরুণীর। পুলিশ সূ্ত্রে জানা গিয়েছে, অন্যান্য বেশ কয়েকটি কোম্পানিতে চাকরির খোঁজ করেন। ইন্টারভিউ দেন। কিন্তু চাকরি না পেয়ে হতাশায় ভুগতে শুরু করেন জ্যাসি। হাতসাফাই করতে থাকেন তিনি। প্রথমে নিজের পিজিতে, তার পর বিভিন্ন এলাকার পিজি থেকে ল্যাপটপ এবং বিভিন্ন গ্যাজ়েট চুরি করতে থাকেন বলে অভিযোগ ওঠে জ্যাসির বিরুদ্ধে।
বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই তদন্তে নামে পুলিশ। সেই তদন্তের সূত্র ধরেই উঠে আসে জ্যাসির নাম। গত ২৬ মার্চ তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃতের আস্তানায় তল্লাশি চালিয়ে ২৪টি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়েছে। যার বাজারমূল্য ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা। তদন্তকারী এক পুলিশ অফিসারের কথায়, ‘‘জ্যাসি অনেক এলাকাতে ঘুরে ঘুরে চুরি করতেন। যে সব পিজি থেকে চুরির অভিযোগ এসেছে, সেই সব এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখেই অভিযুক্তের সন্ধান পাওয়া যায়। তার পর তাঁর গতিবিধির উপর নজরদারি চালিয়ে জ্যাসিকে গ্রেফতার করা হয়। জেরার মুখে নিজের অপরাধের কথা স্বীকার করে নেন তিনি। সেই সঙ্গে এ-ও জানান কেন তিনি চুরি করতেন।’’
উল্লেখ্য, সম্প্রতি আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এবং ইনস্টিটিউট ফর হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট (আইএইচডি) যৌথ ভাবে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। সেই রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, দেশে বেকারদের মধ্যে শিক্ষিত যুবকদের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০০ সালে এই অনুপাত ছিল ৫৪.২ শতাংশ। ২০২২ সালে এই অনুপাত বেড়ে হয়েছিল ৬৫.৭ শতাংশ। বর্তমানে দেশের বেকারদের মধ্যে ৭৬.৭ জন শিক্ষিত যুবক এবং ৬২.২ শতাংশ শিক্ষিত যুবতী। রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০০০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে দেশে বেকারত্ব কমলেও কোভিড অতিমারির সময় এই হার আবারও বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। এই সময়ে কাজ হারান বহু সংখ্যক শিক্ষিত চাকরিরত মানুষ।