(বাঁ দিকে) প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে (ডান দিকে)।
বিচার বিভাগের পবিত্রতা নিয়ে আশঙ্কাপ্রকাশ করে দেশের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়কে চিঠি দিয়েছিলেন গোটা দেশের ৬০০ জন আইনজীবী। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়ে গেল রাজনৈতিক তরজা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আইনজীবীদের চিঠি লেখার প্রসঙ্গে কংগ্রেসকে নিশানা করেছিলেন। তাঁর মন্তব্যের পাল্টা জবাব দিলেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে তিনটি প্রশ্ন তুলে ধরেন তিনি।
প্রধান বিচারপতিকে লেখা চিঠিতে ভারতের বিচার ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বেগপ্রকাশ করেছিলেন আইনজীবীরা। সেই চিঠি প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে কংগ্রেসকে টেনে এনেছিলেন মোদী। তিনি বলেন, ‘ভয় দেখানো, হেনস্থা করা— এই সব কংগ্রেসের পুরনো সংস্কৃতি।’’ এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলের পোস্টে প্রধানমন্ত্রী লেখেন, ‘‘পাঁচ দশক আগে তারা (কংগ্রেস) নিজেরাই একটি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বিচার বিভাগের দাবি জানিয়েছিল। সেই তারাই এখন নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে নির্লজ্জ ভাবে অন্যদের থেকে প্রতিশ্রুতি দাবি করছে।’’ মোদী আরও লেখেন, ‘‘দেশের জন্য তারা (কংগ্রেস) কোনও প্রতিশ্রুতি রাখতে পারেনি। ১৪০ কোটির দেশ তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করেছে।’’
প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই প্রতিক্রিয়া দেয় কংগ্রেস। মোদীর উদ্দেশে তিনটি প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি। এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে তিনি লেখেন, ‘‘আপনি যে হেতু ভারতের প্রতিষ্ঠানগুলিকে আপনার ব্যক্তিগত সম্পত্তি বলে মনে করেন, তাই আমার আপনার কাছে কিছু প্রশ্ন আছে।’’
২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের চার বিচারপতির একটি সাংবাদিক সম্মেলনকে নিয়েই প্রথম প্রশ্নটি করেন খড়্গে। সেই সময় তৎকালীন প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে সাংবাদিক সম্মেলন করেছিলেন বিচারপতিরা। সেই প্রসঙ্গ টেনে খড়্গে প্রশ্ন করেন, ‘‘কেন আপনার সরকার ভারতের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতিকে রাজ্যসভায় মনোনীত করেছিলেন?’’ উল্লেখ্য, ২০২০ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সুপারিশে ভারতের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈকে রাজ্যসভায় পাঠিয়েছিল মোদী সরকার।
কলকাতা হাই কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির টিকিট দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন করেন কংগ্রেস সভাপতি। সেই সঙ্গে বিচারপতি নিয়োগ সংক্রান্ত কমিশন নিয়েও প্রশ্ন তোলেন খড়্গে। তাঁর কথায়, ‘‘কেন সুপ্রিম কোর্টের বাতিল করা কমিশনকে কেন্দ্র সরকার আবার আনল?’’
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার আইনজীবী হরিশ সালভে, সুপ্রিম কোর্টের বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মনন কুমার মিশ্র-সহ ৬০০ জন আইনজীবী প্রধান বিচারপতিকে চিঠি লেখেন। সেই চিঠিতে অভিযোগ করা হয়েছে যে, স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী বিচার বিভাগকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে, আদালতের সিদ্ধান্তে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে দেশের বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করছে। চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, যে সমস্ত মামলায় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বেরা দুর্নীতিতে অভিযুক্ত, সেই সব মামলাতেই এই ধরনের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এই ধরনের কাজের ফলে আদালতের গরিমা এবং আইনের শাসনের ধারণা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলেও দাবি করা হয়েছে ওই চিঠিতে।