প্রতীকী ছবি।
জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) নিয়ে নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মার ঘোষণায় উদ্বেগে অসমের বাংলাভাষীরা। এক বার বহু কাঠখড় পুড়িয়ে যাঁরা এনআরসি-তে নাম তুলেছেন, তাঁদের অনেকের আবার নাগরকিত্বের পরীক্ষা দিতে হবে। সীমান্ত জেলায় ২০ শতাংশ এবং অন্যত্র ১০ শতাংশ নাগরিকের নথিপত্র ফের যাচাই করা হবে। শপথ নিয়েই মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত এই সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তের পরই এনআরসি স্টেট কো-অর্ডিনেটর হিতেশ দেবগোস্বামী শীর্ষ আদালতে এনআরসি পুনঃপরীক্ষার আবেদন জানিয়েছেন৷ বাংলাভাষীদের সংগঠনগুলি এতে উদ্বিগ্ন। কারণ তাঁদের মতে, বাঙালিদের সন্দেহের নজরে রেখেই এনআরসি-র নিয়মনীতি তৈরি এবং সংশোধন-সংযোজন হয়। এবং সরকারের নতুন সিদ্ধান্তে তাঁদের নাগরিকত্বকেই প্রশ্নের মুখে ঠেলা হচ্ছে।
নাগরিক অধিকার রক্ষা সমন্বয় সমিতির দাবি, করোনা অতিমারির সময়ে রাজ্যের সাধারণ নাগরিকের জীবন ও জীবিকা রক্ষায় সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়া উচিত সরকারের। এনআরসি-ভুক্ত কোনও নাগরিকের নথিপত্র যেন পুনরায় যাচাই করা না-হয়৷
আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য তপোধীর ভট্টাচার্য বলেন, দীর্ঘদিন এ রাজ্যে থাকা সত্ত্বেও ভাষা ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা বিভিন্ন ধরনের অত্যাচারের শিকার। 'ডি' ভোটার, ডিটেনশন ক্যাম্প এবং এনআরসি তালিকা তৈরির নামে সীমাহীন যন্ত্রণায় রয়েছেন তাঁরা৷ তাঁদের নিরাপত্তা ও সাংবিধানিক অধিকার রক্ষা করার দায়িত্ব পালনে অতীতের সরকারগুলি চূড়ান্ত ব্যর্থ হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তের প্রতি তাঁর অনুরোধ, প্রতিটি ভাষাগোষ্ঠীর মাতৃভাষার মর্যাদা ও সাংবিধানিক অধিকার যেন অক্ষুণ্ণ রাখা হয়।
বরাক ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্টও নতুন করে এনআরসির নথি পরীক্ষা না-করার আর্জি জানিয়েছে। বর্তমান তালিকাকে চূড়ান্ত হিসেবে গ্রহণ করে মুখ্যমন্ত্রীকে ‘রাজধর্ম পালন’ করতে বলেছে তারা৷ ফ্রন্টের মুখ্য আহ্বায়ক প্রদীপ দত্তরায় বলেন, “বিগত সরকারের মেয়াদের অধিকাংশ সময় নষ্ট হয়েছে এই এনআরসি নামক মরীচিকার পেছনে ছুটে। সরকারি কোষাগার থেকে ১৬০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। জনগণের অপূরণীয় আর্থিক ক্ষতি হয়েছে, পোহাতে হয়েছে চরম মানসিক দুর্ভোগ। অনেকে আত্মহত্যাও করেছেন। এখন আবার রি-ভেরিফিকেশন হলে প্রান্তিক মানুষদের দুর্ভোগের মধ্যে ঠেলে দেওয়া হবে৷” প্রদীপবাবুর কথায়, “বিশাল সংখ্যক বহিরাগতের খোঁজে এনআরসি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। বাস্তবে যে তাদের কোনও অস্তিত্ব নেই, চূড়ান্ত তালিকায় সেটি প্রমাণিত হয়েছে৷” তাই নতুন মুখ্যমন্ত্রীকে বিদ্বেষের রাজনীতি ছেড়ে বৃহত্তর স্বার্থে রাজ্যের উন্নয়নে মন দেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।