বরাক উপত্যকার সরকারি ভাষা বাংলা। বাংলাই এখানকার সমস্ত সরকারি স্কুলের প্রধান ভাষা। বেসরকারি স্কুলগুলিতেও বাংলা ভাষা গুরুত্বের সঙ্গে পড়ানো হয়। কিন্তু আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএড পাঠ্যক্রম থেকে এ বার বাংলাকেই বাদই দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পরে চাপের মুখে তা ফের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল সায়েন্স বিভাগের দাবি, এই অঞ্চলের স্কুলগুলিতে অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী যে ভাষায় পড়াশোনা করে, তাকে বাদ দিয়ে বিএড কোর্সের কথা ভাবা হয়নি। অন্যান্য ভাষার সঙ্গে বাংলাও যথারীতি পড়ানো হবে।
বিতর্কের সূত্রপাত এপ্রিলের প্রথম দিকে। বিএড কলেজ অধ্যক্ষদের কাছে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৬ সালের কোর্স-কাঠামো ও পাঠ্যক্রম পাঠানো হয়। তাতে দেখা যায়— তৃতীয় সেমিস্টারে হিন্দি, ইংরেজি, অসমিয়া, মণিপুরি, সংস্কৃত ও উর্দু-র মধ্যে থেকে টিচিং সাবজেক্ট হিসেবে একটিকে বেছে নিতে হবে। নেই বাংলা। শুরু হয় হইচই। বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন প্রতিবাদ জানিয়ে চিঠি পাঠায়। ক্ষোভ ব্যক্ত করে উপাচার্যকে চিঠি লেখেন বিশ্ববিদ্যালয়-কোর্টের সদস্য দিলীপকুমার দে।
বিভাগীয় বোর্ড অব আন্ডার-গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজ (বাগস)-র সভাতেও এ নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তোলেন। সেখান থেকেই অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ভোলবদল শুরু। বোর্ডের সদস্য, শিলচর টিচার্স ট্রেনিং কলেজের অধ্যক্ষ ওমর হোসেন মেহেদি দাবি করেন, কর্তৃপক্ষ তখন বাংলায় সফটওয়্যার সমস্যা বলে তাঁদের জানিয়েছিলেন। বাংলাকে বাদ দেওয়া তাঁদের উদ্দেশ্য নয় বলেও জানানো হয় সভায়। সেই সভাতেই চূড়ান্ত হয়, একশো নম্বরের টিচিং সাবজেক্ট হিসেবে অন্যান্য বিষয়ের মতো বাংলাকেও বাছাই করা যেতে পারে।
বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের কাছাড় জেলা কমিটির সভাপতি তৈমুর রাজা চৌধুরী বলেন, ‘‘বাংলাকে বিএড কোর্সের টিচিং সাবজেক্ট থেকে বাদ দেওয়ার কথা ভাবা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। বরাক উপত্যকার ছেলেমেয়েদের উচ্চশিক্ষার সুবিধের জন্যই এখানে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে আন্দোলন হয়েছিল। আমরা বিষয়টি উপাচার্যের নজরে নিই। খুশির কথা যে, এডুকেশাল সায়েন্স বিভাগের প্রধান নিত্যানন্দ পাণ্ডে ভুল স্বীকার করে বাংলাকে সিলেবাসে অন্তর্ভুক্তির কথা আমাদের জানিয়েছেন।’’
অধ্যাপক পাণ্ডে অবশ্য ভুল স্বীকারের কথা অস্বীকার করেন। এমনকী, চাপে পড়ে বাংলাকে অন্তর্ভুক্ত করার কথা মানতে চাননি। তাঁর কথায়, ‘‘বাংলাকে বাদ দিয়ে বিএড কোর্স তৈরির কথা ভাবা যায় কী ভাবে! আসলে শুরুতে বাংলার সিলেবাস ইংরেজিতে লেখা ছিল, আমরা ভাবলাম, বাংলা হরফে তা তৈরি করা উচিত। বাগস-এর সভায় সেই সিদ্ধান্তই হয়েছে।’’
কিন্তু বাগস-এর সভার আগে? সে পর্ব এড়িয়ে যান তিনি। আর ডিন নিকুঞ্জবিহারী বিশ্বাস টেলিফোনে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন।
উপত্যকার টিচার্স ট্রেনিং কলেজের শিক্ষক-ছাত্ররা খুশি, বিশ্ববিদ্যালয়ের কারও ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় বাংলাটা বাদই পড়ে যাচ্ছিল, এ বার অন্তত বাঁচানো গেল!