রাজ্য বিজেপি-র মনে করছে, সোমবার মোদী হুগলি শিল্পাঞ্চলের উন্নয়ন নিয়ে আলাদা বার্তা দিতে পারেন।
সাহাগঞ্জের ডানলপ। ভারতের প্রথম টায়ার তৈরির কারখানা। এক সময়ে বিমানের টায়ারও তৈরি হত। এখন সব বন্ধ। এই কারখানা যেমন অনেক উত্থান-পতনের সাক্ষী থেকেছে তেমনই দেখেছে অনেক রাজনীতি। এ বার বিধানসভা নির্বাচনের প্রচার পর্বের ‘ওয়ার্ম আপ’ পর্বে আলোচনায় সেই ডানলপ। কারণ, সোমবার এই কারখানা সংলগ্ন মাঠেই জনসভা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। শুধু তাই নয়, মাঝে একদিন বাদ দিয়ে আগামী বুধবার ওই মাঠেই জনসভা করতে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে ইতিমধ্যেই হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে একটি জনসভা করেছেন মোদী। এ বার হুগলি শিল্পাঞ্চল। আর সেটাও আবার ডানলপের মাঠে। যেখান থেকে গঙ্গা পার হলেই নৈহাটি ও ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল।
ডানলপের সাহাগঞ্জ ইউনিট শুধু হুগলি জেলা বা পশ্চিমবঙ্গ নয়, গোটা দেশের গর্ব ছিল। কিন্তু ১৯৩৬ সালে তৈরি হওয়া সেই কারখানা এখন জঙ্গলে ভরা। যদিও তার মধ্যেই চোখে পড়ে সেই ক্যাপশন-- ‘দ্য ফার্স্ট টায়ার ফ্যাক্টরি অব ইন্ডিয়া’। আইনি জটিলতায় বন্ধ ডানলপের অধিগ্রহণ আটকে গিয়েছে। রাজ্য সরকারের তরফে মাসিক একটা অনুদান দেওয়া হয় শ্রমিকদের।
বুধবার মুখ্যমন্ত্রীর সভা। মন্ত্রী তপন দাশগুপ্তর নেতৃত্বে চলছে প্রস্তুতি।
রাজ্য বিজেপি-র মনে করছে, সোমবার মোদী হুগলি শিল্পাঞ্চলের উন্নয়ন নিয়ে আলাদা বার্তা দিতে পারেন। দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, “বাম আমল থেকেই এই রাজ্যে শ্রমিকদের নিয়ে ছেলেখেলা হয়েছে। বামেদের সেই ধারা যোগ্য শিষ্যের মতো অনুসরণ করে চলেছে তৃণমূল। হুগলির সিঙ্গুরে টাটার কারখানা হতে দেয়নি। দীর্ঘদিন বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে এক সময়ের ঐতিহ্য হিন্দমোটর। ডানলপ তো আছেই। এ ছাড়াও রাজ্যের চটকলগুলির অবস্থা খুবই খারাপ। বামেরা চলছে না, চলবে না শিখিয়েছিল আর তৃণমূল গেটে তালা লাগিয়ে দিয়েছে।”
মোদী কি বন্ধ কারখানা খোলার প্রতিশ্রুতি দিতে পারেন? দিলীপ বলেন, “সেটা সম্ভব কেন্দ্র ও রাজ্যে একই সরকার হলে। তাই তো আমরা বাংলার স্বার্থে ডবল-ইঞ্জিন সরকার চাইছি।” এই ব্যাপারে আরও স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন এ রাজ্যে বিজেপি-র কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়। তিনি ডানলপে দাঁড়িয়েই শনিবার বলেন, ‘‘আমি শুনেছি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০১১ সালের নির্বাচনে কথা দিয়েছিলেন, বন্ধ কারখানা খুলবে। কী হয়েছে সকলে দেখেছেন। তবে সকলকে আশ্বস্ত করব রাজ্যে বিজেপি সরকার এলে বন্ধ কারখানাগুলি খোলার জন্য কমিটি গঠন করবে। সমীক্ষা করে খতিয়ে দেখবে। বন্ধ কারখানার মধ্যে যেগুলো চালু করা সম্ভব, সেগুলো চালু করবে।’’
মোদীর সভার আগে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি দেখতে ডানলপে বিজেপি সাংসদ জ্যোতির্ময় সিংহ মাহাতো।
ইতিমধ্যেই বিজেপি প্রচারে বলছে, রাজ্যের মানুষ এর আগে কংগ্রেস, বামফ্রন্ট, তৃণমূলকে সুযোগ দিয়েছে। এ বার বিজেপি-কে সুযোগ দিক। সেই দাবিকে জোরালো করতে এখন ডানলপ প্রসঙ্গ উল্লখ করছে বিজেপি। জেলা বিজেপি নেতারা বলছেন, বাম আমলে ২০০১ থেকে টানা ৫ বছর বন্ধ ছিল ডানলপ কারখানা। এর পরে উৎপাদন শুরু হলেও তা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। ২০১১ সালে ফের বন্ধ হয় কারখানা। বছর তিনেক পরে খোলা হলে দেখা যায় উৎপাদনের পরিস্থিতি নেই। ততদিনে যন্ত্রপাতি চুরি হয়ে যায়।
বামেদের পাশাপাশি তৃণমূলকেও ডানলপ কারখানা নিয়ে আক্রমণ শানাতে চাইছে বিজেপি। তবে স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী তপন দাশগুপ্তর বক্তব্য, “ডানলপ কারখানার শ্রমিকদের জন্য কেউ কিছু করে থাকলে সেটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করেছেন। তাঁর নির্দেশে তৃণমূল করেছে। রাজ্য সরকার এই কারখানা অধিগ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু তা নিয়ে মামলা হলে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে শ্রমিকদের মাসে ১০ হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়া হয়।” বিজেপি-র সমাবেশ প্রসঙ্গে তপন বলেন, “সোমবার আর বুধবারের জনসভার চেহারাই বুঝিয়ে দেবে মানুষ কার সঙ্গে আছে। ডানলপের শ্রমিক থেকে সাহাগঞ্জ-সহ হুগলি জেলার মানুষ তৃণমূলের সঙ্গেই আছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যতদিন থাকবেন তিনি শ্রমিকদের স্বার্থ দেখবেন।”