কর্মিসভায় বক্তৃতা মুদাসসর হোসেনের। নিজস্ব চিত্র
ভাঙড়ের তৃণমূল নেতার হুমকি, তৃণমূলের লোক ছাড়া ভোট দিতে যেতে পারবে না। আধাসামরিক বাহিনী বুথে থাকবে, আর কর্মীরা মাঠে ঘুরবে। শনিবার এক কর্মিসভা শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এই মন্তব্য করেছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ের ভোগালি ২ নম্বর পঞ্চায়েতের প্রধান মুদাসসর হোসেন। তাঁর মন্তব্য প্রকাশ্যে আসার পর শুরু হয়েছে রাজনৈতিক বিতর্ক।
শনিবার কর্মিসভায় বলেন, ‘‘এই এলাকার নতুন ১৪ হাজার ভোটার হয়েছেন। সবার ভোট আমাদের দিতে হবে।’’ পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন ভাঙড়ের ভোগালি ২ নম্বর পঞ্চায়েতের প্রধান। তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, কেউ অন্য জায়গায় ভোট দিলে কী করবেন? উত্তরে আত্মবিশ্বাসের সুরে মুদাসসর বলেন, ‘‘আমার এলাকায় আমাদের তৃণমূলের লোক ছাড়া বুথে ভোট দিতে যেতে পারবে না। বুথে আধাসামরিক বাহিনী থাকবে। আর আমাদের ছেলেরা মাঠে ঘুরবে। তারা খেলবে। এর আগেও আধাসামরিক বাহিনী বুথে নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল। কিন্তু যারা আমাদের ভোট দেবে, তারা বুথে যাবে। যারা দেবে না তারা বাড়িতে শুয়ে থাকুক। কী করবে, সেখানে গিয়ে লাভ আছে?’’
বস্তুত, শনিবার মুদাসসর যখন এ কথা বলছেন, তখন ঘটনাচক্রে রাজ্যে পা রেখেছে বেশ কয়েক কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী। জঙ্গলমহল, তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডলের গড় বীরভূম-সহ কয়েকটি জেলায় রুট মার্চও করে বাহিনী। মুদাসসরের ‘আত্মবিশ্বাস’-এর রহস্যও জানতে চান সাংবাদিকরা। তাঁর অবশ্য দাবি, ‘‘আমরা এলাকায় যে ভাবে সাধারণ মানুষকে পরিষেবা দিচ্ছি, সেই সূত্রে আমরা নিশ্চিত এখানে বিরোধী কেউ থাকবে না।’’ একইসঙ্গে তিনি বলছেন, ‘‘আমাদের তৃণমূল দলটাই থাকবে এবং তৃণমূল দলটাই বুথে ভোট করাবে। কেন্দ্রীয় বাহিনী নিজেদের কাজ করবে, আমাদের ছেলেরা নিজেদের কাজ করবে।’’
বক্তব্যে একই ঝাঁঝ মিশিয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এবং শুভেন্দু অধিকারীকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে মুদাসসর বলছেন, ‘‘ক্ষমতা থাকলে শুভেন্দু শিরীষতলায় সভা করে দেখাক। শিরীষতলা খুব কড়া জায়গা। ওখানে আসতে পারবে না। আমরা ওখানে খুব কড়াকড়ি রেখেছি। যে বিজেপির মঞ্চ বাঁধবে সে থাকবে না। যে মাইক বাঁধবে সে-ও থাকবে না। সকলে বোল্ড আউট হয়ে যাবে। পাশেই খাল। যে মাইক বাঁধতে আসবে সে খালে চলে যাবে। দিলীপ ঘোষ দল বেঁধে শিরীষতলায় আসুক। দেখি। হয় থাকব, নয় যাব। পরিষ্কার কথা। হয় বিজেপি সভা করবে, নয় আমরা বন্ধ করে চলে যাব। দু’টোর একটা করে দেব।’’
শনিবার জোড়াফুল শিবিরের নেতার হুঙ্কার শুনে বিজেপির দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা সভাপতি সুনীপ দাস বলেন, ‘‘এই ধরনের মন্তব্য গণতন্ত্র বিরোধী। ‘খেলা হবে’র নাম করে মানুষ খুন করতে চাইছে তৃণমূল। ক্ষমতার অপব্যবহার করে মানুষকে ভয় দেখাচ্ছে এরা।’’ মুদাসসরের মন্তব্য নিয়ে রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া, ‘‘বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’
বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ মজুমদারের অভিযোগ, ‘‘তৃণমূলের শীর্ষস্তর থেকে এমন নির্দেশ নিশ্চয়ই দেওয়া হয়েছে। যে কারণেই নিচের সারির নেতারা এমন বলছেন। ভেতরে ভেতরে তৃণমূল নির্দেশ দিচ্ছে, যাতে মানুষ ভোট দিতে না পারে। ভোট লুঠ ছক এভাবেই তৈরি করছে তৃণমূল।’’
অন্যদিকে, তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বিষয়টি লঘু করে বলেছেন, ‘‘দলীয় কর্মীদের চাঙ্গা করতে এটা ভোকাল টনিক। তবে একটু সংযত হল ভাল হত। মানুষ এমনিই ভোট দেবেন।’’