দলে দাপট দক্ষিণীদেরই। তা সত্ত্বেও সদ্যসমাপ্ত পার্টি কংগ্রেসে সাধ্যমতো গলা তুলেছেন বাংলার প্রতিনিধিরা।
পুরভোটের জন্য রাজ্যের ১৭৫ জন নির্ধারিত প্রতিনিধির মধ্যে জনা পঞ্চাশেরও বেশি বিশাখাপত্তনমে যেতে পারেননি। কয়েক জনকে মাঝপথে ফিরতেও হয়েছে। তবু বাংলার ভূমিকা উল্লেখযোগ্য ছিল বলেই মনে করছেন রাজ্য সিপিএম নেতৃত্ব। প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শ্রীদীপ ভট্টাচার্য। তিনি এ বার নতুন কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন।
পশ্চিমবঙ্গ থেকে বক্তা ছিলেন ১০ জন— অসীম দাশগুপ্ত, রমা বিশ্বাস, রামচন্দ্র ডোম, রবীন রাই, জিয়াউল আলম, অমল হালদার, বংশগোপাল চৌধুরী, সায়নদীপ মিত্র, পুলিনবিহারী বাস্কে ও প্রণব চট্টোপাধ্যায়। দলের রাজনৈতিক ও কৌশলগত লাইন পর্যালোচনা রিপোর্টের উপরে বলতে গিয়ে বর্ধমানের প্রাক্তন জেলা সম্পাদক অমলবাবু প্রশ্ন তুলেছিলেন, প্রকাশ কারাটদের আমলে বহু সিদ্ধান্ত নিয়েও বাস্তবে তার রূপায়ণ ঠিকমতো হল না কেন?
প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীমবাবু তেমনই অর্থনৈতিক প্রশ্ন ধরেই আলোচনায় ঢুকেছিলেন। রাজনৈতিক দলিলে কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক পুনর্বিন্যাসের কথা ছিল। অসীমবাবু যুক্তি দেন, বিষয়টি নিয়ে আরও ভাবা উচিত। কারণ, কেন্দ্রে সম্পূর্ণ অন্য ধরনের সরকার এসেছে। চতুর্দশ অর্থ কমিশনের সুপারিশে রাজ্যগুলিকে প্রায় ৪২% করের ভাগ দেওয়া হচ্ছে। রাজ্যগুলির বাড়তি পাওয়ার কথা ১ লক্ষ ৪০ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু পরিকল্পনা খাতে যে ভাবে বরাদ্দ কমানো হয়েছে, তাতে রাজ্যগুলির প্রাপ্ত টাকা প্রায় একই হারে কমবে বলে অসীমবাবুর মত। পাশাপাশি, বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থাগুলির রমরমা ও তাতে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দলের ‘মদত’ নিয়েও সরব হন তিনি।
বীরভূমের জেলা সম্পাদক রামচন্দ্রবাবু সওয়াল করেন দলিতদের স্বার্থে আরও বেশি আন্দোলনের পক্ষে। তিনি নিজে উঠে এসেছেন সমাজের নিম্ন বর্গ থেকে, পার্টি কংগ্রেস থেকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্তর্ভুক্তও হয়েছেন। রাজ্য কমিটির সদস্য, জলপাইগুড়ির নেতা রবীন রাই চা-বাগানের লড়াইয়ের কাহিনি পেশ করে বলতে চেয়েছেন, শ্রেণি সংগ্রামের মধ্যেও পরিচিতি সত্তার রাজনীতিকে কিছুটা জায়গা দেওয়া সম্ভব। ডিওয়াইএফের রাজ্য সভাপতি সায়নদীপ মিত্র যুব-ছাত্রদের আরও বেশি করে সংগঠনে গুরুত্ব দেওয়ার দাবি তুলেছেন, সন্ত্রাসের মধ্যেও তাঁদের লড়াইয়ের কথা বলেছেন। রাজ্য কমিটির এক সদস্যের কথায়, ‘‘জাতীয় স্তরে নেতৃত্বে পিছিয়ে থাকলেও ভাবনায় বাংলা যে পিছিয়ে নেই, পার্টি কংগ্রেসে আমাদের প্রতিনিধিরাই তা বুঝিয়ে দিয়েছেন!’’