মহুয়া মাজি
পা মচ্কে গেলেও ভোট-প্রচারে সজোরে ছুটছেন রাঁচির বাঙালি বধূ! নির্বাচনে ‘বিনা যুদ্ধে একটুও জমি’ তিনি ছাড়তে নারাজ।
বিধানসভা ভোটে ঝাড়খণ্ডের রাজধানীতে সাহিত্যিক, সমাজকর্মী তথা রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন মহুয়া মাজিকে প্রার্থী মনোনীত করে তা-ই অনেকটা নিশ্চিন্ত ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম)।
পরিচিত মুখ, তার উপর বাঙালি। জেএমএম মহাসচিব সুপ্রিয় ভট্টাচার্য যেমন বলছিলেন, “সত্তরের দশকের শেষে রাঁচির বিধায়ক ছিলেন বিজেপির ননীগোপাল মিত্র। বাঙালি প্রার্থী বলতে তার পর আমাদের মহুয়াদেবীই।” সুপ্রিয়বাবুর দাবি, ননীবাবুর পর এত দিনে মহুয়াদেবী শহরের ভোটারদের মধ্যে প্রভাব ছড়িয়েছেন। বাঙালি তো বটেই, তাঁর পাশে রয়েছেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাসিন্দারাও।
প্রচারে মহুয়াদেবীর সঙ্গে ঘুরতেই তা স্পষ্ট হল। রাঁচির লালপুর চকের কাছে প্রচার করছিলেন। হাঁটছিলেন কিছুটা খুঁড়িয়ে। জানালেন, কোনও ভাবে পা মচ্কে গিয়েছে। মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সনের পাশে তখন রাঁচির একটি বাঙালি ক্লাবের সচিব শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। শ্যামাবাবু বললেন, “মহুয়া ভোটে দাঁড়ানোয় আমরা খুব খুশি। বিধানসভায় অনেক দিন বাঙালিদের সমস্যার কথা কেউ তোলেননি। জিতলে মহুয়া নিশ্চয়ই বলবে।” আইনজীবী সিদ্ধার্থজ্যোতি রায়ের বক্তব্যে একই সুর। তিনি বলেন, “ঝাড়খণ্ডে বাঙালি সংস্কৃতি বাঁচিয়ে রাখতে বিধানসভায় আমাদের এক জন প্রতিনিধি থাকা খুব প্রয়োজন।”
লালপুরে জেএমএম অফিসের সামনে একটু বিশ্রাম নিতে বসেছিলেন মহুয়াদেবী। রাঁচির ভোটযুদ্ধে রয়েছেন বিজেপির ‘হেভিওয়েট’ নেতা চন্দ্রেশ্বর প্রসাদ সিংহও। জেএমএম প্রার্থীর পাল্টা জবাব, “ভুলে যাবেন না, সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের মতো প্রার্থীকেও হারিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার আগে মমতাকেও কেউ গুরুত্ব দিতে চায়নি। সে বার তিনি ইতিহাস তৈরি করেন।” মহুয়াদেবীর কথায়, “মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন হিসেবে দল, পতাকা না দেখে মানুষের জন্য কাজ করেছি। জনপ্রতিনিধি হলেও সেটাই করব। অনেক প্রত্যন্ত এলাকায় কাজে গিয়েছি, যেখানে কোনও নেতা ভোটও চাইতে যান না।”
রাঁচিতে পর পর চার বার নির্বাচিত বিধায়ক তথা বিধানসভার প্রাক্তন স্পিকার বিজেপির চন্দ্রেশ্বর প্রসাদের সঙ্গে মহুয়াদেবীর লড়াইকে অবশ্য ‘সিংহের বিরুদ্ধে মুষিকের’ লড়াই হিসেবে দেখছেন বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের একাংশ।
তা মানতে নারাজ জেএমএম মহাসচিব সুপ্রিয়বাবু। তিনি বলছেন, “বাঙালি ভোট তো মহুয়াদেবীর দিকে যাবেই। কংগ্রেস এখন গুরুত্বহীন। তাই সংখ্যালঘু ভোটাররাও জেএমএমকে ভোট দেবেন। শিখরাও রয়েছেন আমাদের দিকেই।”
কংগ্রেস প্রার্থী সুরিন্দর সিংহকে নিয়ে অবশ্য সত্যিই এখনও তেমন উৎসাহ চোখে পড়েনি। ভোটের দিন বাড়িতে বসে থাকার ‘বদনাম’ রয়েছে রাঁচির বেশিরভাগ বাঙালি পরিবারের। মহুয়াদেবীর পাশে দাঁড়াতে এ বার সেই ছবি বদলায় কি না, সেটাই দেখার। প্রশ্ন একটাই, ইতিহাস কি গড়তে পারবেন মহুয়াদেবীও?