ভিভান এবং বনিশা।
কথার ফাঁকে বার বারই চোখের জল লুকনোর চেষ্টা করছিল সিবিএসই-র দশম পরীক্ষার টপার বনিশা পাঠক। না, এ কান্না তাঁর টপার হওয়ার জন্য নয়, কোভিডে হারানো মা-বাবার জন্য।
গত মে-তেই পরীক্ষার মাঝে মা-বাবা দু’জনকেই একসঙ্গে হারাতে হয়েছে মধ্যপ্রদেশের ভোপালের বাসিন্দা বনিশাকে। মা-বাবাকে শেষ বার সে একসঙ্গে দেখেছিল হাসপাতালের বিছানায়। দু’জনেই মেয়ে বনিশাকে বলেছিলেন খুব শীঘ্রই বাড়িতে ফিরবেন। কিন্তু না, বাড়িতে আর ফেরা হয়নি পাঠক দম্পতির। কোভিডে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালেই মৃত্যু হয় স্বামী-স্ত্র্রীর।
বনিশার বাবা জিতেন্দ্রকুমার পাঠক এক জন ফিনান্সিয়াল অ্যাডভাইজার ছিলেন। মা সীমা ছিলেন সরকারি স্কুলের শিক্ষিকা। পাঠক দম্পতির দুই ছেলেমেয়ে। বনিশা এবং ভিভান। বনিশা বয়সে বড়।
মে মাসে কোভিডে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন পাঠক দম্পতি। তাঁদের কিছু হয়ে গেলে ছোট ছোট ছেলেমেয়ে দু’টির কী হবে, এই আশঙ্কাই করতেন জিতেন্দ্র এবং সীমা। সেই শঙ্কা লুকিয়ে মেয়েকে ভরসা জুগিয়েছিলেন তাঁরা। এক সাক্ষাৎকারে বনিশা বলে, “মা-বাবার কয়েকটি শব্দ এখনও কানে বাজে। মা বলেছিল, নিজের উপর ভরসা রাখো। আমরা তাড়াতাড়ি ফিরে আসব। বাবা বলেছিল, মনের জোর রাখো।” সেটাই ছিল তাঁদের শেষ কথা। তার পরই দু’জনের কয়েক দিনের অন্তরে মৃত্যু হয়।
মা-বাবা মারা যাওযার পর বনিশার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছিল। কিন্তু ভাইয়ের কথা ভেবেই নিজেকে সামলেছিল বনিশা। আর সেই সঙ্গে মা-বাবার ভরসার মন্ত্রে মনকে শক্ত করেছিল সে। বনিশা বলে, “মা-বাবা স্মৃতি আমাকে মনের জোর দেয়। এখন ভাই-ই আমার সবচেয়ে বড় মনের জোর। এখন থেকে তার সর্বস্ব আমাকে ঘিরেই। আমাকে কিছু করতেই হবে।”
বনিশাকে আইআইটি-তে পড়াতে চেয়েছিলেন জিতেন্দ্র। তাঁর স্বপ্ন ছিল মেয়ে এক জন আইএএস অফিসার হবে। কিন্তু সেই স্বপ্ন তাঁর অধরাই থেকে গেল। তবে বনিশা জানায়, বাবার স্বপ্নই এখন তাঁর স্বপ্ন। সেই স্বপ্নকে সে পূরণ করবেই। কথা বলতে বলতে বনিতার গলা বুজে আসে।
বনিশা এ বার সিবিএসই-র টপার। ইংরাজি, সংস্কৃত, বিজ্ঞান এবং সমাজবিজ্ঞানে ১০০ পেয়েছে। অঙ্কে ৯৭।