—প্রতীকী চিত্র।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ফরিদা আখতার জানিয়ে দিয়েছেন, অন্য বারের মতো এ বার পুজোর সময়ে অর্থাৎ অক্টোবরে ভারতে ইলিশ রফতানির অনুমতি দেওয়া হবে না। বাংলাদেশের মানুষকে ‘সস্তায় ইলিশ’ জোগানোর জন্য মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের এই সিদ্ধান্ত। কিন্তু ভারতের আমদানিকারীরা বলছেন, এর ফলে সে দেশেরই ক্ষতি। প্রথমত, বাংলাদেশের বাজারে ইলিশের দাম এর পরেও আকাশছোঁয়া থাকায় সরকারের এই নীতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দ্বিতীয়ত, অক্টোবরে মরসুমের শেষ ভাগে ভারতে অল্প কিছু মাছ রফতানি করে যেটুকু বিদেশি মুদ্রা বাংলাদেশ পেত, এ বার সেটাও পাবে না। ইতিমধ্যেই ইউনূস সরকারের উপদেষ্টার ‘সস্তার ইলিশ’ খাওয়ানোর ঘোষণা নিয়ে বিস্তর হাসি-মস্করা চলছে সমাজমাধ্যমে।
বাংলাদেশে ১/১১-র অভ্যুত্থানের পরে ক্ষমতায় আসা মইনুদ্দিন-ইয়াজুদ্দিন সরকারের আমলেই মানুষকে সস্তায় মাছ খাওয়ানোর যুক্তি দিয়ে ইলিশ ও অন্য মূল্যবান মাছ রফতানি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এর পরে হাসিনা সরকার এসে সেই নিষেধাজ্ঞা তোলেনি। তবে বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে পুজোর মরসুমে নির্দিষ্ট পরিমাণ ইলিশ রফতানিতে ছাড় দেওয়া হতো। কিন্তু জুন-জুলাই থেকে ইলিশের মরসুম শুরু হলেও অক্টোবরে রফতানি-ছাড় পেয়ে সামান্য মাছই সীমান্ত পেরোত। তার উপরে এই সময়ে ইলিশ ধরার উপরে নিষেধাজ্ঞা চেপে যায়। গত বারও পুজোর মরসুমে পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরার জন্য ৩৯৫০ টন ইলিশ রফতানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। যদিও রফতানি হয়েছিল এর অর্ধেকেরও কম। কলকাতার আমদানিকারীরা বলছেন, “বিষয়টা এমন— গর্জাত খুবই, বর্ষাত অতি সামান্য। হাসিনার ভারতপ্রেমের বিজ্ঞাপনের ঢাক বাজলেও, আমাদের ব্যবসা বিশেষ হতো না।”
এ বার তাই ভারতের মাছ আমদানিকারীদের সংগঠন ফিস ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন ইলিশ রফতানির নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার আর্জি জানিয়ে নতুন সরকারের উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের দফতরে চিঠি দিয়েছিল। তার কোনও জবাব না-দিয়ে উপদেষ্টা ঘোষণা করেন, “এ বার ভারতে ইলিশ যাবে না।”
ত্রিপুরার মাছ আমদানিকারী বিমল রায় বলেন, “বাংলাদেশ থেকে এ বার দুর্গা পুজোয় ইলিশ আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়নি। ফলে বৈধ পথে ইলিশ আসবে না। গত কয়েক বছর ধরে পুজোর সময় ইলিশ আনা হয়। কিন্তু যে পরিমান মাছ রফতানির অনুমোদন দেওয়া হতো, আসত তার অনেক কম। কারণ, অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ইলিশের ডিম রক্ষার জন্য মাছ ধরা, বিক্রয় ও পরিবহণ সম্পূর্ণ বন্ধ থাকে। যে সামান্য মাছ আসে, তাতে ও দেশের বাজারে কোনও প্রভাব পড়ার কথাই নয়।” বিমলের কথায়, “বাংলাদেশ ইলিশ রফতানি বন্ধ করে দিলে তাদেরই ক্ষতি। কারণ আমরা ডলার দিয়ে মাছ কিনি। তারা সেটা পাবে না।” তিনি জানান, সাধারণ মাছ যেখানে প্রতি কেজি ২.৫ ডলার মূল্য থাকে, সেখানে প্রতি কেজি ইলিশ প্রায় ১০ ডলার দিয়ে আনতে হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আর এক আমদানিকারী বলেন, “এমনিতে ত্রিপুরা সহ অসমের কাছাড় অঞ্চলে সীমান্ত দিয়ে অবৈধ ভাবে বেশ কিছু ইলিশ আসে। অবৈধ বানিজ্য থেকে বাংলাদেশ সরকার কোনও কর বা বৈদেশিক মুদ্রা পায় না। রফতানি বন্ধ করে দিলে চোরাচালান বাড়বে। কারণ, পণ্য কেবল বাজার চেনে।” ইতিমধ্যেই চোরাপথে আসা বাংলাদেশের ইলিশে আগরতলার বাজার এখন ভর্তি। চড়া দামেও মানুষ তা কিনে খাচ্ছেন। তবে পশ্চিমবঙ্গের বাজারে বাংলাদেশের ইলিশ এ বার খুবই কম।