ফাইল চিত্র।
বিজেপি মুখপাত্রদের পয়গম্বর সংক্রান্ত মন্তব্য নিয়ে ঘরে বাইরে ঝড়ের মধ্যে মোদী সরকার। পশ্চিম এশিয়ায় ভারতের বেশ কিছু ‘মিত্র’ মুসলিম রাষ্ট্র বিষয়টি নিয়ে তীব্র সমালোচনা করলেও, খুঁচিয়ে ঘা করতে চাইছে না ঢাকা। বরং বিষয়টি যাতে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ককে ঘোলা করতে না পারে, সে বিষয়ে যত্নবান থাকতে চাইছে বাংলাদেশ। আর তাই সাধারণ ভাবে ওই ধরনের মন্তব্যের নিন্দা করে, মন্তব্যকারীদের বিরুদ্ধে ‘আইনি ব্যবস্থা’ নেওয়ার জন্য মোদী সরকারকে অভিনন্দন জানালো বাংলাদেশ।
ওই ঘটনা নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রথম মুখ খুললেন সে দেশের তথ্যমন্ত্রী হাসান মাহমুদ। ঢাকা সফরকারী ভারতীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় তাঁর মতামত, “যাই ঘটে থাকুক পয়গম্বর সম্পর্কে কুমন্তব্য নিন্দনীয়। কিন্তু পাশাপাশি, যারা পয়গম্বরের উদ্দেশ্যে ঘৃণার বার্তা ছড়িয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমি ভারত সরকারকে অভিনন্দন জানাতে চাই।” বরখাস্ত হওয়া বিজেপির দুই নেতা নূপুর শর্মা এবং নবীন জিন্দলের করা মন্তব্যের কোনও ভিডিয়ো তিনি দেখেননি বলে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, “এটা ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়, আমাদের নয়। এমনকি ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়ও এটি নয়। পয়গম্বরকে অসম্মান যেখানেই করা হোক না কেন, তার নিন্দা করেছি এবং এখনও করছি। কিন্তু আমি কেন এই নিয়ে এখানে আগুন জ্বালতে যাব?”
পয়গম্বরকে করা ওই মন্তব্যের জেরে ঢাকা এবং তার আশেপাশে শুক্রবার থেকে বিক্ষোভের আঁচ পাওয়া যাচ্ছে। হয়েছে মিছিলও। কিন্তু এই পরিস্থিতিকে আরও উস্কে দিয়ে, প্ররোচনামূলক কোনও পদক্ষেপ করতে চাইছে না ঢাকা। সূত্রে জানানো হচ্ছে, সেটা করলে দেশের উগ্র ইসলামিক শক্তিগুলির হাতে আরও বেশি করে অশান্তি ছড়ানোর পরিবেশ তৈরি হবে। সামগ্রিক ভাবে ভারত-বিরোধিতায় রাস্তায় নামবে তারা। কোভিডের ধাক্কার পর ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ, শক্তি, বাণিজ্য এবং বহু ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা চলছে জোর গতিতে। আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতুর উদ্বোধনকে আন্তর্জাতিক নজরের কেন্দ্রে নিয়ে আসতে এই মুহূর্তে প্রবল ভাবে সক্রিয় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই সময় কোনও ভাবে দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি হোক, তা একেবারেই অবাঞ্ছিত। পাশাপাশি, খুঁচিয়ে ঘা করা হলে, তাতে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তাও যে ঝুঁকিতে পড়তে পারে, তা বিবেচনায় রাখতে চাইছে আওয়ামি লিগ সরকার। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সূত্র জানাচ্ছে, এমনতিই জামাতের রাজনীতির প্রধান কথা হল ভারত বিরোধিতা, হিন্দু বিরোধিতা। আওয়ামি লিগের এক শীর্ষ নেতার কথায়, গত বছর পুজোর সময় কুমিল্লায় অশান্তির পর অতি দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী হাসিনা। দোষীদের কড়া শাস্তি দেওয়া হয়েছিল। তাঁর দাবি, সে সময় বিএনপি জামাত জোটের পক্ষ থেকে স্লোগান শোনা গিয়েছিল, ‘আমরা সবাই তালেবান, বাংলা হবে আফগান!’
আর কয়েক মাসের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের কথা। এর পর সে দেশে নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যাবে। এখন ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে কোনও খোঁচা লাগুক, এটা যে একেবারেই চাইছে না হাসিনা সরকার, তা তথ্যমন্ত্রীর কথাতেই স্পষ্ট। গত কয়েক বছরে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বার বার ওঠানামার মধ্যে গিয়ে গিয়েছে। রাজস্থানের জনসভায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অমিত শাহের করা বাংলাদেশের অনুপ্রবেশকারীদের সম্পর্কে ‘উইপোকা’ মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক গভীর হয়েছে। বিভিন্ন মাধ্যমে অসন্তোষ জানিয়েছে ঢাকা। কিন্তু সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী আজ বলছেন, “ঘরোয়া রাজনীতির কারণে অনেকে অনেক কিছু বলেন। তার সঙ্গে সেই দেশের বিদেশনীতির কোনও সম্পর্ক থাকে না। এ সব ক্ষেত্রেও নেই। ভারত তার ঘরোয়া রাজনৈতিক কারণে কী বলল না বলল, তা নিয়ে আমরা মাথা ঘামাতে চাই না।”
অন্য দিকে মোদী সরকারকে বাংলাদেশের জন্য ‘সহায়ক’বলেই এ দিন মন্তব্য করেছেন হাসান মাহমুদ। তিস্তা চুক্তির বাস্তবায়নে বিলম্বের জন্যও কেন্দ্রীয় সরকারকে আপাতত দায়ী করতে চাইছে না ঢাকা। তথ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, “ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৌত্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ক্রমশ শক্তিশালী হয়েছে। মোদী বরাবরই বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তিস্তা চুক্তির বিষয়টি নিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও সমস্যা নেই। এটি সে দেশের রাজ্য সরকারের সমস্যা। তবে আমরা আশা করছি বিষয়টির শীঘ্রই সমাধান হবে।”
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।