বাবরি মামলার রায়ের পরে লালকৃষ্ণ আডবাণী। বুধবার দিল্লিতে। পিটিআই
অতীতে তিনি দাবি করেছিলেন, তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে। আজ তথ্য-প্রমাণের অভাবে বাবরি মসজিদ ধ্বংস মামলায় বেকসুর খালাস পেয়েই অন্যতম অভিযুক্ত লালকৃষ্ণ আডবাণী বিবৃতি দিয়ে জানালেন, ওই রায় রামজন্মভূমি আন্দোলনের প্রশ্নে তাঁর ও বিজেপির বিশ্বাস এবং দায়বদ্ধতাকে প্রতিষ্ঠিত করল। সে সময়ে তাঁরা যে অবস্থান নিয়েছিলেন, তা যে ঠিক ছিল আজ নিজের বক্তব্যে আডবাণী তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন বলেই মনে করছেন বিরোধীরা। মসজিদ ধ্বংসে সরাসরি মদত দেওয়ার প্রমাণ না মেলায় অভিযোগ থেকে মুক্তি পেয়েছেন মুরলীমনোহর জোশী, উমা ভারতী-সহ সব অভিযুক্তেরা। রায়ে উচ্ছ্বসিত পদ্ম-শিবির। তবে রাত পর্যন্ত এ বিষয়ে নীরব প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘‘বিচার ব্যবস্থার উপর মানুষের ভরসা থাকছে না, এটা গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের জন্য অশনিসংকেত।’’ তবে বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলেননি রাহুল গাঁধী।
নিজের দিল্লির বাড়ি থেকে ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে শুনানিতে যোগদান করেন আডবাণী। পাশে ছিলেন মেয়ে প্রতিভা। সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতের বিচারক যখন রায় দিচ্ছিলেন তখন বাবার হাত আঁকড়ে ধরে বসেছিলেন তিনি। রায়ের পরে ‘লৌহপুরুষ’ বলেন, ‘‘ওই রায় রামজন্মভূমি আন্দোলনের প্রশ্নে আমার ও বিজেপির যে বিশ্বাস এবং দায়বদ্ধতা, সেটিকেই প্রতিষ্ঠা করল। আমি আশীর্বাদধন্য বলে মনে করছি কারণ ওই রায়টি ২০১৯ সালে নভেম্বরে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে এসেছে। কারণ সুপ্রিম কোর্টের ওই রায় আসার ফলেই অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণের যে দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল তা পূরণ হয়েছে।’’
স্বস্তিতে বর্ষীয়ান নেতা মুরলীমনোহরও। তিনি বলেন, ‘‘ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর যে কোনও ষড়যন্ত্র ছিল না তা আজ প্রমাণ হল।’’ আদালতের রায় আসতেই তাঁকে স্বাগত জানিয়ে মুখ খোলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের কথায়, ‘‘স্রেফ ভোট ব্যাঙ্কের স্বার্থে সাধুসমাজ, বিজেপি-ভিএইচপি কর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে ষড়যন্ত্র করেছিল কংগ্রেস।’’ যদিও পাল্টা আক্রমণে বিরোধীরা বলছেন, গোটাটাই প্রহসন। মসজিদ ভেঙেও বেকসুর ছাড়া পেয়ে গেলেন অভিযুক্তরা। আজকের রায় স্পষ্ট করে দিল সে দিন যা হয়েছিল তা ঠিক হয়েছিল। কার্যত আদালতের রায় তাতেই সিলমোহর দিল। বিরোধীদের দাবি, ওই রায় মথুরা ও কাশী-কে কেন্দ্র করে নতুন করে মন্দির আন্দোলনের রাস্তাকে খুলে দিল।
আরও পড়ুন: বাবরি মসজিদ ধ্বংস মামলায় আডবাণী-জোশীরা সবাই বেকসুর
আজকের রায়ের পরেই আডবাণীকে ফোন করেন বিজেপি সভাপতি জে পি নড্ডা। সূত্রের খবর, আডবাণীকে ফোন করেছিলেন অমিত শাহও। যে আডবাণী এত দিন কার্যত ব্রাত্য ছিলেন, আজ রায়ের পরেই তাঁকে অভিনন্দন জানাতে যান কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ। টুইট করে সঙ্ঘ পরিবারের শীর্ষ নেতা ভাইয়াজী জোশী বলেন, ‘‘এই রায়ের পরে আশা করব, দেশের সব শ্রেণির মানুষ পারস্পরিক বিশ্বাস ও সংহতির মাধ্যমে দেশের সামনে যে চ্যালেঞ্জ রয়েছে তার মোকাবিলা করবেন। দেশকে উন্নতির পথে নিয়ে যাবেন।’’ মথুরা ও কাশী-কে কেন্দ্র করে আন্দোলন হবে কিনা, সে প্রশ্নে এখনই মুখ খুলতে রাজি নয় সঙ্ঘ।
সামনেই বিহারে বিধানসভা নির্বাচন। এই বিহারে আডবাণীর রথযাত্রা আটকেছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদব। কিন্তু রামমন্দির বিহারের ভোটারকে কতটা প্রভাবিত করবে, তা নিয়ে অবশ্য সংশয়ে বিজেপি নেতারা।
রামমন্দির নির্মাণের সুপ্রিম কোর্টের রায়কে স্বাগত জানালেও, আজ আক্রমণের পথে হেঁটেছে কংগ্রেস। দলের মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট যেখানে মসজিদ ভাঙাকে অপরাধ বলেছে, সেখানে আদালতের আজকের রায় সংবিধান ও সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরিপন্থী।’’ অধীরের কটাক্ষ, ‘‘পৃথিবীর মানুষ চোখের সামনে দেখল বাবরি মসজিদ ধ্বংস করা হল। মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল বিচার-ব্যবস্থা। বিচারের বাণী ঠিক মতো ধ্বনিত না হলে আজ বাবরি মসজিদ ভাঙছে, কাল আমাদের মাথা ভাঙবে। হয়তো দেখব আরও এক জন বিচারপতি রাজ্যসভার এমপি হচ্ছেন।’’