অযোধ্যার রামমন্দির। —ফাইল চিত্র।
রাত আটটা। সিল হয়ে গেল অযোধ্যা সীমানা। যাঁদের কাছে ২২ জানুয়ারি রামমন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে থাকার আমন্ত্রণপত্র রয়েছে, এরপর থেকে তাঁরাই একমাত্র প্রবেশ করতে পারবেন অযোধ্যায়। সোমবার নরেন্দ্র মোদী মন্দির উদ্বোধন করে চলে যাওয়ার পরেই ফের খুলবে ওই সীমানা। কাল দুপুর থেকেই মন্দির চত্বরের পাহারার দায়িত্ব নিতে চলেছে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা স্পেশাল প্রোটেকশন গ্রুপ। কাল থেকেই নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় ঢেকে ফেলা হচ্ছে অযোধ্যাকে। এই প্রথম মুখ চেনার প্রযুক্তি হিসেবে এখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগানো হচ্ছে।
কিন্তু যাঁরা ইতিমধ্যেই অযোধ্যায় পৌঁছে গিয়েছেন, তাঁদের এখন একটাই আকুতি, গাড়ির পাস আছে? আজ সন্ধ্যের পর থেকেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে যাবতীয় যানবাহন। অলিগলির ভিতর দিয়ে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে কাল থেকেই। গোটা অযোধ্যা এখন ভিভিআইপি ও বিভিন্ন মঠাধীশের উপস্থিতিতে কানায় কানায় ভর্তি। আগামিকাল থেকে কী ভাবে তারা যাতায়াত করবেন, তা ভেবেই মাথায় হাত সকলের।
এ দিকে, গোটা অযোধ্যা সেজে উঠেছে নতুন করে। হনুমান গুফা থেকে লতা মঙ্গেশকর চক ছুঁয়ে হনুমানগড়হি যাওয়ার রাস্তা। কিন্তু লতা চকের পর থেকেই আমজনতার ভিতরে প্রবেশে কড়াকড়ি শুরু করে দিয়েছে পুলিশ। আগামিকাল দুপুরের পর থেকেই স্থানীয় ব্যক্তি ছাড়া বাকি সকলের প্রবেশ নিষেধ হয়ে যাবে হনুমানগড়হি চত্বরে। বন্ধ করে দেওয়া হবে দু’প্রান্তের অপ্রশস্ত অলি-গলি। নব্বইয়ের দশকে করসেবার সময়ে যে অলিগলি থেকেই দঙ্গল বেঁধে বেরিয়ে আসতেন করসেবকেরা। কাল থেকে ওখানে ‘পজিশন’ নিতে চলেছেন আধা সামারিক বাহিনীর জওয়ানেরা।
আজ সকাল থেকেই রামমন্দির ও মন্দির প্রাঙ্গণ সাজিয়ে দেওয়া হয় ফুলে। বিকেলে আলোকসজ্জা। গত ক’দিনের মতো আজও মন্দিরে সকালে বাস্তু পুজো হয়, তার পর মন্ত্রোচ্চারণের মধ্যে দিয়ে মন্দিরে ৮১টি কলস স্থাপন করা হয়। প্রসাদ অধিবাস, পুষ্প অধিবাস হয়। বিকেলে হয় আরতি। পুজোর কাজে লাগতে পারে, এমন বিভিন্ন নদীর জল এসে পৌঁছয় আজ।
রাজ্য প্রশাসন জানিয়েছে, ২২ জানুয়ারি সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ অযোধ্যায় নামবেন নরেন্দ্র মোদী। বেলা ১২টা ৫ মিনিট থেকে ১২টা ৫৫ মিনিট পর্যন্ত রামলালার মূর্তির প্রাণপ্রতিষ্ঠায় অংশ নেবেন তিনি। বেলা ১টা থেকে ২টো পর্যন্ত সার্বজনিক একটি অনুষ্ঠানে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী। তারপরে তিনি দিল্লি ফিরে যাবেন। তার পর রামমন্দির আমজনতার জন্য ধাপে ধাপে খুলে দেওয়া হবে। আরএসএস মুখপাত্র সুনীল অম্বেকর বলেন, ‘‘দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ১৫টি পরিবার যজমান হিসাবে পুজোয় অংশ নেবেন। সব মতের সাধুসন্তেরা থাকবেন। সে দিনের অনুষ্ঠানটি হিন্দু ঐক্যের প্রশ্নে বড় মাপের পদক্ষেপ।’’
আজ রামেশ্বরমে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। আগামিকাল ওই রাজ্যের আরিচল মুনাই পয়েন্টে যাবেন। অনেকের বিশ্বাস, ওই প্রান্ত থেকে রাম সেতু নির্মাণ শুরু হয়েছিল। পাশাপাশি ধনুষ্কোডির শ্রীকোঠান্ডারামা মন্দিরে পুজো দেবেন প্রধানমন্ত্রী।
এ দিকে গত কাল রামলালার ছবি প্রকাশ্যে চলে আসায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রাম জন্মভূমির প্রধান পুরোহিত আচার্য সত্যেন্দ্র দাস। তিনি বলেন, ‘‘এ ভাবে প্রাণ প্রতিষ্ঠার আগে মূর্তির ছবি বাইরে আসা ঠিক নয়। যদি সত্যিই তা হয়ে থাকে, তা হলে কারা এর জন্য দায়ী, তা খোঁজ নিয়ে দেখা উচিত।