গুজরাতের বিভিন্ন নদীর জল ও মাটি সংগ্রহ করে তা পাঠানো হচ্ছে অযোধ্য়াতে। ছবি: পিটিআই।
পুরনো অনেক মন্দিরের গায়েই নতুন রংয়ের পোঁচ। বাহারি রংয়ের ছোঁয়া রাস্তার পাশের অনেক দেওয়াল, সাঁকো, কালভার্টে। কোথাও লাগানো হচ্ছে আলো, তো কোথাও তোড়জোড় মাইকের চোঙা লাগানোর। রামমন্দিরের ভূমি পুজো এবং শিলান্যাসের জন্য সাজছে অযোধ্যা। তল্লাটে কত জন করোনা আক্রান্ত, কাছের হাসপাতালে চিকিৎসা ঠিকমতো মিলছে কি না— এই সমস্ত প্রশ্ন আপাতত চাপা পড়ে যাচ্ছে ৫ অগস্টের মেগা প্রস্তুতির নীচে।
মঙ্গলবারই রুপোর ইটের ছবি টুইট করেছিলেন বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়। তার উপরে লেখা, ৫ অগস্ট দুপুর ১২টা বেজে ১৫ মিনিট ১৫ সেকেন্ডে শিলান্যাস করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। যাকে পরম শুভ ‘অভিজিৎ মুহূর্ত’ অর্থাৎ রামের জন্মমুহূর্ত বলে মানছে মন্দির নির্মাণের দায়িত্বে থাকা শ্রীরাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্ট। একটি ইটের ওজনই ২২,৬০০ গ্রাম। শোনা যাচ্ছে, পাশাপাশি অমন দু’টি ইট রাখা হবে। রামলালা সাজবেন নবরত্ন খচিত পোশাকে। এক মঞ্চে এত ভিভিআইপি অতিথি। স্বাভাবিক ভাবেই সাজ-সাজ রব। এলাকা পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্ত করতে আসছেন ৫০০ কর্মীর দল! ইলাহাবাদে কুম্ভ মেলায় পরিচ্ছন্নতার দায়িত্ব বর্তেছিল যাঁদের উপরে। স্থানীয় মানুষের একাংশের আশা, আগামী দিনে এই মন্দিরের দৌলতে বিশ্ব পর্যটনের মানচিত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিন্দু হয়ে উঠবে অযোধ্যা। অন্তত হিন্দু ভক্তদের কাছে। তার হাত ধরে এলাকার চেহারা বদলে যাওয়ার আশায় দিন গুনছেন তাঁরা। আবার অনেকে সামান্য গলা নামিয়ে জিজ্ঞাসা করছেন, মঞ্চে না হয় নিয়মের কড়াকড়ি থাকবে। কিন্তু তার বাইরে শিকেয় উঠবে না তো দূরত্ববিধি? সে ক্ষেত্রে তো আবার সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা। কেউ কেউ বলছেন, বাঁচতে ভরসা রামলালাই।
চিন্তার অবশ্য কারণও রয়েছে যথেষ্ট। অযোধ্যা থেকে ২৫-৩০ কিলোমিটার দূরের গ্রাম ধন্নিপুর। বিতর্কিত এলাকা ছেড়ে গিয়ে মসজিদ গড়ার জন্য এখানেই ৫ একর জমি দেওয়া হয়েছে সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডকে। কিন্তু সেই মসজিদ ঘিরে স্থানীয় মুসলিমদেরও উৎসাহ নেই। একে অযোধ্যা থেকে এত দূরে জমি দেওয়ায় তাঁদের অনেকে ক্ষুব্ধ। তার উপরে হালে গ্রামের ঘুম কেড়েছে করোনা। বেশ কিছু বাড়িতে সংক্রমণের খবর মেলায় কিছুটা কড়াকড়ি রাস্তায় যাতায়াতে।
আরও পড়ুন: শিক্ষামন্ত্রীর প্রত্যাবর্তন, নয়া নীতিতে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মাতৃভাষায় শিক্ষা
আরও পড়ুন: কংগ্রেস রাজনীতিতে এক অধ্যায়ের অবসান, প্রয়াত সোমেন মিত্র
কিন্তু অযোধ্যার এখন তা নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় কোথায়? সেখানে পুলিশ-প্রশাসন ব্যস্ত নিরাপত্তার বজ্র-আঁটুনি নিশ্চিত করতে। প্রধানমন্ত্রী-সহ এত ভিভিআইপি এত হাই-প্রোফাইল অনুষ্ঠানে আসছেন বলে কথা। তার উপরে আবার জঙ্গি হামলার আশঙ্কার মেঘ অযোধ্যায়। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, ওই দিন এবং স্বাধীনতা দিবসে অযোধ্যা, জম্মু-কাশ্মীর এবং দিল্লিতে নাশকতার চেষ্টা চালাতে পারে পাক মদতপুষ্ট বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। ফলে সামান্য ঝুঁকি নিতে চাইছেন না কেউ।
সাধু-সন্তদের ইচ্ছে ছিল, শিলান্যাসের এই অনুষ্ঠানও তাক লাগিয়ে দিক পৃথিবীকে। রাজকীয় জাঁকজমক আর বিপুল ভক্ত সমাগমের মধ্যেই নির্মাণ শুরু হোক রামমন্দিরের। কিন্তু সেই ভিড়ে বাধ সেধেছে করোনা। তবু অযোধ্যার প্রায় প্রত্যেক বাড়িতে বলা হয়েছে ওই দিন প্রদীপ জ্বালাতে। সঙ্গে বাড়ির সামনে আলপনা। এক পা এগিয়ে অনেক সাধুর আর্জি, ওই দিন নিজের বাড়িতে অন্তত প্রদীপ জ্বালুন পৃথিবীর সমস্ত রামভক্ত।
বুধবার আনলকের নতুন নির্দেশিকায় কিন্তু ধর্মীয় জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেনি কেন্দ্রীয় সরকার। ভিভিআইপিরা জড়ো হয়ে কী ভাবে তা হলে মন্দিরের সূচনা করবেন? বিরোধীদের প্রশ্ন, রাম মন্দির বলে কি অতিমারি আইন শিথিল হবে সে দিন অযোধ্যায়?