— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
তাঁদের দেশ নেই, বৈধ প্রমাণপত্র তথা ট্রাভেল ডকুমেন্ট নেই, রয়েছে স্রেফ কাশ্মীরের বাসিন্দাদের সঙ্গে বিয়ের পরিচিতি, আর এক রাশ আশঙ্কা। জম্মু ও কাশ্মীর সরকারের বিদেশি সংক্রান্ত নতুন নীতি সেই আশঙ্কার আগুন আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। কম করে ৩০০ জন মহিলা এখন আতঙ্কিত, এই বুঝি ছেড়ে যেতে হল ঘর-বাড়ি-পরিজন।
সম্প্রতি অর্থ কমিশনার এবং অতিরিক্ত মুখ্য সচিব (স্বরাষ্ট্র) আর কে গয়ালের নেতৃত্বে একটি ছয় সদস্যের কমিটি তৈরি করে জম্মু ও কাশ্মীর প্রশাসন। তাতে রয়েছেন বিদেশিদের নথিভুক্তকরণের আঞ্চলিক দফতরের আধিকারিক, জম্মু ও কাশ্মীর সিআইডির দুই আধিকারিক, ২০টি জেলার পুলিশ আধিকারিক-সহ অনেকে। এই কমিটির কাজ, বৈধ কাগজপত্র ছাড়া যে বিদেশিরা দীর্ঘদিন রাজ্যে বাস করছেন, তাঁদের চিহ্নিত করা।
সংবাদমাধ্যম ও প্রশাসন সূত্রে খবর, ২০১০ সালে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লার পুনর্বাসন নীতিতে অন্তত ৩৫০টি পরিবার নেপাল হয়ে কাশ্মীরে প্রবেশ করে। তাঁদের অনেকেই ছিলেন প্রাক্তন জঙ্গির স্ত্রী ও সন্তান। কাশ্মীরে এসে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণের পরে সেই পরিবারগুলিকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তখন থেকে সন্তান নিয়ে এখানেই বাস করছেন তাঁরা। জন্মসূত্রে ভারতীয় নাগরিক নন, তা-ও কোনও রকম উপযুক্ত নথি বা কাগজপত্র তৈরি করে দেওয়া হয়নি প্রশাসনের তরফে। ‘ট্রাভেল ডকুমেন্ট’, অর্থাৎ যে নথির মাধ্যমে তাঁদের এ দেশে প্রবেশের কারণ দর্শানো থাকে, বা অন্য দেশে যাতায়াত সহজ হয়, তা-ও নেই। ফলে, প্রশাসনের নতুন নীতির অবতারণায় আতঙ্কিত তাঁরা।
‘২০১১ সাল থেকে ভারতের নাগরিকত্ব পাওয়ার চেষ্টা করছি। অথচ বৈধ প্রমাণপত্রটুকুও মেলেনি। পাকিস্তানে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থাও করা হয়নি।’ অকপটে জানালেন বুশরা আক্রম। সোপোরে একটি দোকান চালান তিনি। প্রাক্তন এক জঙ্গির এককালের স্ত্রী বুশরা এখন জানেন না তাঁর ভবিষ্যৎ কী।
বিবাহবিচ্ছিন্নাদের আশঙ্কা আরও বেশি। এমনই এক জন নুসরত। পাক-বংশোদ্ভূত এই মহিলা জানান, তাঁর কোনও অধিকার নেই। কখনও কখনও আধপেটা খেয়েও থাকতে হয় তাঁকে। একই কথা শোনা গেল শাজ়িয়া আকবরের মুখে। তাঁর স্বামী শ্রীনগরের রাওয়ালপোড়ার বাসিন্দা। শাজ়িয়া জানালেন, প্রশাসনের নতুন সিদ্ধান্তে তিনি উদ্বিগ্ন। গয়ালের নেতৃত্বে তৈরি হওয়া কমিটির মূল লক্ষ্য রোহিঙ্গা-সহ বিভিন্ন বিদেশিদের চিহ্নিত করা। তাদের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের বাসিন্দা এবং পুনর্বাসন নীতির ফলে নেপাল হয়ে কাশ্মীরে প্রবেশ করা প্রাক্তন জঙ্গিদের পরিজন। ঘরছাড়া দিগহারা হওয়ার উদ্বেগ এখন থাবা বসাচ্ছে ওই ৩০০ মহিলার পরিবারে।