ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে অসমের কাছাড় জেলার কাটগোরা বিধানসভা কেন্দ্রের হরিতিকর পার্ট ১-এর বাসিন্দা অকোল রানি নমঃশূদ্র। বয়স আশি। গত মাসে তাঁকে একটি নোটিস দেয় শিলচরের ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল। নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য সমস্ত কাগজপত্র নিয়ে আদালতে হাজির হতে বলে।
প্রতীকী ছবি
ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রমাণের নোটিস পেয়ে ছেলে ১০ বছর আগে আত্মহত্যা করেছেন। এ বার একই নোটিস পেলেন মা। ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল থেকে নতুন এই নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে অসমের কাছাড় জেলার কাটগোরা বিধানসভা কেন্দ্রের হরিতিকর পার্ট ১-এর বাসিন্দা অকোল রানি নমঃশূদ্র। বয়স আশি। গত মাসে তাঁকে একটি নোটিস দেয় শিলচরের ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল। নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য সমস্ত কাগজপত্র নিয়ে আদালতে হাজির হতে বলে। নোটিসে বলা হয়, ‘আপনি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আপনার নাগরিকত্ব নিয়ে তদন্তে পুলিশের সামনে কোনও বৈধ নথি উপস্থাপন করতে পারেননি। এর ভিত্তিতে আপনাকে একজন অবৈধ অভিবাসী হিসাবে সন্দেহ করা হচ্ছে।’
এই নিয়ে ফের আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন অকোল রানি। তবে আশার কথা, ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে তাঁর মামলা লড়ার জন্য শিলচরের একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীকে তিনি পাশে পেয়েছেন। আইনজীবী অনিল দে হিন্দুস্থান টাইমসকে বলেন, ‘‘২০১২ সালে একই ধরনের নোটিস তাঁর ছেলে পেয়েছিলেন। নোটিস পেয়ে আত্মহত্যা করেন ছেলে। মৃত্যুর শংসাপত্রে তাঁকে ভারতীয় বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। আমি বুঝতে পারছি না, কেন মা-কে আবার নোটিস দেওয়া হল।’’ তবে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ নিয়েই তিনি আদালতে হাজির হবেন বলে জানিয়েছে অনিল দে।
প্রসঙ্গত, অকোলের স্বামীর নামে ভারত সরকারের দেওয়া ১৯৫৬ সালের নাগরিকত্বের কার্ড রয়েছে। তা সত্ত্বে ২০১২ সালে ছেলে অর্জুন নমঃশূদ্রকে নোটিশ পাঠানো হয়। তাঁর পরিবার জানিয়েছে, নোটিশ পাওয়ার পর মানসিক ভাবে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন তিনি। গ্রেফতার করে তাঁকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে, এই ভয়ে তিনি আত্মহত্যা করেন।
২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কাছাড়ে এসেছিলেন। সেই সময় তিনি তাঁর ভাষণে অর্জুনের নাম উল্লেখ করেন। বলেছিলেন, ‘‘অর্জুন নমঃশূদ্র আমার ভাই। তাঁর মৃত্যুতে আমি ব্যথিত। আমি আশ্বাস দিচ্ছি, বিজেপি ক্ষমতায় এলে কোনও অর্জুনকে আর ডিটেনশন ক্যাম্পে যেতে হবে না।’’
অর্জুনের মৃত্যুর পর আদালতের দ্বারস্থ হয় পরিবার। এক বছর ধরে লড়াই চালানোর পর ২০১৩ সালে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল অর্জুনকে ভারতীয় ঘোষণা করে। পরবর্তীকালে তাঁর চার সন্তান, স্ত্রী ও মায়ের নাম জাতীয় নাগরিকপুঞ্জের চূড়ান্ত খসড়ায় ওঠে।
তবে আইনি লড়াই চালালেও আতঙ্ক কাটছে না অকোল রানির। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা সীমান্তের কাছে বাস করি। যে কোনও মুহূর্তে ভারত থেকে তাড়িয়ে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিতে পারে। এই ভয়েই আমার ছেলে আত্মহত্যা করেছে। দশ বছর হয়ে গেল ছেলেকে হারিয়েছি। আর কিছু হারানোর নেই।’’
তবে আইনি লড়াই করবেন তিনি। ঘরে থাকা সমস্ত কাগজপত্র নিয়ে আশি বছর বয়েসে প্রমাণ করবেন, তিনি ভারতীয়।