অসমে সিএএ-র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এক আন্দোলনকারীর। ছবি: পিটিআই।
গোটা দেশে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) চালু হওয়ার পরেই বিক্ষোভের আঁচ দেখা দিল অসমে। সোমবারই সে রাজ্যে বন্ধের ডাক দিয়েছিল ১৬টি বিরোধী দলের একটি মঞ্চ। মঙ্গলবার সকাল থেকে শুরু হয় ‘হরতাল’। বিজেপিশাসিত অসমের মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য হুঁশিয়ারির সুরে জানিয়েছেন, সিএএ রূপায়ণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-আন্দোলন চলতে থাকলে রাজনৈতিক দলগুলি স্বীকৃতি হারাতে পারে।
অসমের ১৬টি ছোট-বড় একাধিক আঞ্চলিক দল এবং কংগ্রেস-সহ বেশ কয়েকটি জাতীয় দল ইউনাইটেড অপোজিসন ফোরাম (ইউওএফএ) নামের একটি মঞ্চ তৈরি করেছে। সিএএ-র বিরুদ্ধে এই মঞ্চের ডাকেই মঙ্গলবার বন্ধ চলছে অসমে। অসমের ছাত্র সংগঠন আসু ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে যে, সিএএ-র বিরুদ্ধে তারা আদালতের ভিতরে এবং বাইরে লড়াই চালাবে। সিএএ-র বিরুদ্ধে প্রতিবাদকে উচ্চগ্রামে নিয়ে যেতে প্রকাশ্যে আইনে কপি পুড়িয়েছেন আসু এবং ৩০টি অরাজনৈতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা। গুয়াহাটি, কামরূপ, বরপেটা, লখিমপুর, নলবাড়ি, ডিব্রুগড়, তেজপুরের মতো জায়গায় প্রতিবাদ মিছিল সংগঠিত হয়েছে।
আন্দোলন থামাতে কড়া অবস্থান নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে অসম সরকার। এই বিষয়ে তারা হাতিয়ার করছে গৌহাটি হাই কোর্টের একটি নির্দেশকে। গত বছর ১৯ মার্চ আদালত বন্ধকে ‘অবৈধ এবং অসাংবিধানিক’ বলে আখ্যা দিয়ে জানিয়েছিল, প্রতিবাদের জন্য জনজীবনের ক্ষতি হলে আন্দোলনকারীদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ নিতে পারবে অসম সরকার। সেই নির্দেশকে ঢাল করেই বিরোধী দলগুলির সিএএ-বিরোধী আন্দোলনকে থামাতে চাইছে হিমন্ত সরকার। ইতিমধ্যেই ১৬টি রাজনৈতিক দলের শীর্ষনেতাকে আইনি নোটিস দিয়েছেন অসমের ডিসিপি (অপরাধ)।
দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার পর ২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বর সিএএ পাশ করিয়েছিল কেন্দ্রের মোদী সরকার। ওই আইন অনুযায়ী, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মতো মুসলিম ধর্মাবলম্বী দেশ থেকে যদি সে দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা ধর্মীয় উৎপীড়নের কারণে এ দেশে আশ্রয় চান, তা হলে তা দেবে ভারত। কিন্তু সিএএ-তে হিন্দু, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ, পার্সি এবং খ্রিস্টান শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হলেও সেখানে মুসলিম সম্প্রদায়ভুক্তদের কথা উল্লেখ করা হয়নি। প্রায় সাড়ে চার বছর আগে সংসদের উভয় কক্ষে পাশ হওয়ার পরে দেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দও অনুমোদন দিয়েছিলেন সিএএ বিলে। কিন্তু এত দিন ধরে সিএএ কার্যকর করা নিয়ে কোনও বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়নি। গত ফেব্রুয়ারি মাসে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানিয়েছিলেন, লোকসভা নির্বাচনের আগেই দেশে সিএএ কার্যকর হবে। শুধু তা-ই নয়, শাহ এ-ও বলেছিলেন, শীঘ্রই সিএএ কার্যকর করার বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি হয়ে যাবে।