প্রিয়াঙ্কা দাস
বিনয়বাক্য বা ব্যঙ্গবাক্যের গণ্ডি পেরিয়ে বামনের চন্দ্রস্পর্শাভিলাষ এ বার বাস্তব হতে চলেছে। আর তাতে বড় ভূমিকা নিতে পারেন এক ভারতকন্যা।
মানুষ ৫০ বছর আগে চাঁদে পা রেখেছিল। সেই ঐতিহাসিক ঘটনা উপলক্ষে আয়োজিত সম্মেলন ওই অসমতনয়া তথা ভারতকন্যার কাছে ‘চাঁদে হাত বাড়ানোর’ সমান! চাঁদে মানুষের পদার্পণের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে অক্টোবরে সম্মেলন বসছে আমেরিকায়। বিশ্বের ৫০ জন তাবড় বিজ্ঞানীর মধ্যে সেই সম্মেলনে গবেষণাপত্র পেশ করবেন অসমকন্যা প্রিয়াঙ্কা দাস। তাঁর গবেষণাপত্রের মূল উদ্দেশ্য পৃথিবীতে বসে চাঁদ ‘ছোঁয়ার’ পদ্ধতি বাতলানো। গবেষণাপত্র কতটা সফল হবে, তা সময়ই বলবে। কিন্তু তাঁর উদ্ভাবনী ক্ষমতা আন্তর্জাতিক স্তরে নজর কেড়েছে। এ-হেন সম্মেলনে যোগ দেওয়ার সুযোগ পেয়ে রীতিমতো উত্তেজিত প্রিয়াঙ্কা।
অসমের বরদলনি চৌখানের মেয়ে প্রিয়াঙ্কা বর্তমানে ফরাসি নাগরিক। ছোটবেলা থেকেই আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখতেন। ইচ্ছে ছিল মেরুপ্রদেশে পা দেওয়ার। ক্ষুদ্র কৃত্রিম উপগ্রহ (মাইক্রো স্যাটেলাইট) ‘কিউবি-৫০’ তৈরিতে তাঁর হাত ছিল। সেটি এখন মহাকাশে চক্কর কাটছে। তাই আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন কিছুটা পূরণ হয়েছে তাঁর। ২০২০ সালে ৭৫ জনের মহিলা বিজ্ঞানী দলের সদস্য হয়ে দক্ষিণ মেরুতে যাওয়ার কথা আছে এই তরুণীর। প্রিয়াঙ্কার উড়ান স্বপ্নের মতোই। দিল্লির সেন্ট স্টিফেনস কলেজ থেকে পদার্থবিদ্যায় স্নাতক হওয়ার পরে ফ্রান্সের ‘ইকল পলিটেকনিক’ কলেজে পড়ার সুযোগ পান। কাজ করেছেন নাসার ‘জেট প্রপালসন ল্যাবরেটরি’-তে। ডেটা সায়েন্সে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেওয়ার পরে ব্রাজিলের সাও পাওলো বিশ্ববিদ্যালয়ে রোবোটিক্স ও কৃত্রিম মেধা (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) নিয়ে কাজ করেছেন। দ্বিতীয় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি করেছেন এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে।
এ-সবের মধ্যেই প্রিয়াঙ্কা নতুন পথ বাতলাতে চলেছেন চাঁদের জরিপ ব্যবস্থা নিয়ে। তাঁকে সাহায্য করছে ইউরোপীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি)। প্রিয়াঙ্কা বলেন, ‘‘মহাকাশ সংস্থাগুলি চাঁদে ভিত তৈরির জন্য পরিবেশ, ভূপ্রকৃতি নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছে। আমার কাজ হল, পৃথিবী থেকেই এখানকার উপগ্রহ প্রযুক্তি চাঁদের দিকে ঘুরিয়ে তা চাঁদের জিপিএস হিসেবে ব্যবহার করা যায় কি না, দেখা। উপগ্রহ থেকে আসা সঙ্কেতের বড় অংশ পৃথিবীর বুকে পৌঁছয় না। সেই সঙ্কেতকে কাজে লাগাতে চাই।’’ এই বিজ্ঞানীর মতে, চাঁদে ‘বেস’ তৈরি হয়ে গেলে চাঁদের জন্য নতুন করে উপগ্রহ ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে। প্রারম্ভিক পর্যায়ে পৃথিবীর উপগ্রহ দিয়ে কাজ চালাতে পারলে খরচ অনেকটা বাঁচবে।