Assam

ভোটের দীর্ঘ লাইনে ফিরল বিধির কড়াকড়ি

বারের ভোট আক্ষরিক ভাবেই অভূতপূর্ব, অভিনব, ব্যতিক্রমী। বুথের সামনে ঘেঁষাঘেঁষি নয়, গোল দাগের মধ্যে পা রেখে লাইন দিতে হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২১ ০৫:২৯
Share:

n যোরহাটের ভোট কেন্দ্রে কোভিড-বিধি মেনে চলছে ভোটদান। নিজস্ব চিত্র।

মানুষের দীর্ঘ লাইন শুভ লক্ষণ, বলছেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির মুখেও একই কথা। ডিব্রুগড়ের সাহিত্য সভা ভবনে ভোট দিয়ে বেরিয়ে সর্বানন্দ সোনোয়াল বলেন, “মানুষ গত পাঁচ বছরে আমাদের অঢেল আশীর্বাদ করেছেন। পরের পাঁচ বছরের আশীর্বাদ লম্বা লাইনের শেষে ভোটযন্ত্রে বন্দি হচ্ছে।” আর কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতির দাবি, চাকা ঘুরছে। দলে দলে মানুষের বুথমুখো হওয়া মানেই পালাবদল আসন্ন। অসমে তিন দফার ভোট হলেও আজ, প্রথম দফার ভোটেই অনেকটা ঠিক হয়ে যাবে দিসপুরের গদিতে কে বসবেন? সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আসা তথ্যে, ভোট পড়েছে প্রায় ৭৭ শতাংশ।

Advertisement

এ বারের ভোট আক্ষরিক ভাবেই অভূতপূর্ব, অভিনব, ব্যতিক্রমী। বুথের সামনে ঘেঁষাঘেঁষি নয়, গোল দাগের মধ্যে পা রেখে লাইন দিতে হয়েছে। বুথে ঢোকার আগে থার্মাল স্ক্রিনিং, মুখে পরিয়ে দেওয়া মুখোশ, ঢোকার আগে-পরে হাতে ছিটিয়ে দেওয়া স্যানিটাইজ়ার বাধ্যতামূলক। আর বুথের ভিতরে প্রিসাইডিং অফিসার থেকে শুরু করে অন্য ভোটকর্মীরা পিপিই কিট পরে গরমে ভিজে জবজবে। গত কয়েক দিনে ফের বাড়ছে করোনা। তাই কোনও ঝুঁকি নিতে নারাজ নির্বাচন কমিশন। করোনা কমে আসায় স্বাস্থ্যবিধি একেবারেই ভুলতে বসা অসমবাসীকে তাই আজ ফের করোনা কড়াকড়ির দিনে ফিরিয়ে দিল বিধানসভা নির্বাচন, যে করোনা নিয়ন্ত্রণকে মূল হাতিয়ার করে অসম দখলে রাখতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল, স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মারা।

বিজেপির দাবি, প্রথম দফায় অন্তত ৪২টি আসনে তারা জিতছে। গত বার বিজেপি-অগপ জোট পেয়েছিল ৩৬টি আসন। কিন্তু এ বার নমনি ও মধ্য অসমে কংগ্রেস ও এআইইউডিএফ জোট গড়ার ফলে এবং বাঙালি ভোটাররা দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ায় আজ উজানির ভোট ক্ষমতা ধরে রাখতে বিজেপি-অগপ জোটের বড় ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেখানেও অনেকটা কামড় বসাতে তৈরি দুই আঞ্চলিকতাবাদী দল অসম জাতীয় পরিষদ ও রাইজর দল।

Advertisement

অসমিয়া সংখ্যাধিক্য থাকায় কংগ্রেস ও অন্য বিরোধী দল সিএএ-বিরোধিতাকে উজানি অসমে প্রধান হাতিয়ার করেছে। অবশ্য লোকসভা ভোটের উদাহরণ টেনে বিজেপির রাজ্য সভাপতি রঞ্জিতকুমার দাস দাবি করেন, “সিএএ-বিরোধী আন্দোলন যত হবে বিজেপির ভোট ততই বাড়বে।” উজানি অসম মানেই বাগানের ভোট। প্রতিশ্রুতি মতো দৈনিক মজুরি বাড়াতে না পেরে সেখানেও চাপে বিজেপি। আর কংগ্রেস দিয়েছে ৩৬৫ টাকা মজুরির গ্যারান্টি। চা জনজাতি সংগঠন ও আদিবাসী ছাত্র সংগঠনগুলি নাগাড়ে বিজেপি বিরোধী প্রচার চালিয়েছে চা বাগানে। তাই বাগানের ভোট ধরে রাখা কঠিন হতে পারে শাসকের পক্ষে। তিন বারের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ মারা যাওয়ায় তাঁর তিতাবর আসন ধরে রাখা কংগ্রেসের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। রিপুন বরার দাবি, “ভোটের বাতাস ইউ-টার্ন নিয়েছে। কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের ক্ষমতা দখল এখন সময়ের অপেক্ষা।” এ দিনের ভোটে যে ৩৭ জন বর্তমান বিধায়ক লড়ছেন তাঁদের মধ্যে ২৪ জনই বিজেপির। কংগ্রেস ও অগপ-র বর্তমান বিধায়ক ৬ জন।

কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া নির্বাচনপর্ব শান্তিপূর্ণ ভাবেই মিটেছে। ডিব্রুগড়ের লাহোয়ালে মৈদঙীয়া ভোটকেন্দ্রে ভোটাদের সঙ্গে কোভিড বিধি নিয়ে তর্কাতর্কির সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক মুনিন পাঠক লাইসেন্স থাকা পিস্তল বের করে হুমকি দেন। বুথে আগ্নেয়াস্ত্র বহন করা এবং প্রকাশ্যে তা বার করে হুমকি দেওয়ায় পুলিশ ওই চিকিৎসকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। তাঁর .৩২ বোরের পিস্তলটি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সোনারিতে ভোট চলাকালীন শালকাঠনি চা বাগানের বুথে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান পোলিং অফিসার তুলসি খনিকর। তিনি হাজোয়া বাগিচা নিম্ন প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। উজানি অসমে গত কয়েক মাসে আলফার গতিবিধি বাড়ায় পুলিশ, এসএপি, সিআরপি মিলিয়ে প্রায় ৩০০ কোম্পানি নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগ করা হয়েছিল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement