ক্ষুব্ধ বাংলার শাসকদল। ফাইল চিত্র।
তিনি যখন বাংলার রাজভবনের বাসিন্দা, তখন বঙ্গের শাসক শিবিরের সঙ্গে তাঁর তিক্ততা চরমে পৌঁছেছিল। কিন্তু উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে সেই জগদীপ ধনখড়ের বিরুদ্ধে ভোট দেয়নি তৃণমূল কংগ্রেস। ভোটদানে বিরত ছিল তারা। ফলে অনায়াসে জয় পান নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহদের প্রার্থী ধনখড়। জয় নিশ্চিত করতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো রাজনীতিককে কোন ‘ম্যাজিকে’ তিনি বশ করলেন, তা গত কাল রাজস্থানের ভূমিপুত্র ধনখড়ের কাছে জানতে চান সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌত। ওই প্রশ্নে অবশ্য ক্ষুব্ধ বাংলার শাসকদল।
রাজ্যপাল হিসাবে ধনখড় পশ্চিমবঙ্গে ছিলেন তিন বছর। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, গোড়া থেকেই দুই শিবিরের মধ্যে যে দ্বন্দ্বের আবহ তৈরি হয়েছিল, তা চলে একেবারে শেষবেলা পর্যন্ত। তা সত্ত্বেও উপরাষ্ট্রপতি ভোটে তৃণমূল ধনখড়ের বিরোধিতা তো করেইনি, উল্টে কংগ্রেসকে দোষারোপ করে ভোটদানে বিরত ছিল। তৃণমূলের যুক্তি, দলনেত্রীর সঙ্গে আলোচনা না করে কংগ্রেসের একতরফা প্রার্থী ঘোষণায় ওই নির্বাচনে ভোটদানে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত। বাম দলগুলির অবশ্য অভিযোগ ছিল, ‘মোদী-দিদি গোপন আঁতাঁতে’র কারণেই ভোট বয়কট করে বিজেপি প্রার্থীকে সুবিধে করে দিয়েছিল তৃণমূল। এ বার গহলৌতের ওই আপাত নিরীহ প্রশ্ন, সেই সম্পর্ককে ফের প্রকাশ্যে এনে ফেলল।
বিষয়টির সূত্রপাত গত কাল। উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়া ভূমিপুত্র ধনখড়ের সংবর্ধনা সভায় গহলৌত জানতে চান, কোন রহস্যে তিনি ভোটে মমতাকে পাশে পেলেন। রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘যে তিন বছর আপনি পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল ছিলেন, সেই সময়ের গোটাটাই মমতার সঙ্গে আপনার বিবাদ দেশে আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল। কিন্তু আপনি উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী হতেই মমতা ভোটদানে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নেন। আমি এক জন জাদুকর (গহলৌতের পৈত্রিক পেশা)। কিন্তু আপনি কোনও জাদুতে মমতার মতো কড়া ধাঁচের মহিলাকে ভোটদানে বিরত রাখলেন?’’
উপরাষ্ট্রপতির সহাস্য জবাব, ‘‘আমি রাজনীতির লোক নই। কী কারণে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, কীসের ভিত্তিতে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে থাকে তা উপস্থিত অশোক গহলৌত, বসুন্ধরা রাজেরারাই বলতে পারবেন।’’ তিনি উল্টে বলেন, ‘‘রাজ্যপাল থাকাকালীন আমিই বরং রাজস্থানের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজের কাছে জানতে চেয়েছিলাম যে কী ভাবে মমতার উপরে কী জাদু করা যায়।’’ তাঁর সঙ্গে তৃণমূলনেত্রীর যে বিরোধ তৈরি হয়েছিল সে প্রসঙ্গে প্রাক্তন রাজ্যপাল বলেন, ‘‘আমি মমতাকে বলেছিলাম যে আমি সংবিধান বিরোধী কোনও পদক্ষেপ করেছি কি না। তিনি আমার বিরুদ্ধে মুখ খোলা সত্ত্বেও তাঁর সম্মানহানি হয় এমন কোনও বক্তব্য কি কোথাও করেছি?’’ ধনখড় জানিয়েছেন, তাঁকে একাধিকবার ব্যক্তিগত আক্রমণ করা হলেও, তিনি কখনও অসংবিধানিক বা মমতার বিরুদ্ধে কোনও খারাপ কথা বলেননি।
এ নিয়ে রাজ্যসভায় তৃণমূলের সচেতক সুখেন্দুশেখর রায় বলেন, ‘‘মৃত্যুর পথে চলে যাওয়া কংগ্রেসকে কী ভাবে বাঁচানো যায় তা নিয়ে বরং ভাবুক অশোক গহলৌত। অন্য দল কী করেছে তা নিয়ে না ভাবলেও চলবে। আর বামেরা ওই অভিযোগ দীর্ঘ দিন করে আসছেন। যারা বামপন্থী থেকে শূন্যপন্থী হয়ে পড়েছেন, তাঁদের নিয়ে আমার মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন।’’