ব্যপমের জাল ছিঁড়তে মরিয়া আশিস-আনন্দ

এক জনকে ‘কেটে টুকরো টুকরো’ করে ফেলার ছক কষা হচ্ছে। প্রচুর হুমকি শুনেছেন অন্য জনও। তা সত্ত্বেও পিছু হটতে রাজি নন আশিস চতুর্বেদী ও আনন্দ রাই।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

ভোপাল শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৫ ০৩:৩৮
Share:

আশিস চতুর্বেদী ও আনন্দ রাই

এক জনকে ‘কেটে টুকরো টুকরো’ করে ফেলার ছক কষা হচ্ছে। প্রচুর হুমকি শুনেছেন অন্য জনও। তা সত্ত্বেও পিছু হটতে রাজি নন আশিস চতুর্বেদী ও আনন্দ রাই। ব্যপম কাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান-সহ প্রভাবশালীদের ভূমিকা পুরোপুরি ফাঁস করতে চেষ্টার কসুর করবেন না বলে জানিয়েছেন দু’জনেই।

Advertisement

গ্বালিয়রে সমাজ কল্যাণের ছাত্র ২৬ বছরের আশিস। নিজের মা-র ক্যানসারের চিকিৎসা করাতে গিয়ে দেখেন, রাজ্যের অনেক চিকিৎসকের সাধারণ প্রশিক্ষণও নেই। ব্যাপার বুঝতে নিজেই তদন্ত শুরু করেন। সাহায্য নেন তথ্যের অধিকার আইনের। ২০১৩ সালে তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই মেডিক্যাল প্রবেশিকা পরীক্ষায় দুর্নীতি নিয়ে মামলা করে পুলিশ।

গ্বালিয়রে নিজের পাড়ায় বসে আশিস জানাচ্ছেন, ওই তদন্ত থেকেই ধীরে ধীরে ব্যপমের মাধ্যমে পরীক্ষায় ব্যাপক দুর্নীতির কথা জানতে পারে পুলিশ। ক্রমশই তাতে একের পর এক প্রভাবশালীর নাম জড়াতে থাকে। সেই সঙ্গে বাড়তে থাকে তাঁর বিপদ। আশিসের দাবি, কেবল বিজেপি নয়, কংগ্রেসের নেতারাও ব্যপম কেলেঙ্কারির সঙ্গে যুক্ত।

Advertisement

বার দশেক তাঁকে প্রাণে মারার হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে দাবি আশিসের। হামলাও হয়েছে কয়েক বার। আদালতের নির্দেশে তাঁকে অবশ্য নিরাপত্তা দিয়েছে পুলিশ। কিন্তু আশিসের মতে সেটা নেহাত প্রহসন ছাড়া কিছু নয়।

কেন?

গ্বালিয়রের তথ্যের অধিকার কর্মী জানাচ্ছেন, আগে এক পুলিশের সাইকেলের পিছনে বসে যেতে হতো তাঁকে। এখন এক জন পুলিশ তাঁর সঙ্গে সাইকেলে করে যান। গ্বালিয়রের ব্যস্ত বাজার এলাকায় যে কোনও সময়ে তাঁর উপরে হামলা হতে পারে বলে মনে করেন আশিস। তখন ওই পুলিশকর্মী যে ইচ্ছে করলেও তাঁকে বাঁচাতে পারবেন না তাও জানাচ্ছেন তিনি।

আশিসের দাবি, সম্প্রতি একটি খাবারের দোকানে তাঁকে ‘কেটে টুকরো টুকরো’ করে ফেলার ছকের কথা কয়েক জনকে আলোচনা করতে শুনে ফেলেন তাঁর নিরাপত্তারক্ষী। এই বিষয়ে ঝাঁসি রোড থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু প্রশাসন কোনও পদক্ষেপ করেনি।

নিরাপত্তা নিয়ে বার বার প্রশাসনের কাছে দরবার করেছেন আশিস। কিন্তু ওই এক জন পুলিশকর্মী ছাড়া তাঁকে নিরাপত্তা দেওয়ার কোনও ব্যবস্থা করা হয়নি। হাসতে হাসতে ২৬ বছরের যুবক বলছেন, ‘‘হয়তো এর পরেই আমার রহস্যজনক মৃত্যু হবে।’’ তবে তাতে দমছেন না তিনি। হাসি মুখেই জানাচ্ছেন, ‘‘মরার আগে শিবরাজ সিংহ চৌহান-সহ সব রাঘববোয়ালের কীর্তি ফাঁস করে দিয়ে যাব।’’

আশিসের মতোই ব্যপম কাণ্ড ফাঁসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন ইনদওরের চিকিৎসক আনন্দ রাই। তাঁকেও বহু বার প্রাণে মারার হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে দাবি আনন্দের। ব্যপম কাণ্ডে সাংবাদিক অক্ষয় সিংহ ও পশু চিকিৎসক নরেন্দ্র সিংহ তোমরের মৃত্যু বিষক্রিয়ার ফলে হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করেন তিনি। আনন্দের কথায়, ‘‘আমি যা তথ্য পেয়েছি তাতে শিবরাজ সিংহ চৌহান কোনও মতেই ব্যপম কাণ্ডের দায় এড়াতে পারেন না।’’

ব্যপম কাণ্ডে মৃত্যুর মিছিল সত্ত্বেও উপযুক্ত নিরাপত্তা পান না আশিস-আনন্দেরা। এই ধরনের কাণ্ড যাঁরা ফাঁস করেন (হুইসলব্লোয়ার) তাঁদের নিরাপত্তার জন্য ২০১১ সালে ইউপিএ সরকারের আনা আইন ২০১৪ সালে রাষ্ট্রপতির সম্মতিও পেয়ে গিয়েছে। কিন্তু তাতে অবস্থা বিশেষ বদলেছে বলে মনে করছেন না কেউই।

ব্যপম-মৃত্যুর তালিকায় পরের নাম কি তাঁদের? রোজই সে কথা ভাবেন আশিস ও আনন্দ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement