Asaduddin Owaisi

Asaduddin Owaisi: আজ দ্বিতীয় দফার ভোট উত্তর প্রদেশে, বিজেপির মেরুকরণে ইন্ধন ওয়েইসির

গোড়া থেকেই বিজেপির প্রধান চিন্তা হল প্রথম দুই পর্বের ভোট। যা মূলত হচ্ছে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের কৃষিপ্রধান জাঠ বলয়ে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৭:৩৬
Share:

—ফাইল চিত্র।

‘ভালবাসার দিনে’ উত্তরপ্রদেশে ভাগ্য পরীক্ষার লড়াইয়ে নামছে সে রাজ্যের রাজনৈতিক দলগুলি। রাজ্যের ৯টি জেলায় ৫৫টি আসনে ভোট যুদ্ধে নামবেন ৫৮৬ জন পদপ্রার্থী। উত্তরপ্রদেশের দ্বিতীয় পর্বে বিজেপির যেখানে জেতা আসন ধরে রাখার লড়াই, সেখানে সমাজবাদী পার্টির লক্ষ্যই যাদব-মুসলিম ও জাঠদের ভোট একত্রিত করে মূলত পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ ও রোহিলাখণ্ডের অধিকাংশ আসনে জয় নিশ্চিত করে বিজেপিকে মুছে দেওয়া।

Advertisement

গোড়া থেকেই বিজেপির প্রধান চিন্তা হল প্রথম দুই পর্বের ভোট। যা মূলত হচ্ছে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের কৃষিপ্রধান জাঠ বলয়ে। বিতর্কিত কৃষি আইন, আখ উৎপাদনকারী এলাকা হিসাবে পরিচিত পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের কৃষকেরা বিভিন্ন কারণে শাসক বিজেপির উপরে ক্ষুব্ধ। ফসলের সময়ে দাম না পাওয়া, চাষের কাজে সারের অভাবের মতো কারণের পাশাপাশি বিতর্কিত তিন কৃষি আইন সেই ক্ষোভে বাড়তি ইন্ধন দিয়েছে। জাঠেদের বড় অংশ এ বার বিজেপিকে হারাতে মরিয়া। এ বারে তাই ক্ষুব্ধ জাঠেদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে এসপির মুসলিম ও যাদব ভোটারেরা। ফলে প্রথম পর্বের ৫৮টি ও দ্বিতীয় পর্বের ৫৫টি আসনের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন ধরে রাখাই যে দলের কাছে চ্যালেঞ্জ, তা বিলক্ষণ বুঝতে পারছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। দলের কেন্দ্রীয় স্তরের এক নেতার কথায়, “প্রথম দু’টি পর্বই এ বার দলের কাছে প্রধান চ্যালেঞ্জ। প্রথম দু’টি পর্বের ফলের উপরে সার্বিক ভল নির্ভর করছে।“ তবে প্রথম দফায় যে ভাবে মানুষ কম ভোট দিতে বেরিয়েছেন, তাতে কিছুটা হলেও স্বস্তিতে বিজেপি নেতৃত্ব। দল মনে করছে, মানুষের মধ্যে যদি সরকারের বিরুদ্ধে প্রবল বিক্ষোভের হাওয়া থাকত, তা হলে মানুষ দলে দলে ঘর থেকে বেরিয়ে ভোট দিতে বুথমুখী হতেন। সে ক্ষেত্রে ভোটের হার বৃদ্ধি পেত। যে প্রবণতা প্রথম পর্বে অন্তত লক্ষ করা যায়নি।

আগামিকাল যে ৫৫টি আসনে ভোট হচ্ছে, তার মধ্যে পাঁচ বছর আগের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি জিতেছিল ৩৮টি আসনে। এসপি জেতে ১৫টি ও কংগ্রেস দু’টি আসনে। এসপি-র যে পনেরো জন বিধায়ক গত বার জিতেছিলেন, তার মধ্যে দশ জনই মুসলিম সমাজের। আগামিকাল ভোট হবে মূলত বিজনৌর, অমরোহা, মোরাদাবাদ, রামপুর, বদায়ূঁ, শাহজহানপুরের মতো এলাকাগুলিতে। ওই এলাকাগুলিতে মুসলিম সমাজের বিশেষ করে বরেলভি ও দেওবন্দ শাখার
বিশেষ প্রভাব রয়েছে। যারা প্রথাগত ভাবে এসপি-র সমর্থক। সেই কারণে এই এলাকাগুলিতে ফৌজদারি
মামলা থাকা সত্ত্বেও বাহুবলী মুসলিম নেতা আজম খান ও তাঁর ছেলে আবদুল্লা আজমের উপরেই ভরসা করছে এসপি। এর মধ্যে আজম খান লড়ছেন রামপুর থেকে আর ছেলে আবদুল্লা লড়ছে লাগোয়া কেন্দ্র সওয়ার আসন থেকে। দুর্নীতির অভিযোগে আজম এখনও জেলে থাকলেও ছেলে আবদুল্লা সদ্য জালিয়াতির অভিযোগে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। এ দিকে আবদুল্লার বিরুদ্ধে প্রার্থী হিসাবে দাঁড়িয়েছেন হায়দার আলি খান। ওই আসন থেকে কংগ্রেস তাঁকে প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলেও শেষ পর্যন্ত বিজেপির
শরিক আপনা দল (সোনেলাল)-এ যোগ দেন হায়দার।

Advertisement

উত্তরপ্রদেশের ৪০৩ সদস্যের আসনে হায়দার আলি এনডিএ জোটের একমাত্র মুসলিম প্রার্থী। পরিকল্পিত ভাবে হিন্দু ভোট মেরুকরণের লক্ষ্যেই গত বারের মতোই এ বারও মুসলিম প্রার্থী দেওয়া এড়িয়ে গিয়েছে বিজেপি। অমিত শাহদের লক্ষ্যই হল, মুসলিম ভোট বিভাজনের মাধ্যমে হিন্দু ভোটকে বিজেপির ছাতার তলায় নিয়ে এসে দলীয় প্রার্থীর জয় নিশ্চিত করা। বিরোধীদের অভিযোগ, মুসলিম ভোটে যাতে বিভাজন হয়, সেই কারণেই বিহারের মতো উত্তরপ্রদেশেও প্রার্থী দাঁড় করিয়েছেন হায়দরাবাদের এমআইএম দলের নেতা আসাদউদ্দিন ওয়েইসি। বিজেপির আশা, আসাদউদ্দিনের মতো কট্টর মৌলবাদী নেতার কারণে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে হিন্দু ভোটের মেরুকরণ সহজ হবে। বিজেপির সেই
আশায় ইন্ধন জুগিয়েছে সাম্প্রতিক কর্নাটকের হিজাব-বিতর্ক। আজ দ্বিতীয় দফা ভোটের আগে হিজাব প্রসঙ্গে আসাদউদ্দিন আবার বলেন, এমন দিন আসবে তখন হিজাব
পরিহিত এক মহিলা ভারতের প্রধানমন্ত্রী হবেন। রাজনীতির অনেকের মতে, দ্বিতীয় পর্বে হিন্দু ভোটকে পরিকল্পিত ভাবে একজোট করতেই এমন মন্তব্য করেছেন আসাদউদ্দিন। দ্বিতীয় দফা ভোটের ঠিক মুখে তাঁর এমন মন্তব্যে বিস্তর চটেছেন বিরোধীরা।

গত পাঁচ বছর ধরে যোগী সরকার তাদের অবহেলা করে এসেছে, এই অভিযোগে প্রবল ক্ষোভ রয়েছে ওবিসি সমাজের মধ্যে। তা বুঝেই ভোটের আগে বিজেপি ছেড়ে এসপি-তে যোগ দেন একাধিক
ওবিসি নেতা। যোগী সরকারের বনমন্ত্রী থাকা ধর্ম সিংহ সাইনিকে নকুর বিধানসভা থেকে প্রার্থী করেছে এসপি। গত পাঁচ বছরে ওবিসি সমাজের প্রতি নিরন্তর অবহেলার প্রতিবাদে বিজেপি ছেড়ে ভোট ঘোষণার আগে এসপি-তে যোগ দেন সাইনি। সাইনি ছাড়াও কুশওয়া, মৌর্য সমাজের মধ্যে ধর্ম সিংহের প্রভাব থাকায় ওবিসি ভোটে বিভাজন ঘটাতে স্থানীয় ওবিসি নেতা তথা গত বারের পরাজিত মুকেশ চৌধরিকে প্রার্থী করেছে বিজেপি। মুকেশ ছাড়াও আগামিকাল ভাগ্যপরীক্ষা হতে চলেছে যোগী মন্ত্রিসভার সদস্য, জলশক্তি মন্ত্রী বলদেব সিংহ ও বদায়ূঁ থেকে নগরোন্নয়নমন্ত্রী মহেশ চন্দ্র গুপ্তের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement