অখিলেশ সিংহ যাদব এবং যোগী আদিত্যনাথ। প্রতীকী ছবি।
উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা ভোট এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে রাজ্যে দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি এবং এসপি-র মেরুকরণের রাজনীতি তীব্রতর হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু ধর্মীয় বিভাজনের বৃহত্তর কৌশলের পাশাপাশি বিভিন্ন জেলাভিত্তিক জাতপাতের রাজনীতির দিকেও একই রকম ভাবে নজর দিচ্ছে দুই দল। তাই রাজ্যের অপেক্ষাকৃত ছোট এবং একেবারে ক্ষুদ্র সংগঠনগুলির সঙ্গেও জোট বাঁধার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে যোগী আদিত্যনাথ এবং অখিলেশ সিংহ যাদব, উভয় পক্ষেই।
সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক শিবির বলছে, এর আগের বিধানসভা ভোট থেকেই এই প্রবণতা শুরু হয়ে গিয়েছিল বিজেপির রণকৌশলে। সে বারে তারা শুধু জাত-ভিত্তিক জোটসঙ্গীই খোঁজেনি, প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রেও জাতপাতকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে। অন্য দিকে এসপি-ও কয়েকটি জেলায় সেখানকার জাত-নির্ভর সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করে গিয়েছে।
এ বারের ভোটের ক্ষেত্রে এই প্রবণতা আরও বাড়ছে বই কমেনি। অখিলেশ যাদব, ভোট পূর্ববর্তী জোট ঘোষণা করেছেন সুহেলদেব ভারতীয় সমাজ পার্টি বা এসবিএসপি-র সঙ্গে। পাশাপাশি এসপি এবং আরএলডি-র মঞ্চে যোগ দিয়েছে মহান দল, জনবাদী পার্টি,
ভাগীদারি পার্টি, ভারতীয় বঞ্চিত পার্টি, জনতা ক্রান্তি পার্টি, রাষ্ট্রীয় উদয় পার্টি এবং অপনা দল। এই দলগুলি এক সময় ভাগিদারী সংকল্প মোর্চার অধীনে ছিল।
এসপি-র এই রাজনৈতিক উদ্যোগের পাল্টা দিতে বিজেপিও রাজ্যের ন’টি ক্ষুদ্র দলের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। উত্তরপ্রদেশের পূর্বাঞ্চল, যেখানে পিছড়ে বর্গের গণভিত্তি বেশি, সেখানে এই দলগুলির স্থানীয় প্রভাব রয়েছে। তার মধ্যে রযেছে শোষিত সমাজ পার্টি, মুসহর আন্দোলন মঞ্চ, মানবহিত পার্টি, পৃথ্বীরাজ জনশক্তি পার্টি, প্রগতিশীল সমাজ পার্টির মতো দল।
রাজনৈতিক শিবিরের মতে, বড় দলগুলি ইদানীং অকারণে ছোট ছোট সংগঠনগুলিকে আর করায়ত্ত করার জন্য ঝাঁপাচ্ছে না। বরং তাদের সঙ্গী হিসাবে পেতে চাইছে। সূত্রের মতে, নব্বই দশকের পর থেকেই উত্তরপ্রদেশে ছোট ছোট আঞ্চলিক রাজনীতির পরিসর তৈরি হয়েছে। ২০০৭ সালে এগুলিকে জোড়া লাগিয়ে ‘সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং’-এর তত্ত্বকে সামনে আনেন দলিত নেত্রী মায়াবতী এবং সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে সরকার গড়েন। সেই সরকারে ব্রাহ্মণ থেকে হরিজন— বিভিন্ন জাতের সমাবেশ ছিল।
সেই মডেলেই খুব ছোট ছোট সামাজিক বর্গ, যারা এত দিন বৃহত্তর রাজনীতির ময়দানে খেলতে নামার সুযোগ পায়নি বা বঞ্চিত হয়েছে, তাদের একসূত্রে গাঁথতে মোদী-যোগীর উদ্যোগ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্রমশ বেড়েছে।
তবে রাজনৈতিক শিবির এ-ও মনে করছে, বিজেপির এই সামাজিক ও রাজনৈতিক জোটের চেষ্টা কখনওই সফল হত না, যদি না প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘লার্জার দ্যান লাইফ’ ভাবমূর্তি এবং হিন্দুত্বের প্রলেপ থাকত। করোনা মোকাবিলায় ব্যর্থতাই হোক বা মূল্যবৃদ্ধি অথবা বেহাল অর্থনীতি— বাইশের ভোটে বিজেপির জন্য কাঁটার খোঁচা এবং সরকার-বিরোধী অসন্তোষ থাকছেই। সে ক্ষেত্রে ছোট ছোট জাতপাত নির্ভর গোষ্ঠীকে হাতে রাখলে বৃহত্তর রাজনৈতিক লড়াইয়ে তাদের সুবিধাই হবে বলে মনে করা হচ্ছে।