সাংবাদিক বৈঠকে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল। শনিবার। পিটিআই
রাজধানীর ইতিহাসে কার্যত নজিরবিহীন ঘটনাটা যে আগামিকাল ঘটছেই, শনিবার সাংবাদিক বৈঠক করে তা জানিয়ে দিলেন অরবিন্দ কেজরীওয়াল। আবগারি দুর্নীতি মামলায় সিবিআই খোদ দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করার পরে প্রশ্ন ছিল, শেষ পর্যন্ত কেজরীওয়াল হাজিরা দেবেন তো? আম আদমি পার্টি (আপ)-এর আহ্বায়ক কেজরীওয়াল আজ নিজেই বলে দিয়েছেন, ‘‘কাল এঁরা আমাকে ডেকেছেন। আমি সিবিআইয়ের কাছে যাব।’’
কাল সকাল ১১টায় কেজরীওয়াল যখন দিল্লিতে সিবিআইয়ের সদর দফতরে যাবেন, তখন তাঁর সঙ্গে থাকবেন দিল্লির সব মন্ত্রী, আপের সব সাংসদ এবং পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান। আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে কাল সিবিআই দফতরের বাইরে দিল্লি পুলিশ এবং আধাসেনা মিলিয়ে এক হাজারেরও বেশি নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েন করা হচ্ছে। রাউস অ্যাভিনিউয়ে আপের দফতরের বাইরেও বসছে ব্যারিকেড।
আজ কেজরীওয়াল সরাসরি বলেছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীজি, কেজরীওয়াল যদি চোর আর দুর্নীতিগ্রস্ত হয়, তা হলে দুনিয়ায় কেউ সৎ নয়।’’ এই আবগারি দুর্নীতির মামলাতেই তাঁর ঘনিষ্ঠ সতীর্থ তথা প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসৌদিয়া তিহাড় জেলে বন্দি রয়েছেন। কেজরীওয়াল আগেই তাঁর দলীয় কর্মীদের জেলে যাওয়ার জন্য তৈরি থাকতে বলেছেন। কিন্তু তিনি নিজে কি সে রকম আশঙ্কা করছেন? কেজরীওয়ালের কথায়, ‘‘বিজেপির লোকেরা তো গত কাল থেকেই সাংবাদিক বৈঠক ডেকে ডেকে বলছেন, কেজরীওয়ালকে গ্রেফতার করা হবে। এখন বিজেপি যদি কেজরীওয়ালকে গ্রেফতার করতে হবে বলে সিবিআই-কে নির্দেশ দিয়ে থাকে, তা হলে সিবিআই তা উপেক্ষা করবে কী করে?’’ যদিও সিবিআই সূত্রের খবর, আবগারি দুর্নীতির তদন্তে যে সমস্ত ফাইল তাদের আতশকাচের নীচে রয়েছে, তার কোথাও কেজরীওয়ালের কোনও সই নেই। তা না হলে আরও আগেই হয়তো তলব করা হত দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে।
বস্তুত, কেজরীওয়ালের এ দিনের আক্রমণাত্মক সাংবাদিক বৈঠকের সুরও সেই এক— প্রমাণ কই? তিনি বলেছেন, মাসের পর মাস তদন্ত, সিসৌদিয়া-সহ অজস্র লোককে গ্রেফতারের পরেও কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি ‘তথাকথিত’ আবগারি দুর্নীতি থেকে পাওয়া একটা পয়সাও দেখাতে পারেনি। কেজরীওয়ালের কথায়, ‘‘তল্লাশিতে যখন কিছু পাওয়া গেল না, ওঁরা বলতে লাগলেন গোয়ার বিধানসভা নির্বাচনে আমাদের প্রচারে ওই টাকা খরচ হয়েছে। এর প্রমাণ কোথায়? আমরা সমস্ত টাকাপয়সা মিটিয়েছি চেকে। যে ১০০ কোটি আমরা পেয়েছি বলছেন, তার থেকে একটা টাকা দেখান।’’ এখানেই থামেননি আপ শীর্ষ নেতা। বলেছেন, ‘‘আমি যদি প্রমাণ ছাড়া বলে দিই যে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ১৭ সেপ্টেম্বর (তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, যা মোদীর জন্মদিন) সন্ধে ৭টায় ১০০০ কোটি টাকা দিয়েছিলাম, আপনারা কি তাঁকে গ্রেফতার করবেন?’’
আদালতে হলফ করে ইডি এবং সিবিআই মিথ্যা বলছে এবং ভুয়ো প্রমাণ দিচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে কেজরীওয়াল বলেছেন, এর জন্য দুই সংস্থার বিরুদ্ধেই মামলা করা হবে। তাঁর অভিযোগ, ভুয়ো স্বীকারোক্তি আদায় করতে অত্যাচারের পথে হাঁটছে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি। এমনকি ‘‘আপনার মেয়ে কী ভাবে কাল কলেজ যায় দেখে নেব’’— এমন ‘গুন্ডাদের মতো’ ভাষায় হুমকিও দিচ্ছে। এই প্রসঙ্গেই তিনি বলেন, সিসৌদিয়া (প্রমাণ লোপ করতে) ১৪টি মোবাইল ফোন নষ্ট করে দিয়েছেন বলে ইডি তার চার্জশিটে অভিযোগ করেছে। কিন্তু তা সত্যি নয়। কেজরীওয়ালের কথায়, ‘‘এর মধ্যে পাঁচটি ফোন সিবিআই আর ইডি-র হেফাজতেই আছে। আমরা অন্য ফোনগুলির বিষয়ে খোঁজ নিয়েছি। সেগুলির অধিকাংশই সক্রিয় আছে এবং কেউ না কেউ ব্যবহার করছেন। ইডি আর সিবিআই তা জেনেও শপথ করে মিথ্যে বলছে। কারণ কোনও আবগারি দুর্নীতি আদৌ হয়নি।’’ উল্টে নয়া আবগারি নীতির পক্ষে সওয়াল করে কেজরীওয়াল দাবি করেছেন, পঞ্জাবে এই নীতিই প্রয়োগ করার ফলে রাজস্ব আদায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে।
সিবিআই-ইডির বিরুদ্ধে কেজরীওয়ালের মামলা করার হুমকি নিয়েই তাঁকে কটাক্ষ করে কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী কিরেন রিজিজু বলেছেন, দোষী সাব্যস্ত হলে আদালতের বিরুদ্ধেই মামলা দায়ের করে দিতে পারেন দিল্লির মু্খ্যমন্ত্রী! সেই সঙ্গে কেজরীওয়ালের একটি সাক্ষাৎকারের অংশ টুইট করে বোঝাতে চেয়েছেন যে, এক কালে ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ বলা নেতাদের সঙ্গেই আপ শীর্ষ নেতা আজ হাত মেলাচ্ছেন। বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র গৌরব ভাটিয়া চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন, কোনও কিছুর ভয় না থাকলে কেজরীওয়াল বরং লাই ডিটেক্টরের মুখোমুখি হয়ে সব কিছু স্পষ্ট করে দিন। কিন্তু তিনি ভয়ে কাঁপছেন।
সিবিআইয়ের তলব পাওয়ার পরে কেজরীওয়ালকে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে যেমন ফোন করেছেন, তেমনই পাশে দাঁড়িয়েছেন আইনজীবী তথা প্রাক্তন কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বল। এ দিন সিব্বল টুইট করেছেন, ‘সিবিআই কেজরীওয়ালকে তলব করার পরে বিজেপি বলছে, আইন নিজের পথে চলছে। আমি বলছি, হেনস্থা নিজের পথে চলছে।’ মুখ্যমন্ত্রীকে সিবিআই তলবের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে সোমবার থেকে দিল্লি বিধানসভার বিশেষ অধিবেশন ডেকেছে আপ সরকার।