আদালতের নির্দেশ মেলার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ ও আধা-সেনা নামিয়ে খোলা হল মণিপুরের জাতীয় সড়ক। নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে যোগ দিলেন আম জনতাও। গত এক মাস ধরে অবরোধ-পাল্টা অবরোধে তাঁদের জীবন নাজেহাল করে তুলেছিল নাগা ও মেইতেই সংগঠনগুলি।
মণিপুরের নাগা অধ্যূষিত এলাকাগুলিকে পৃথক জেলার আওতা থেকে বাদ রাখার দাবিতে ইউনাইটেড নাগা কাউন্সিল দীর্ঘদিন ধরে মণিপুরে আর্থিক অবরোধ চালাচ্ছে। ফলে জিরিবাম ও ডিমাপুরের দিক থেকে পণ্য এবং তেলবাহী ট্রাক-ট্যাঙ্কার ঢুকছিল না মণিপুরে। আবার পাল্টা-অবরোধ করে নাগা এলাকামুখী ট্রাক চলাচলও বন্ধ করে দেন মেইতেইরা। রাজ্য সরকার বার বার বলছিল, অবরোধ সহ্য করা হবে না। কিন্তু বল প্রয়োগ করলে পরিস্থিতি হিংস্র হওয়ার হুমকি দেয় আন্দোলনকারীরা। আন্দোলনের জেরে মণিপুরের দুই সীমায় আটকে ছিল সহস্রাধিক ট্রাক ও ট্যাঙ্কার। বেশ কয়েকটি ট্রাক পোড়ানোও হয়। প্রচুর পণ্য নষ্ট করা হয়। রাজ্যে পেট্রোলের লিটার ৩০০ টাকা ও ডিজেলের দাম ১৫০ টাকা লিটারে পৌঁছেছিল। শেষ হচ্ছিল খাদ্যের জোগানও। শেষ পর্যন্ত বৃহস্পতিবার বিকেলে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে বসা ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্যকে নির্দেশ দেয়, সাধারণ মানুষকে পণবন্দি করে দাবি আদায় চলবে না। এক মাস ধরে দুই জাতীয় সড়ক অবরোধ চলছে। অবিলম্বে তা তুলতে হবে।
এরপরেই নড়েচড়ে বসে সরকার। দুই হাজারেরও বেশি পুলিশ, রিজার্ভ ব্যাটেলিয়ন, সিআরপিএফ, আসাম রাইফেলসের জওয়ানদের সঙ্গে নিয়ে প্রশাসনের কর্তারা অবরোধ হঠাতে নামেন। ভয় ছিল আন্দোলনকারীরা হিংস্রতার রাস্তা নিতে পারে। তাদের সঙ্গে যোগ রয়েছে এনএসসিএন (আইএম)-এর। কিন্তু পুলিশের সহায় হন নাকাল হওয়া আম জনতাই। সব অবরোধ হঠিয়ে খালি করা হয়েছে ইম্ফল-ডিমাপুর রোড। ইতিমধ্যে রাজ্যে পৌঁছেছে পাঁচশোরও বেশি ট্রাক। মণিপুরের ডিজিপি এল এম খাউতে জানান, তিন জন আইজি-র নেতৃত্বে চলে অবরোধ হঠানোর অভিযান। ট্রাকগুলিকে কনভয় করে ইম্ফল আনতে আধা-সেনার সাহায্য নেওয়া হয়। মাও থেকে টাফাও কুকি পর্যন্ত রাস্তায় নিরাপত্তা তদারকের ভার ছিল ছ’জন এসপির অধীনে মণিপুর রাইফেলসের উপরে। আজ চলছে ৩৭ নম্বর জাতীয় সড়ক খোলার কাজ। জেলবন্দি করা হয়েছে ইউএনসির সভাপতি-সহ তিন নেতাকে। পুলিশ যে ভাবে বলপ্রয়োগ করে অবরোধ হঠিয়েছে, তার কড়া নিন্দা করে ইউএনসি বলে, রাজ্য সরকার নাগাদের দাবি এ ভাবে দমন করতে পারবে না। আন্দোলন চলতে থাকবে।