রেশনের টাকা গিয়েছে দুবাইয়ে, জানাল ইডি। —ফাইল চিত্র।
রেশন বণ্টন দুর্নীতির কালো টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে। ওই কালো টাকা মূলত দুবাইয়ে বিভিন্ন সম্পত্তিতে বিনিয়োগ করা হয়েছে বলে আদালতে ফের দাবি করল ইডি। পাশাপাশি, ওই তদন্তকারী সংস্থার দাবি, দুবাই সরকার মারফত এই তথ্য তাদের হাতে এসেছে। দুর্নীতির কালো টাকা হাওয়ালা মারফত দুবাইয়ের বিভিন্ন ব্যবসা ও সম্পত্তিতে বিনিয়োগ করা হয়েছিল বলে তথ্য পাওয়া গিয়েছে।
প্রসঙ্গত, বুধবার বিচার ভবনের বিশেষ সিবিআই আদালতে রেশন বণ্টন দুর্নীতির মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত, জামিনে মুক্ত বাকিবুর রহমান দুবাইয়ের ব্যবসা ও সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিদেশযাত্রার আবেদন করেন। বৃহস্পতিবার সেই আবেদনের শুনানি হয়। এ দিন ইডি-র আইনজীবীরা বাকিবুরের বিদেশযাত্রায় আপত্তি জানিয়ে বলেন, ‘‘রেশন বণ্টন দুর্নীতির কালো টাকা দিয়ে বিদেশে সম্পত্তি কেনার নানা তথ্য আমাদের হাতে এসেছে। বাকিবুরের দুবাইয়ে সম্পত্তি রয়েছে। সেই সম্পত্তির অন্য ভাবে হস্তান্তরিত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিদেশে গিয়ে মামলা সংক্রান্ত নানা তথ্য-প্রমাণ নষ্ট করতে পারেন বাকিবুর। তিনি প্রভাবশালী। জেল হেফাজতে থাকা প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন বাকিবুর।’’
বাকিবুরের আইনজীবীরা বলেন, ‘‘বাকিবুরের ‘রেসিডেন্সিয়াল’ ভিসা রয়েছে। সেটির নবীকরণ করাতে হবে। বিদেশে না গেলে তা বাতিল হয়ে যাবে। তা ছাড়া, সেখানে ওঁর দু’টি সম্পত্তি রয়েছে। শর্ত অনুযায়ী, সেই সম্পত্তির দলিল দুবাই সরকারের কাছে পেশ করতে হবে।’’ এর পরে বিচারক প্রশান্ত মুখোপাধ্যায় বাকিবুরের আইনজীবীদের বলেন, ‘‘বিদেশে যাওয়া যাবে না বলে জামিনে শর্ত দেওয়া রয়েছে।’’ ইডি-র আইনজীবীদের বিচারক বলেন, ‘‘আপনারা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। আপনাদের কাছে কি নথি রয়েছে? অভিযুক্ত জামিনে রয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে অবৈধ ভাবে টাকা পাচার ছাড়া কোনও অভিযোগ নেই।’’
ইডি-র আইনজীবীরা বলেন, ‘‘দুর্নীতির কালো টাকায় ওই সব সম্পত্তি কেনা হয়েছিল। সেই টাকা বাংলাদেশ থেকে হাওয়ালা মারফত দুবাইয়ে পৌঁছেছিল। রেশন বণ্টন দুর্নীতির ঘটনায় অন্যতম মূল চক্রী বাকিবুর।’’ বিচারক দু’পক্ষের বক্তব্য শোনার পরে এ দিন কোনও নির্দেশ দেননি বলে আদালত সূত্রের খবর।
প্রসঙ্গত, রেশন বণ্টন দুর্নীতির মামলায় ধৃত ও পরে জামিনে মুক্ত ব্যবসায়ী বিশ্বজিৎ দাসও বিচার ভবনের বিশেষ সিবিআই আদালতে বিদেশযাত্রার আবেদন করেছিলেন। গত ৮ নভেম্বর সেই আবেদন মঞ্জুর করেন বিশেষ আদালতের বিচারক।
এ দিন রেশন বণ্টন দুর্নীতির মামলায় জেল হেফাজতে থাকা প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রীর জামিনের আবেদন করে তাঁর আইনজীবী বলেন, ‘‘১৩ মাস ধরে উনি জেল হেফাজতে রয়েছেন। উনি অসুস্থ। কলকাতা হাই কোর্ট নির্দেশে জানিয়েছে, অসুস্থ হলে জেল কর্তৃপক্ষ সরকারি অথবা বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করাতে পারে।’’ তবে, এ দিন জ্যোতিপ্রিয়ের জামিনের আবেদনের বিরোধিতায় ইডি-র তরফে কোনও বক্তব্য পেশ করা হয়নি।
প্রসঙ্গত, তদন্তকারী সংস্থাকে না জানিয়েই সম্প্রতি জ্যোতিপ্রিয়কে ই এম বাইপাস সংলগ্ন একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। আদালতে এই বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন ইডি-র আইনজীবীরা। যার প্রেক্ষিতে এ দিন কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশের কথা জানান জ্যোতিপ্রিয়ের আইনজীবীরা। এই মামলার পরবর্তী শুনানি ২৬ নভেম্বর।