ত্রিপলের ছাউনিতেই সংসার। — নিজস্ব চিত্র।
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে আবাস প্রকল্পে উপভোক্তা তালিকা চূড়ান্ত করতে সমীক্ষা করছে জেলা প্রশাসন। এই প্রকল্পেই পাঁশকুড়ার বন্য কবলিত এলাকার বাসিন্দাদের অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল রাজ্য সরকার। আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, তালিকায় নাম না থাকলেও বন্যায় বাড়ি ভেঙে পড়লে আবাস যোজনার মাধ্যমে সরকার তাদের বাড়ি বানিয়ে দেবে। কিন্তু পাঁশকুড়ার পশ্চিম নেকড়ার ১৩ টি পরিবারের অভিযোগ, বন্যায় বাড়ি ভেঙে গেলেও আবাস তালিকায় তাদের ঠাঁই হয়নি। আপাতত ত্রিপলের নীচেই দিন কাটছে ওই পরিবারগুলির। আবাস তালিকায় নাম না থাকার পেছনে কি রয়েছে রাজনীতি? প্রশ্ন যেমন উঠছে, তেমনই মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে নালিশ জানিয়েছেন স্থানীয় সিপিএম সদস্যার।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর পাঁশকুড়া জুড়ে ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় গোবিন্দনগর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা। বন্যায় এলাকার বহু কাঁচা বাড়ি ভেঙে যায়। পাঁশকুড়ায় বন্যা পরস্থিতি পরিদর্শনে এসে ক্ষতিগ্রস্তদের আবাস যোজনার মাধ্যমে পাকার বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই মতো প্রতিটি পঞ্চায়েতের মাধ্যমে আবেদনও জমা নেওয়া হয়। অভিযোগ, এরপরও আবাসের তালিকায় নাম নেই পাঁশকুড়ার গোবিন্দনগর পঞ্চায়েতের পশ্চিম নেকড়ার ১৩টি পরিবারের।
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী যাঁদের মাটির বাড়ি রয়েছে, তাঁরা প্রত্যেকেই আবাসের দাবিদার। তা সত্ত্বেও কেন পরিবারগুলির নাম আগে থেকে আবাস তালিকায় নেই, তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। পশ্চিম নেকড়া এলাকাটি সিপিএমের শক্ত ঘাঁটি। ওই এলাকার বুথটি বরাবর সিপিএমের দখলে থাকে। সেই কারণেই ‘বঞ্চনা’ করা হচ্ছে বলে প্রশ্ন উঠছে। স্থানীয় সিপিএম সদস্যা নিলুফা খাতুন এই অভিযোগের বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে ই-মেল করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমার নির্বাচনী এলাকায় বহু দরিদ্র মানুষের নাম আবাসের তালিকায় নেই। বন্যায় কাঁচা বাড়ি ভেঙে যাওয়ার পরও ক্ষতিগ্রস্তদের আবাসের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে বিষয়টি জানিয়েছি। আমার মনে হয় এই এলাকাটি বামেদের দখলে থাকার জন্য শাসক দল ইচ্ছাকৃতভাবে উপযুক্তদের বঞ্চিত করেছে।’’
সরকারি সাহায্য না পেয়ে এখনও পরিবারগুলি ত্রিপলের ছাউনিতে দিন কাটাচ্ছে। এঁদের মধ্যেই রয়েছে পশ্চিম নেকড়ার বাসিন্দা হাজরা বিবি। তিনি পরিবারের ৬ জন সদস্যকে নিয়ে ত্রিপলের ছাউনিতে রয়েছেন। হাজরা বিবি বলেন, ‘‘২৫ বছর হল বিয়ে হয়েছে। মাটির বাড়িতেই বাস। বাড়ি তৈরির কোনও সরকারি সাহায্য পাইনি। বন্যায় বাড়ি ভেঙে যাওয়ার পর ত্রিপলের ছাউনিতে রয়েছি। বাড়ির জন্য আবেদন জানিয়েছিলাম। কিন্তু তালিকায় আমার পরিবারের কারও নাম নেই।’’ আরেক বাসিন্দা শেখ নুরে আলম বলেন, ‘‘বন্যায় মাটির বাড়ি ভেঙে গিয়েছে। ভাইয়ের বাড়ির ছাদে ত্রিপলের ছাউনিতে পরিবার নিয়ে রয়েছি। আবাসের তালিকায় নাম নেই। কয়েকদিন আগে পঞ্চায়েত অফিসে গিয়ে আবার নথিপত্র জমা দিয়েছি।’’
মাটির বাড়ি থাকা সত্ত্বেও কেন আবাসের তালিকায় নাম নেই? পাঁশকুড়া-১ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি সুজিত রায়ের বক্তব্য, ‘‘আবাসের বাড়ি বণ্টন নিয়ে আমাদের দল রাজনীতি করে না। ২০২১ সালের সংশোধিত তালিকা অনুযায়ী আবাসের সমীক্ষা হচ্ছে। যাঁদের নাম নেই, তাঁরা হয়তো কোনও কারণে সে সময় তালিকায় নাম তুলতে পারেননি। বন্যায় যাঁদের বাড়ি একেবারে ভেঙে গিয়েছে, তাঁদের বলব বিডিওর কাছে লিখিত আবেদন জানাতে।’’