বিজেপির আক্রমণের সামনে এ বার মুখ খুললেন তারুর। —ফাইল চিত্র।
পুলওয়ামা হামলায় নিজেদের ভূমিকার কথা মেনে নিয়েছে পাকিস্তান। তার পর থেকেই কংগ্রেস নেতাদের ক্ষমা চাওয়ার দাবিতে সরব হয়েছে বিজেপি। কিন্তু কীসের জন্য ক্ষমা চাইতে হবে, তা-ই তো বোধগম্য হচ্ছে না বলে এ বার পাল্টা বিজেপিকে একহাত নিলেন কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুর। বিজেপির উদ্দেশে তাঁর প্রশ্ন, একটা মর্মান্তিক ঘটনা নিয়ে রাজনীতি না করে জাতীয় পতাকার সম্মান রাখার জন্য কি ক্ষমা চাইতে হবে?
পুলওয়ামা হামলা নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে চলে আসা রাজনৈতিক তরজায় শনিবার টুইটারে লেখেন তিরুঅনন্তপুরমের সাংসদ তারুর। তিনি লেখেন, ‘ঠিক কীসের জন্য ক্ষমা চাইতে হবে কংগ্রেসকে, বোধগম্য হচ্ছে না। সরকার জওয়ানদের নিরাপত্তা দেবে, সেই প্রত্যাশা রেখে? একটা জাতীয় বিপর্যয়ের রাজনীতিকরণ না করে, জাতীয় পতাকাকে সম্মান জানানোর জন্য? নাকি শহিদ জওয়ানদের পরিবারকে সমবেদনা জানানোর জন্য?’
বিতর্কের সূত্রপাত গত বৃহস্পতিবার। ওই দিন পাক পার্লামেন্টে পুলওয়ামা হামলাকে ইমরান খানের কৃতিত্ব হিসেবে তুলে ধরেন মন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধরি। তিনি বলেছিলেন, ‘‘ঘরে ঢুকে ভারতের উপর আঘাত হেনেছি আমরা। ইমরান খানের নেতৃত্বেই পুলওয়ামার সাফল্য এসেছে।’’ এ নিয়ে শোরগোল শুরু হওয়ায়, পরে সাফাই দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘‘আমার মন্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে। আমি বলেছিলাম, পুলওয়ামার পর আমাদের বিমান ভারতীয় সেনা ছাউনিকে নিশানা করতে সফল হয়। নিরীহ মানুষদের মেরে সাহসিকতা প্রদর্শনে কোনও আগ্রহ নেই আমাদের। সন্ত্রাসী কাজকর্মের তীব্র বিরোধী আমরা।’’
তারুরের টুইট।
আরও পড়ুন: ‘সন্তান হারানোর’ পুলওয়ামা নিয়ে বিরোধীদের তোপ প্রধানমন্ত্রীর
পাক-মন্ত্রীর এই মন্তব্যের পরেই এ দেশের রাজনীতি উত্তাল হয়ে ওঠে। পুলওয়ামা হামলা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় গোটা দেশের সামনে কংগ্রেসকে ক্ষমা চাইতে হবে বলে বিজেপির তরফে দাবি ওঠে। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেও তোপ দাগেন গেরুয়া শিবিরের শীর্ষ নেতৃত্ব। শনিবার সর্দার বল্লভভাই পটেলের ১৪৫তম জন্মবার্ষিকীতে তা নিয়ে বিরোধীদের নিশানা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। তিনি বলেন, ‘‘সন্তানহারা হয়ে গোটা দেশ শোকে বিহ্বল হয়ে পড়েছিল। কিছু মানুষ সেই শোকে শামিল ছিলেন না। পুলওয়ামা হামলা নিয়ে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির রাস্তাই খুঁজছিলেন তাঁরা।’’
এর আগে, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামা হামলার বর্ষপূর্তিতে মোদী সরকারকে নিশানা করেছিলেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গাঁধী। পুলওয়ামা হামলায় কারা সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। হামলার তদন্ত কত দূর এগিয়েছে, তা দেশবাসীকে জানাতে হবে বলেও দাবি তোলেন। সেই সময়েও রাহুলকে সমর্থন জানিয়েছিলেন তারুর। এক বছর কেটে গেলেও পুলওয়ামা তদন্তের কোনও কিনারা হয়নি। এটা শহিদ জওয়ানদের পক্ষে চরম অবমাননাজনক বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আরও পড়ুন: নীতীশের দুর্নীতি নিয়ে মোদীর বক্তৃতা বিহার ভোটে প্রচারের হাতিয়ার তেজস্বীর
তবে একা তারুরই নন, পাক-মন্ত্রীর পুলওয়ামা জবানবন্দি নিয়ে বিজেপি যে ভাবে তাদের আক্রমণ করতে শুরু করেছে, তাতে তীব্র আপত্তি জানিয়েছে বিরোধীরা। তাদের যুক্তি, লোকসভা নির্বাচনের আগে পুলওয়ামা এবং তার পরে বালাকোটের নামে ভোট আদায় করতে নেমে পড়ে বিজেপি। তাই বিরোধীরা পুলওয়ামা নিয়ে রাজনীতি করেছে, এই অভিযোগ একেবারে ভিত্তিহীন।