ফাইল চিত্র।
দেশের প্রতিষেধকের ভাঁড়ারে যাতে টান না পড়ে, সে দিকে নজর রেখেই বিভিন্ন দেশে প্রতিষেধক পাঠানো হচ্ছে। আজ এমনই দাবি করলেন বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা সব সময়েই মাথায় রাখি, প্রতিষেধকের ঘরোয়া চাহিদা কী রকম রয়েছে। কিছু দিন অন্তর সেটার মূল্যায়ন করা হয়। আপাতত বিদেশে প্রতিষেধক রফতানির প্রশ্নে কোনও নিষেধাজ্ঞা জারি হয়নি।’’
কেন্দ্র জোগান দিতে ব্যর্থ হওয়ায় রাজ্যগুলির ভাঁড়ারে প্রতিষেধক বাড়ন্ত বলে সম্প্রতি অভিযোগ করছে মহারাষ্ট্র, ওড়িশা এবং তেলঙ্গনা সরকার। যদিও কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে এই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে গত কালই। তবে এ বার প্রতিষেধক কূটনীতির ক্ষেত্রে ঘরোয়া চাহিদার প্রশ্নটিকে আরও বেশি করে গুরুত্ব দেওয়া হবে, এমন ইঙ্গিতও পাওয়া গিয়েছে সাউথ ব্লকের কাছ থেকে।
কূটনৈতিক সূত্রের মতে, অতিমারি আক্রান্ত বিশ্ব ব্যবস্থায় প্রতিষেধকের মাধ্যমে আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তারের যে রাস্তা তৈরি হয়েছে, তার থেকে পিছিয়ে আসা মূর্খামি। এই সুযোগ একই ভাবে কাজে লাগাচ্ছে চিন। ভারতকে ‘বিশ্বের ঔষধাগার’ বলে প্রচার করছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। এর বিনিময়ে যথেষ্ট কূটনৈতিক সুবিধা পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তাঁর সরকার।
বিদেশ মন্ত্রকের বক্তব্য, গত কালই প্রতিবেশী দেশ শ্রীলঙ্কা তাদের মন্ত্রিসভার বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তারা চিনের প্রতিষেধক ব্যবহার না করে ভারত এবং রাশিয়ার পাঠানো প্রতিষেধক ব্যবহার করবে। ঘরোয়া ভাবে বিষয়টিকে দিল্লি তার কূটনৈতিক জয় বলেই মনে করছে। শ্রীলঙ্কার চিনা প্রতিষেধক ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত কিন্তু গুণগত মানের কারণে নয়। মাহিন্দা রাজাপক্ষে সরকারের উপর এমনিতেই বিরোধী দলের চাপ রয়েছে তাদের অতিরিক্ত ‘চিনপন্থী বিদেশনীতি’ নিয়ে। এরই মধ্যে চিনের একটি নীতিতে শ্রীলঙ্কার আবেগ আহত হয়েছে। বেজিং শ্রীলঙ্কায় বসবাসকারী চিনাদেরই শুধু প্রতিষেধক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিষয়টিতে শ্রীলঙ্কাবাসীর যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে, তা সামাল দিতেই রাজাপক্ষে সরকারকে চিনা প্রতিষেধক নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।
বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, এই সুযোগ পুরোপুরি কাজে লাগিয়ে দ্বীপরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্কের অগ্রগতি ঘটাতে তৎপর হওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে ভারতের পক্ষে। একই ভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিষেধক কূটনীতি ভারতের জন্য খুবই ইতিবাচক বলে সাউথ ব্লকের ধারণা। প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক ঢাকা সফরে, সে দেশের প্রতিটি কূটনৈতিক স্তরে ভারতের পাঠানো প্রতিষেধকের উল্লেখ করে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে হাসিনা সরকার এবং আওয়ামি লিগ। এই মুহূর্তে সে দেশেও কোভিড পাল্লা দিয়ে বাড়ছে এবং প্রতিষেধকের ভাঁড়ার খালি। এখনই না হলেও দেশের পরিস্থিতি সামাল দিয়ে তার পরে বাংলাদেশে আরও প্রতিষেধক রফতানির কথা ভাবছে ভারত।