লোকসভায় মহিলা সংরক্ষণ বিল পাশ হওয়ার পর সাংসদদের উচ্ছ্বাস। ছবি: পিটিআই।
লোকসভায় মহিলা সংরক্ষণ বিল বুধবার পাশ হয়ে গেল ঠিকই, কিন্তু এ দিন সকালেও বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠকে বিলটিকে যৌথ সংসদীয় কমিটিতে (জেপিসি) পাঠানোর পক্ষে সরব হয় এসপি, আরজেডি-র মতো দলগুলি। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে মহিলা সংরক্ষণ বিলের বিরোধিতায় সওয়াল করেছে তারা। কিন্তু এতে ভুল বার্তা যাওয়ার আশঙ্কায় এসপি ও আরজেডি-র ওই দাবি খারিজ করে দেন কংগ্রেস ও তৃণমূল নেতৃত্ব। সূত্রের দাবি, রাজ্যসভাতেও এই বিল পাশে বাধা হবে না বিরোধী জোট।
এর পরে এ দিন সংসদে আলোচনায় জেপিসির দাবি না উঠলেও, বিলটিতে দলমত নির্বিশেষে ওবিসি মহিলাদের জন্য সংরক্ষণের দাবি তোলেন বিরোধীরা। দাবি ওঠে জাতিগত জনগণনার। যেমন, বিতর্কের শুরুতেই বলতে উঠে সনিয়া গান্ধী বিল আনার উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও ওবিসি মহিলাদের সংরক্ষণের দাবিতে সরব হন। একই সুর রাহুল গান্ধীর গলাতেও। তবে শেষ পর্যন্ত ওবিসি সংরক্ষণের দাবি মানেনি সরকার।
আবার সরকারের এই উদ্যোগকে ‘লোক দেখানো’র তকমা দিয়ে জেডিইউ সাংসদ রাজীব রঞ্জন সিংহ বলেন, ‘‘সরকার সত্যিই মহিলাদের উন্নয়নে আন্তরিক হলে, অনেক আগেই এই বিল নিয়ে আসত। ‘ইন্ডিয়া’র শক্তিবৃদ্ধি দেখে ভয় পেয়েছে মোদী সরকার। তাই এখন এই বিল এনেছে। যা আদতে ‘জুমলা’।’’ এসপি সাংসদ ডিম্পল যাদবের প্রশ্ন, ‘‘কবে হবে এই আইন প্রয়োগ? (ভোটমুখী) পাঁচ রাজ্যের বিধানসভায়? লোকসভায়? না কি পরের লোকসভায়?’’ সেই সঙ্গে ওবিসি ও সংখ্যালঘু মহিলাদের সংরক্ষণের দাবি তোলেন তিনি।
দিনের শুরুতে বিরোধী জোটের বৈঠকে এসপি নেতা রামকৃপাল যাদব আবার বিলটিকে জেপিসি-তে পাঠানোর পক্ষে সওয়াল করেন। সমর্থন করেন আরজেডি নেতৃত্ব। কিন্তু কংগ্রেস আপত্তি জানায়। তৃণমূলের লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দেন, বিলের বিরোধিতা করলে জনমানসে ভুল বার্তা যাবে। উল্টো দিকে নিজের বক্তব্যে ‘ইন্ডিয়া’ জোটে বিভাজন ঘটাতে তৎপর হন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। প্রায় এক দশক পিছিয়ে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘২০১২ সালে ইউপিএ আমলে মহিলা সংরক্ষণ ও পদোন্নতি সংক্রান্ত বিলটি ভি নারায়ণস্বামী পেশ করতেই লাফ দিয়ে উঠে তা ছিঁড়ে ফেলেন এসপি সাংসদ যশবীর সিংহ। সেই সময়ে নিজের আসন থেকে উঠে এসপি সাংসদের কলার চেপে ধরেন সনিয়া গান্ধী।’’
নিশিকান্তের দাবি, সেই সময়ে তিনিই বিরোধী বেঞ্চ থেকে উঠে এসে সনিয়াকে আটকান। তিনি নাকি সেই সময়ে সনিয়াকে বলেছিলেন, ‘‘আপনি স্বৈরাচারী বা রানি নন যে এমন হিংসাত্মক ভঙ্গিতে আক্রমণ করবেন। নিশিকান্তের দাবি, ‘‘পরে এসপি সুপ্রিমো (এখন প্রয়াত) মুলায়ম সিংহ যাদব প্রকাশ্যে বলেছিলেন, নিশিকান্ত না থাকলে তাঁর দলের সাংসদ মারা পড়তেন।’’ এই অভিযোগের কোনও জবাব দেয়নি এসপি বা কংগ্রেস। বিরোধীদের বক্তব্য, ‘ইন্ডিয়া’য় ভাঙন ধরাতেই এ ধরনের অতীতের ঘটনা রং চড়িয়ে পরিবেশন করেছেন নিশিকান্ত।