জোটসঙ্গী শিবসেনাকে অস্বস্তিতে ফেলে দিয়ে এনসিপি নেতা শরদ পওয়ারকে পদ্মবিভূষণ পুরস্কার দিল নরেন্দ্র মোদীর সরকার।
মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে আদায়-কাঁচকলায় সম্পর্ক এনসিপি ও শিবসেনার। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে শরদ পওয়ারকে পুরস্কার দেওয়াটা বিশেষ অর্থবহ বলে মনে করছেন রাজনীতির লোকজন। মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে দীর্ঘদিনের জোটসঙ্গী হয়েও শিবসেনা সুযোগ পেলেই বিজেপির উপরে চাপ তৈরির পথে হাঁটে। নোট বাতিল শুধু নয়, তার আগেও নানা সময়ে মোদীর বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে প্রকাশ্যেই সমালোচনা করেছে শিবসেনা। মনে করা হচ্ছে, শিবসেনাকে পাল্টা চাপে রাখতেই পওয়ারকে বেছে নেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া, সামনেই মহারাষ্ট্রে মুম্বই-সহ পুরসভাগুলির নির্বাচন। তার আগে পওয়ারকে পুরস্কৃত করে এনসিপি নেতৃত্বকেও বার্তা দেওয়ার চেষ্টা হল।
আগামী সপ্তাহ থেকে সংসদের বাজেট অধিবেশন। নোট বাতিলের প্রশ্নে এই অধিবেশনও ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে পুরোদস্তুর। রাজ্যসভায় গরিষ্ঠতাও নেই বিজেপির। এই পরিস্থিতিতে বিরোধী শিবিরের অন্যতম বড় নেতা শরদ পওয়ারকে ওই সম্মান দেওয়ার পিছনে মোদীর সুনির্দিষ্ট চিন্তাভাবনা রয়েছে বলেও মনে করা হচ্ছে।
সরকারি ভাবে অবশ্য বলা হচ্ছে, এর পিছনে কোনও রাজনীতি নেই। সামাজিক জীবনে এত দিন কাজ করার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে শরদ পওয়ারকে। তবে বিজেপি শিবির বলছে, ব্যক্তিগত স্তরে নরেন্দ্র মোদী থেকে অরুণ জেটলি— বিরোধী শিবিরের তাবড় নেতাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে পওয়ারের। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পওয়ারের সম্পর্ক বরাবরই খুবই ভাল। গত নভেম্বর মাসে নোট বাতিলের পরে বিরোধীরা যখন সরকারকে তীব্র ভাবে আক্রমণ শানাচ্ছে, সেই সময়েও পওয়ারের আমন্ত্রণে তাঁর একটি ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানে পুণেতে হাজির থেকেছেন প্রধানমন্ত্রী।
এ দিন মরণোত্তর পদ্মবিভূষণ ঘোষণা করা হয়েছে মেঘালয়ের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার পি এ সাংমার উদ্দেশে। এ ছাড়া, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের মধ্যে পদ্মবিভূষণ পেয়েছেন মুরলীমনোহর জোশী। এই সরকারের শুরুর দিকে ঘোষিত মোদী-বিরোধী হিসেবে সরব ছিলেন তিনি। পরে অবশ্য মোদী-বিরোধিতা থেকে সরে আসেন। গত কয়েক মাস ধরে জোশী নিয়মিত ভাবে নাগপুরে সঙ্ঘের সদর দফতরে গিয়ে তাঁকে রাষ্ট্রপতি করার জন্য তদ্বির করে গিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে জোশীকে পদ্মসম্মান দেওয়ার পিছনেও একটি বার্তা রয়েছে বলে মনে করছেন বিজেপি শিবিরের অনেকে। তা হল, মোদী সরকার জোশীকে বুঝিয়ে দিতে চাইল যে, তাঁকে তাঁর প্রাপ্য সম্মান বুঝিয়ে দেওয়া হল। ভবিষ্যতে তিনি যেন রাষ্ট্রপতি হওয়ার দৌড় থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখেন। দীর্ঘদিনের কংগ্রেস নেতা প্রণব মুখোপাধ্যায় অবশ্য রাষ্ট্রপতি হয়েছেন পদ্ম-সম্মানে ভূষিত হওয়ার পরেই।