ফের কেঁপে উঠল আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ। —প্রতীকী চিত্র।
প্রথম কম্পন ভোর ৫টা ১৪ মিনিটে। বেলা ৩টে ৪৪ মিনিটে অনুভূত হয় শেষ কম্পন। সোমবার ভোর সওয়া ৫টা থেকে বিকেল পৌনে ৪টে পর্যন্ত সাড়ে দশ ঘণ্টার মধ্যে মোট ২০ বার কেঁপেছে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ। তার মধ্যে সকালের দু’ঘণ্টায় কম্পন হয় ন’বার! ওই সব কম্পনের শক্তি নেহাত কম নয়। রিখটার স্কেলে ৪.৭ থেকে ৫.২ মাত্রার (মাঝারি) কম্পনে আতঙ্ক ছড়িয়েছে দ্বীপপুঞ্জে।
আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ এমনিতেই ভূকম্পপ্রবণ। ছোটখাটো কম্পন লেগেই থাকে। তবে সাড়ে দশ ঘণ্টায় ২০ বার কম্পনের ঘটনা বেশি ঘটে না। জাতীয় ভূমিকম্প সর্বেক্ষণ কেন্দ্রের খবর, এ দিন প্রথম কম্পনের শক্তি ছিল রিখটার স্কেলে ৪.৯। কয়েক মিনিট পরে হয় পাঁচ শক্তির একটি কম্পন। কিছু ক্ষণ বিরতি দিয়ে ফের কম্পন অনুভূত হয় আরও সাত বার। সকালে দু’ঘণ্টার শেষ কম্পন অনুভূত হয় ৭টা নাগাদ। শক্তি ছিল ৫.২।
ভূমিকম্প সর্বেক্ষণ কেন্দ্রের বিজ্ঞানী জিয়া লাল গৌতম জানান, এ দিনের প্রতিটি কম্পনের উৎস সুমাত্রা অঞ্চলের একটি ‘চ্যুতি’। ভূপদার্থবিদেরা জানান, সুমাত্রার ওই চ্যুতি থেকে লাগাতার ভূমিকম্প হয়েই চলেছে। একটা-দু’টো কম্পন হচ্ছে রোজই। কোনওটা মানুষ বুঝতে পারছেন, কোনওটা অনুভবে ধরা দিচ্ছে না। দু’-তিন-চারটি কম্পন এক দিনে হতেই পারে। তা বলে ২০টা!
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
গৌতমের ব্যাখ্যা, ওই চ্যুতির জায়গাটা যখন বেশি অস্থির হয়ে যায়, তখন পরপর বেশ কয়েকটা কম্পন হয়। এ বারেই প্রথম নয়। ২০১২ সালেও ওই চ্যুতি থেকে পরপর অনেক কম্পন হয়েছিল।
আন্দামান-সুমাত্রা অঞ্চলে মাটি ও সমুদ্রের নীচের ভূস্তর কতটা অস্থির হয়ে রয়েছে, এই লাগাতার কম্পনই তার ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন আইআইটি খড়্গপুরের ভূপদার্থবিদ শঙ্করকুমার নাথ। তিনি বলেন, ‘‘এই লাগাতার কম্পনে এক দিকে ভাল হল। মাটির নীচে বিভিন্ন প্লেটের লাগাতার ধাক্কাধাক্কিতে যে-বিপুল পরিমাণ শক্তি সঞ্চিত ছিল, তার অনেকটাই বেরিয়ে এসেছে।’’ এর ফলে পরের কোনও বড় ভূমিকম্পের শক্তি কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে ওই ভূপদার্থবিদের অনুমান।
অনেক ভূপদার্থবিদ জানাচ্ছেন, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে আন্দামানে বড় ধরনের ভূমিকম্প হতে পারে। এ দিনের এই কম্পন তারই পূর্বাভাস। তবে সেই বড় ভূমিকম্প যে আজ-কালের মধ্যেই হবে, তা নয়। ১০-১২ বছর পরেও হতে পারে।
আন্দামানে শেষ বড় ভূকম্প হয় ২০০৪ সালের ডিসেম্বরে। সমুদ্রের নীচে ৯.২ মাত্রার সেই কম্পনে সুনামির সৃষ্টি হয়েছিল। এক দিকে ভূমিকম্প, অন্যদিকে সুনামি— জোড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগে সব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল আন্দামান। সেই ভূকম্পের জেরে গোটা এলাকায় মাটির নীচে অস্থিরতা বহু গুণ বেড়ে গিয়েছে। তার ফলে ছোট ছোট কম্পন হয়েই চলেছে বলে জানাচ্ছেন ভূপদার্থবিদেরা।
দিনে দু’-তিন বার কম্পন আন্দামানবাসীর গা-সওয়া। পরপর ৪০টি কম্পনে তাঁরা কতটা আতঙ্কিত?
পোর্ট ব্লেয়ারের ২৮ বছরের বাসিন্দা কৃষ্ণ সাহা বললেন, ‘‘আমরা তো কয়েকটি কম্পন তেমন বুঝতেই পারিনি। তেমন বড় কিছু হয়নি।’’ পরে সরকারি অফিসের গিয়ে কৃষ্ণবাবু শোনেন, সকালের দু’ঘণ্টায় ন’বার কেঁপেছে আন্দামান।
কলকাতা থেকে আন্দামানে বদলি হওয়া এক পদস্থ সরকারি আমলা দ্বীপভূমিকে এক দিনে এত বার কাঁপতে দেখে বেশ অবাক। তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘ছোট-বড় মিলিয়ে ২৪টি কম্পন রেকর্ড করা হয়েছে এদিন। শেষ কম্পনটি হয়েছে। বেলা একটা নাগাদ। তার পরে অবশ্য আর হয়নি।’’ তবে বেশ দুশ্চিন্তা নিয়েই তিনি রাতে ঘুমোতে যাচ্ছেন বলে জানালেন ওই সরকারি আমলা।