Sikkim Death

সিকিমের পাহাড়ি খাদ ছিনিয়ে নিল মা-মেয়েকে

গ‍্যাংটকের হাসপাতালে পায়ে চোট নিয়ে চিকিৎসাধীন, স্ত্রী, কন‍্যাহারা শোভনের সঙ্গে রবিবার সন্ধ‍্যায় ভিডিয়ো কলে কথা বলে আনন্দবাজার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৮:৪৪
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

বছরের একেবারে শেষে এসে এত বড় অঘটনের জন‍্য তৈরি ছিল না নিউ ব্যারাকপুরের সুকান্ত পল্লি। স্থানীয় শাসমল পরিবারের ছেলে পেশায় গৃহশিক্ষক শোভন শাসমলের স্ত্রী ২৯ বছরের পায়েল শাসমল এবং আড়াই বছরের কন‍্যা শ্রীনিকাকে সিকিমের পাহাড়ি খাদ এ ভাবে ছিনিয়ে নেবে কে ভাবতে পেরেছিল! বড়দিনের আগে পাঁচ জন বাঙালির মতোই পাহাড়ে বেড়াতে গিয়েছিলেন তাঁরা। শনিবার সন্ধ‍্যায় সিকিমের পাকিয়ং জেলার লামাটেনের সড়ক দুর্ঘটনা মা, মেয়েকে চিরতরে কেড়ে নিয়েছে। জুলুকের হোমস্টেয় ফেরার পথে আরিয়াটর এবং রোলেপের মধ্যে গাড়ি খাদে পড়ে। পায়েল ঘটনাস্থলেই এবং শ্রীনিকা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মারা যান বলে তাঁদের পরিবার সূত্রে খবর।

Advertisement

গ‍্যাংটকের হাসপাতালে পায়ে চোট নিয়ে চিকিৎসাধীন, স্ত্রী, কন‍্যাহারা শোভনের সঙ্গে রবিবার সন্ধ‍্যায় ভিডিয়ো কলে কথা বলে আনন্দবাজার। তিনি শুধু বলে চলেছেন, “বেড়াতে এসে আমার সব হারিয়ে ফেললাম! প্রশাসনকে একটাই অনুরোধ, যদি এয়ার অ‍্যাম্বুল‍্যান্সে করে আমার স্ত্রী, কন‍্যার দেহ নিয়ে আসা যায়।” মৃতা মা, মেয়ের দেহ আজ, সোমবার কলকাতায় নিয়ে আসা হতে পারে বলে বাড়ির লোক শুনেছেন। তবে শোভন কবে আসবেন তা এখনও পরিষ্কার নয়। শোভন ফেরার পরেই মৃতদের শেষকৃত্য সারার কথা। তবে সুকান্তপল্লির ওই পাড়ায় দুর্ঘটনাগ্রস্তদের বাড়িতে
রাতেও পড়শিদের ভিড়। শোভনের বাবা প্রতাপ স্নায়বিক অসাড়তায় কার্যত ঘরবন্দি। মা পিয়ালিও স্নায়ুর অসুখে ভুগছেন। পিয়ালি কোনওমতে বলেন, “বছর সাতেক আগে ছেলের বিয়ে হল। ফুটফুটে একটা নাতনিকে পেয়েছিলাম। সুন্দর সুখের সংসার তছনছ হয়ে গেল। আমার বাড়ি পুরো খালি হয়ে গেল।” শ্রীনিকা সবে প্লে স্কুলে ভর্তি হয়েছিল। মধ‍্যমগ্রামে পায়েলের বাপের বাড়িতেও খবর দেওয়া হয়েছে। বেড়াতে যাওয়ার পরেও মাকে বার বার ফোনে বেড়ানোর খবর দিচ্ছিলেন শোভনেরা। খুব ভাল বেড়ানো হচ্ছে বলে খুশিতে মশগুল ছিলেন তাঁরা। হঠাৎ অভাবনীয় দুঃসংবাদে পরিবার, পরিজন এখন পুরোপুরি বিপর্যস্ত।

নতুন বছরে ২ জানুয়ারি ফেরার কথা ছিল শোভন-পায়েলদের। শোভনের মামাতো দাদা অভিজিৎ ঘোষ, তাঁর স্ত্রী অমৃতা এবং তাঁদের মেয়ে অভিমিত্রা ঘোষও এক সঙ্গে বেড়াতে যান। অভিজিৎদের বাড়ি শিয়ালদহে। জানা গিয়েছে, গাড়িতে শোভন, পায়েলরা মেয়েকে নিয়ে পিছনে বসেছিলেন। গাড়ি যখন খাদে পড়তে থাকে তখন শোভনের মামাতো দাদা অর্থাৎ অভিজিৎ তাঁর মেয়েকে জানলা দিয়ে বাইরে বার করে দেন। বাকিরা গাড়িসুদ্ধ খাদের মধ্যে পড়েন। সবাই চোট পান। স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁদের উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে
তাঁদের গ্যাংটকের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

Advertisement

শোভনের বাড়ির উল্টো দিকের বাসিন্দা শোভনের বন্ধু বিকাশ সিংহ জানান, শনিবার রাত ১১টা নাগাদ শোভনের মামাতো দাদার বাড়ি থেকে খবর আসে যে ওঁদের গাড়ি সিকিমের খাদে পড়েছে । পায়েল এবং শ্রীনিকা দু’জনেই মারা গিয়েছেন। বিকাশ বলেন , “শোভনের মা, বাবা দু’জনেই অসুস্থ। তাঁদের কী ভাবে খবরটা দেব বুঝে উঠতে পারছিলাম না। রবিবার সকালে ওঁদের জানানো হয়। পায়েলের বাড়ি মধ্যমগ্রাম। সেখানেও খবর দেওয়া হয়েছে।”

সকাল থেকেই শোভনদের বাড়ির সামনে জটলা করেছিলেন প্রতিবেশীরা। কী ভাবে দেহ আসবে, শোভন কবে আসবেন রাত ১০টার সময়েও থমথমে মুখে খোঁজখবর নিচ্ছিলেন পড়শিরা। এলাকার বাসিন্দা তথা শোভনের বন্ধু সন্দীপ রায় এবং তপন ঘোষ বলেন, “বাচ্চাটার কথা ভেবে বুক ভেঙে যাচ্ছে। রাস্তা দিয়ে যখনই যেতাম, বারান্দা থেকে আমাদের ডাকত। এমন ফুটফুটে বাচ্চাটাকে আর দেখতে পাব না!
এটা আমরা কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement