প্রসঙ্গ: ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক
Shivshankar Menon

‘নেতাদের লাভের জন্য সম্পর্ক নষ্ট হলে লজ্জার’, মুখোমুখি শিবশঙ্কর মেনন 

প্রাক্তন এনএসএ এবং বিদেশসচিব শিবশঙ্কর মেননের সঙ্গে কথা বললেন অগ্নি রায়ভারতের বিভিন্ন সরকার ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে যে ঘনিষ্ঠ এবং গঠনমূলক সহযোগিতার কাঠামো তৈরি করেছে, তা যদি  প্রভাবশালী ভারতীয় নেতাদের আঞ্চলিক রাজনৈতিক লাভের জন্য দেওয়া বিবৃতিতে নষ্ট হয়ে যায়, তবে তা লজ্জার।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০২০ ০৪:৩৩
Share:

শিবশঙ্কর মেনন

প্রশ্ন: গালওয়ান কাণ্ডের জেরে ভারত-চিন সম্পর্কের আমূল বদল হতে চলেছে বলে মনে হয় ? চিন-নীতিকে নতুন চোখে দেখার সময় এল?

Advertisement

উত্তর: আমার বিশ্বাস, লাদাখের ঘটনাবলি অবশ্যই ভারত-চিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে ফের নতুন করে খতিয়ে দেখার কথাই বলছে। সাম্প্রতিক অতীতে বেজিং-এর আচরণগত যে নকশা আমরা দেখেছি, লাদাখের ঘটনা তার থেকে কিছুটা অন্য রকম। যদিও দোরগোড়ায় চলে আসা সঙ্কটের এখন সমাধান হয়নি, সেটা হওয়ার পর দু’পক্ষই সুযোগ পাবে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে নতুন করে সাজানো বা শুরু করার। কারণ, গত কয়েক বছর ধরে এই সম্পর্ক নিয়ে অসন্তোষ ক্রমশ বাড়ছে বই কমছে না।

প্রশ্ন: গালওয়ান সঙ্কটের সঙ্গে জম্মু ও কাশ্মীরকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করার সম্পর্ক রয়েছে বলে মনে করেন ?

Advertisement

উত্তর: ভারতে অনেকেই এই তত্ত্বে বিশ্বাসী এবং অনেকে বলছেনও সে রকম। তবে আমি কিন্তু শুনিনি চিনকে এ রকম কিছু বলতে। এটা ঠিকই যে গত বছরে লাদাখ এবং জম্মু, কাশ্মীরকে কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে পরিণত করার পর চিন প্রতিক্রিয়া জানায় সরকারি বিবৃতি দিয়ে এবং ৪০ বছরে প্রথম বার রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে কাশ্মীর প্রসঙ্গ তোলে। এ ব্যাপারেও কোনও সন্দেহ নেই যে ভারত সরকারের ওই পদক্ষেপ চিনকে অখুশি করেছিল। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি এটা মনে করি না যে লাদাখ সংলগ্ন প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় (এলএসি) যেভাবে, যা যা চিন করেছে বা করছে, সেটা ওই অসন্তোষেরই পরবর্তী বার্তা দেওয়ার জন্য করছে।

প্রশ্ন: এখন কী করণীয় বলে মনে হয়?

উত্তর: চিন যখনই আমাদের কাছ থেকে আরও জমি কাড়তে উদ্যত হয় বা দু’পা এগিয়ে আসে, তখন একটাই কাজ করার— লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার স্থিতাবস্থা ফের আগের জায়গায় নিয়ে যাওয়া। একমাত্র তার পরই যে পক্ষের যা মতবিরোধের বিষয় রয়েছে তা নিয়ে আলোচনা শুরু করা যেতে পারে। সীমান্তে সেনা সমাবেশ কমানো ইত্যাদি তারপরই কাজে আসবে, যদি ওই প্রথম লক্ষ্যপূরণের প্রশ্নে সাফল্য আসে।

প্রশ্ন: ‘দু’কদম এগিয়ে এক কদম পিছোনো’ – এটাই চিনের গড়পড়তা নীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিজেদের জমি না ছেড়ে এ ক্ষেত্রে কী ভাবে পরিস্থিতির মোকাবিলা সম্ভব।

আরও পড়ুন: ভিডিয়ো আক্রমণ রাহুলের, আসরে বিজেপি সভাপতি

উত্তর: ভারতের সেনা এবং সরকার জানে কী করতে হবে। কৌশল এবং রণনীতির ক্ষেত্রে সরকারের হাতে কী কী সমাধান রয়েছে, তা নিয়ে আমাদের মন্তব্য করা সমীচীন নয়।

প্রশ্ন: একটু অন্য প্রসঙ্গে আসি। এনআরসি নিয়ে ভারতের ভূমিকায় ঢাকা দৃশ্যতই অসন্তুষ্ট। বিশেষ করে এক জন প্রভাবশালী কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বিশেষ মন্তব্য (বাংলাদেশের অনুপ্রবেশকারীরা উইপোকা) নিয়ে। আপনি কী ভাবে দেখছেন ?

উত্তর: যে ভাবে এই গোটা বিষয়টিকে তুলে ধরা হয়েছে, দেশের অভ্যন্তরে এই নিয়ে বিতর্কের সময়ে এবং সিএএ-এনআরসি-র বিরুদ্ধে প্রতিবাদের সময় যা যা বলা এবং করা হয়েছে, তাতে বাংলাদেশের অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং সংবাদমাধ্যমে তাঁদের অসন্তোষ ব্যক্ত করেছেন। ভারতের বিভিন্ন সরকার ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে যে ঘনিষ্ঠ এবং গঠনমূলক সহযোগিতার কাঠামো তৈরি করেছে, তা যদি প্রভাবশালী ভারতীয় নেতাদের আঞ্চলিক রাজনৈতিক লাভের জন্য দেওয়া বিবৃতিতে নষ্ট হয়ে যায়, তবে তা লজ্জার।

প্রশ্ন: গত এক দশক ধরে কেন্দ্রীয় সরকারের সব রকম উদ্যোগ সত্ত্বেও তিস্তার জল গড়াচ্ছে না ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে। আপনি এক সময় নিজে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন জট ছাড়ানোর জন্য। কোথায় সমস্যা থেকে যাচ্ছে?

উত্তর: মানুষের মনে যা-ই থাক, প্রাকৃতিক কারণে তিস্তা বয়েই চলবে! তবে এটি ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে একটি বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে তার কারণ আমরা দু পক্ষই তিস্তার জলের অধিকার চাইছি কিন্তু নদীতে মোট কতটা জল থাকছে তা নিয়ে আমরা একমত নই। বিষয়টি নিয়ে যুক্তিপূর্ণ ভাবে আলোচনার জন্য আমরা প্রস্তাব দিয়েছিলা, ১৫ বছরের অর্ন্তবর্তী চুক্তি করতে, যাতে উভয় পক্ষ একসঙ্গে যৌথ ভাবে জলের স্রোত মাপতে পারে এবং ৫০ শতাংশ জল ব্যারাজে থাকে। অন্য ভাবে বলা যায়, জলের ভাগাভাগি না করেও ওই চুক্তির মাধ্যমে, যে রকমই স্রোত থাক বাংলাদেশকে জল দেওয়া — যখন স্রোত বেশি থাকবে, তখন বেশি, যখন স্রোত কম থাকবে তখন কম জল পাবে বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে আমাদের জলের ব্যবহারকেও স্বীকৃতি দেওয়া হবে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই চুক্তিতে রাজি হয়েও শেষ মুহূর্তে নিজেদের মন পরিবর্তন করে। এই কারণেই কোনও চুক্তি করা সম্ভব হল না। এই সবের ফলে জল বয়ে চলেছে ঠিকই কিন্তু আমরা ঐকমত্যের ধারেকাছে পৌঁছাতে পারছি না।

প্রশ্ন: গত কয়েক মাসে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাকে (এনএসএ) নতুন ভূমিকায় আমরা দেখছি। এনএসএ অজিত ডোভাল দিল্লির সাম্প্রদায়িক হিংসাস্থলে যাচ্ছেন, তবিলিঘি জামাতের প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করছেন করোনা সঙ্কটের সময়ে। এ ব্যাপারে প্রাক্তন এনএসএ হিসাবে আপনার কী মত ?

উত্তর: এনএসএ অপেক্ষাকৃত নতুন পদ বা প্রতিষ্ঠান। ফলে সরকারের চাহিদা এবং পরিস্থিতির পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এই পদের দায়িত্ব ও কাজকর্ম ক্রমাগত বদলাচ্ছে। পরিবেশ এবং প্রয়োজনীয়তা অনুসারে মোট পাঁচ জন এনএসএ-ই বিভিন্ন এবং বৈচিত্র্যময় দায়িত্ব সামলেছেন। আমি আশা করব, এই প্রতিষ্ঠান পরিস্থিতি অনুযায়ী কাজ করবে এবং ক্রমশই বিকশিত হবে, আরও কার্যকরী ভূমিকায় তাকে দেখা যাবে অদূর ভবিষ্যতে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement