পূর্ব ইম্ফল ও কাংপোকপির সীমানায় পুলিশ ও সেনার সঙ্গে সেইলুন গুইতে। —নিজস্ব চিত্র।
মণিপুরে হিংসার মধ্যেই মানবিকতার নিদর্শন রাখলেন মেইতেই সম্প্রদায়ের একাংশ।
মণিপুরে এত দিনের সংঘর্ষের যা প্রকৃতি, তাতে এক পক্ষ সুযোগ পেলেই অন্য পক্ষের গ্রামে ঢুকে মানুষ মেরেছেন। রেহাই পাননি, মহিলা বা মানসিক ভাবে অসুস্থেরাও। কিন্তু সংঘর্ষের ১১৬তম দিনে ব্যতিক্রমী ঘটনার সাক্ষী থাকল মণিপুর। এ বার বিপক্ষকে খুঁজে বের করে হত্যা করা নয়, এক কুকি গ্রামবাসীকে বাঁচাতে হাত মেলালেন পূর্ব ইম্ফলের একটি গ্রামের মেইতেইরা।
পুলিশ জানায়, সেইলুন গুইতে নামে ৬২ বছরের এক ব্যক্তি কুকি অধ্যুষিত কাংপোকপি জেলার সাদাং গ্রাম থেকে বের হয়ে উদ্দেশ্যহীন ভাবে হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে যান পূর্ব ইম্ফলের মেইতেই গ্রাম পুখাও আহানলুপে। আজ সকালে ওই ব্যক্তিকে দেখতে পান গ্রামের মানুষ। জিজ্ঞাসাবাদ চালিয়ে বুঝতে পারেন, তাঁর মানসিক সমস্যা রয়েছে। চটপট তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন, সশস্ত্র মেইতেই বাহিনীর চোখের আড়ালে নিয়ে যেতে হবে ওই বৃদ্ধকে। অনর্থক রক্তপাত নয়। যে করে হোক লুকিয়ে রাখতে হবে তাঁকে। গ্রামের এক বাড়িতে সেইলুনকে আশ্রয় দেওয়া হয়। এর পর গোপনে গ্রামবাসীরা ফোন করেন নিরাপত্তাবাহিনীকে। কিন্তু মেইতেই গ্রাম থেকে কুকি ব্যক্তিকে বার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, এই খবর ছড়ালে বিপদ হতে পারে বলে আশঙ্কা ছিল বাহিনীর। তাই কাংপোকপির সাইকুল থানার ওসিকে খবর দেওয়া হয় চুপিসাড়ে বিষ্ণুপুর ও কাংপোকপির, অর্থাৎ মেইতেই ও কুকি অধ্যুষিত এলাকার বাফার জ়োনে চলে আসতে। এর পর গোপনে ওই বৃদ্ধকে আড়াল করে নিয়ে আসেন গ্রামের মানুষ। নিরাপদ স্থানে তাঁকে তুলে দেওয়া হয় পুলিশের হাতে। ইম্ফলের সাগোলমাং থানার ওসি বসন্ত এল বলেন, ‘‘এক জন নিরীহ মানুষের প্রাণ বাঁচাতে গ্রামের মানুষ ঝুঁকি নিয়েও যে মানবিকতার নিদর্শন রাখলেন আশা রাখি, তা বাকিদের কাছে উদাহরণ হয়ে উঠবে।’’