কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ফাইল চিত্র।
আগামী মাসে বিরোধী-শাসিত দুই প্রধান রাজ্য রাজস্থান ও বিহার সফরে যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বিহারের পূর্ণিয়া ও কিষণগঞ্জে সরকারি অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বিজেপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তিনি বৈঠক করবেন। ভোটমুখী রাজস্থানের জোধপুরে বিজেপির ওবিসি শাখার কার্যসমিতির দু’দিনের চিন্তন বৈঠক বসছে। সেখানেও থাকবেন শাহ।
বিহারে সদ্য বিজেপির হাত ছেড়ে আরজেডি-কংগ্রেসের সঙ্গে জোট সরকার গড়েছেন নীতীশ কুমার। বিজেপি-জেডিইউয়ের এই তিক্ততার আবহেই ২৩ সেপ্টেম্বর পূর্ণিয়া ও পরের দিন কিষণগঞ্জে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছেন অমিত। তবে সরকারি অনুষ্ঠানের সঙ্গেই দুই এলাকায় তিনি রাজনৈতিক সভা ও দলীয় বৈঠক করবেন। উত্তর বিহারের সীমাঞ্চল নামে পরিচিত এই এলাকা মূলত মুসলিম অধ্যুষিত, যাঁদের একটি বড় অংশের শিকড় বাংলাদেশে। এই এলাকায় হিন্দু ভোটের মেরুকরণ বিজেপির লক্ষ্য।
সীমাঞ্চলে সংখ্যালঘু জনসংখ্যার কথা ভেবে এত দিন সেখানে জেডিইউকেই প্রার্থী দিতে দিয়েছে বিজেপি। কিন্তু জোট ভাঙার পরে তারা এই এলাকায় নিজেদের শক্তিও বাড়াতে চাইছে। মনে করা হচ্ছে, সীমাঞ্চলে হিন্দু ভোটের মেরুকরণ হলে এবং আসাদুদ্দিন ওয়েইসির দল মুসলিম ভোটে বিভাজন ঘটালে আগামী লোকসভা এবং বিধানসভা ভোটে ওই এলাকায় বিজেপির ভাল ফলের আশা থাকবে। তাই এখন থেকেই সীমাঞ্চলের বিজেপি কর্মীদের উজ্জীবিত করে সংগঠনের শক্তি বাড়ানোর লক্ষ্যে সেখানে জনসভা ও বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অমিত শাহ। সূত্রের মতে, ওই এলাকায় আগামী দিনে সদস্য বাড়ানোই বিজেপির প্রধান লক্ষ্য।
বিহারের পাশাপাশি রাজস্থানেও ক্ষমতায় ফিরে আসাকে পাখির চোখ করেছে বিজেপি। আগামী বছরের নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌতের বিধানসভা কেন্দ্র জোধপুরকেই দলের ওবিসি মোর্চার বৈঠকস্থল হিসেবে বেছেছে নরেন্দ্র মোদীর দল। মুখ্যমন্ত্রীর গড়ে দাঁড়িয়ে তাঁকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে নেতা-কর্মীদের উজ্জীবিত করা যেমন বিজেপির কৌশল, তেমনই লক্ষ্য ওবিসি ভোটকে একজোট করে নিজেদের ছাতার তলায় আনা। সূত্রের মতে, রাজস্থানের ওবিসি সমাজের পাশে থাকার বার্তা দিতেই জোধপুরে ওবিসি মোর্চার বৈঠক ডেকেছে বিজেপি।
উত্তরপ্রদেশের গত ভোটে বিজেপির জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল ওবিসি ভোট। রাজস্থানের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫২ শতাংশই ওবিসি। সেই রাজ্যে তাই ওবিসি ভোটেই মূল নজর বিজেপির। কিন্তু মরুরাজ্যে ওবিসি সংরক্ষণ ঘিরে বিস্তর সমস্যা রয়েছে। ১৯৯৯ সাল থেকে রাজস্থানে জাঠেরা ওবিসি-র মর্যাদা পেয়ে আসছেন। ২০১৭ সালে বসুন্ধরা রাজে সরকার গুজ্জরদের জন্য ওবিসি ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ৫ শতাংশ সংরক্ষণের ঘোষণা করে। সব মিলিয়ে রাজস্থানে ওবিসিদের জন্য সংরক্ষণ গিয়ে দাঁড়ায় ২৬ শতাংশে।
কিন্তু রাজ্যের সামগ্রিক সংরক্ষণ পৌঁছে যায় ৫৪ শতাংশে। সামগ্রিক সংরক্ষণ ৪৯ শতাংশের বেশি হওয়ায় সরকারের ওই সিদ্ধান্ত খারিজ করে রাজস্থান হাই কোর্ট। সেই থেকেই জাঠেদের ২১ শতাংশ সংরক্ষণ কমানোর দাবিতে সরব গুজ্জর সমাজ। জাঠেরাও নিজেদের অধিকার রক্ষার আন্দোলনে সক্রিয়। তাই ওবিসি মোর্চার আসন্ন বৈঠকে সংরক্ষণের প্রশ্নে জাঠ-গুজ্জর ঐকমত্য গড়ে তোলাই বিজেপির সামনে বড় চ্যালেঞ্জ।