ফাইল চিত্র।
নোট বাতিলের মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত তাঁর মন্ত্রিসভার অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির অজানা ছিল বলে বিরোধীদের দাবি। গুজরাতে বিজয় রূপাণীর বদলে ভূপেন্দ্র পটেলকে যে মুখ্যমন্ত্রী করা হবে, সেই খবর নাকি জানতেন না খোদ বিজেপি সভাপতি জে পি নড্ডা। অভিযোগ, এ সবই নরেন্দ্র মোদীর একনায়কসুলভ সিদ্ধান্তের উদাহরণ। আজ যদিও বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমে মোদীর প্রধান সেনাপতি অমিত শাহ বললেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদী আদৌ একনায়ক নন। বরং তিনি আমার দেখা সব থেকে গণতান্ত্রিক নেতা।’’
২০০১ সালের ৭ অক্টোবর গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন মোদী। গত ৭ অক্টোবর তিনি প্রশাসক হিসেবে কুড়ি বছর পূর্ণ করেছেন। মোদীর সঙ্গে প্রথমে দলে, পরবর্তী সময়ে গুজরাত সরকারে এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় কাজ করার অভিজ্ঞতা আজ সংসদ টিভি-র একটি সাক্ষাৎকারে শুনিয়েছেন শাহ। প্রধানমন্ত্রীর একনায়কসুলভ ভাবমূর্তির অভিযোগ কতটা সত্যি, জানতে চাওয়া হলে শাহ বলেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদী আমার দেখা
অন্যতম গণতান্ত্রিক নেতা। যে অভিযোগ করা হচ্ছে, তা ভিত্তিহীন। দীর্ঘদিন এক সঙ্গে কাজ করার ভিত্তিতে বলতে পারি, আমি মোদীজির মতো শ্রোতা আগে দেখিনি। কোনও বৈঠকে যদি কোনও সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়, তা হলে মোদীজি সেই আলোচনায় কথা কম বলেন, উল্টে ধৈর্য সহকারে শোনেন বেশি। তার পরে সিদ্ধান্ত নেন। দু’-তিনটি বৈঠকের পরে তিনি কোনও সিদ্ধান্ত নেন। আমরাই বরং ভাবি, এত ভাবার কী আছে!’’ শাহের দাবি, প্রধানমন্ত্রী
আসলে বক্তার গুরুত্বের বদলে তাঁর মতামতের মূল্য বিবেচনা করেন। কাজেই তিনি ‘একনায়ক’— এই অভিযোগের কোনও সত্যতা নেই। যাঁরাই মোদীর সঙ্গে কাজ করেছেন, এমনকি তাঁর বিরোধীরাও নাকি স্বীকার করতে বাধ্য হবেন যে, মন্ত্রিসভা এত গণতান্ত্রিক ভাবে আগে কখনও পরিচালিত হয়নি।
অমিত শাহ ওই দাবি করলেও বিরোধীদের অভিযোগ, সরকার থেকে দল— সব ক্ষেত্রে মোদীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। অমিতের মতো ঘনিষ্ঠ এক বা দু’জন ছাড়া তাঁর সিদ্ধান্ত ঘুণাক্ষরে কেউ আঁচ করতে পারেন না। তা সে নোট বাতিল হোক কিংবা বিভিন্ন রাজ্যে ক্ষমতা দখলের পরে মুখ্যমন্ত্রী নিয়োগ। সেই অভিযোগের জবাবে আজ অমিত বলেন, ‘‘একটি বৈঠকে যা আলোচনা করা হয়, তা সব সময়ে জনসমক্ষে ফাঁস করা যায় না। তাই একটি ভুল ধারণা তৈরি হয়েছে যে, প্রধানমন্ত্রী সব সিদ্ধান্ত একা নেন। বাস্তবে প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন, সবার কথা শোনেন এবং ভাল-মন্দের দিকগুলি মূল্যায়ন করে তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন। মাথায় রাখতে হবে, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তাঁকেই নিতে হয়, কারণ তিনি প্রধানমন্ত্রী।’’
কৃষি আইনকে কেন্দ্র করে গত এক বছর ধরে বিক্ষোভের সাক্ষী থেকেছে গোটা দেশ। বিজেপিকে অস্বস্তিতে রেখে এখনও দিল্লির সীমানায় আন্দোলনে বসে রয়েছেন বিক্ষুদ্ধ কৃষকেরা। এই কৃষি আইন ঘিরে অসন্তোষেই মন্ত্রিসভা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল বিজেপির শরিক শিরোমণি অকালি দল। উপরন্তু উত্তরপ্রদেশে নির্বাচনের আগে লখিমপুর খেরির ঘটনায় রীতিমতো বিব্রত শাসক শিবির। এই আবহে আজ অমিতের বক্তব্য, কৃষক সমাজ কৃষি আইনের যে বিষয়গুলি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে, খতিয়ে দেখা গিয়েছে, সেগুলি অযৌক্তিক। উল্টে তাঁর দাবি, বিজেপি সরকার কৃষকদের আয় বাড়াতে বদ্ধপরিকর। সেই লক্ষ্যে সরকার একাধিক পদক্ষেপ করেছে। ১১ কোটি কৃষক প্রতি বছর ৬ হাজার টাকা করে অনুদান পাচ্ছেন। ইতিমধ্যেই দেড় লক্ষ কোটি টাকা কৃষকদের বণ্টন করা হয়েছে। অমিত বলেন, ‘‘ইউপিএ আমলে কৃষি ঋণ মাফ করা হয়েছিল কিন্তু তাতে কৃষকদের হাতে টাকা পৌঁছয়নি। কিন্তু আমরা যাতে কৃষকেরা হাতে টাকা পান, তার ব্যবস্থা করেছি— যাতে তাঁদের চাষের মূলধন জোগাতে সমস্যা না হয়। আমরা যা পদক্ষেপ করেছি, তা কৃষকদের স্বার্থেই।’’