আলোচনায় দল ও সরকারের কান্ডারি। নয়াদিল্লিতে বিজেপি জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে। শনিবার। ছবি: পিটিআই
মূল লড়াই অবশ্যই কংগ্রেস-সিপিএমের বিরুদ্ধে। তবে দলের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে আজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেও তোপ দাগতে ছাড়লেন না বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ।
দিল্লিতে দু’দিনের এই বৈঠকের শুরুতেই অমিত আজ জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ স্লোগানের প্রসঙ্গ তোলেন। তাঁর বক্তব্য, ব্যক্তি, দল বা সরকারের বিরুদ্ধে যে কোনও সমালোচনা চলতেই পারে। কিন্তু দেশের সমালোচনা বরদাস্ত করা হবে না। অমিত অভিযোগ করেন, ‘‘বাক্-স্বাধীনতার নামে কংগ্রেস সহসভাপতি রাহুল গাঁধী ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ স্লোগানের বিরোধিতা করেননি। আর মাও-এর ভক্ত, স্তালিনের সমর্থকদের থেকেও আমাদের বাক্-স্বাধীনতার পাঠ নেওয়ার প্রয়োজন নেই।’’
বিজেপি সভাপতি আজ প্রায় আগাগোড়াই কংগ্রেস ও বামেদের আক্রমণ করে গিয়েছেন। রাহুল প্রশ্ন তুলে থাকেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দেশকে কী দিয়েছেন? তারও জবাব দেন বিজেপি সভাপতি। দুর্নীতি, পরিবারতন্ত্র ও নেতৃত্বের অস্থিরতা থেকে মুক্ত সরকারের কথা বলে সনিয়া-রাহুল গাঁধীকে পাল্টা কাঠগড়ায় দাঁড় করান। এরই সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের প্রশ্নে তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতাকেও আক্রমণ করেন অমিত। বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে আমাদের রাজনৈতিক কর্মীদের আক্রমণ করা হচ্ছে। তাঁদের হত্যা করার চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু যত দমন করবে, ততই আমরা এগোব।’’ দলের কর্মীদের প্রতি বিজেপি সভাপতির আহ্বান, পশ্চিমবঙ্গ-সহ পাঁচটি রাজ্যের নির্বাচনেই দলের একটি ছাপ রাখার চেষ্টায় ঝাঁপিয়ে পড়ুন।
তাঁর মতে, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি এ বার একটি ‘সিরিয়াস প্লেয়ার’ হিসেবে উঠে আসবে।’’ পশ্চিমবঙ্গ-সহ বিভিন্ন রাজ্যে ভোটের রণকৌশল নিয়ে সবিস্তার আলোচনা হবে কাল। তার আগে অমিত আজ দলের অভিমুখটি স্পষ্ট করে দিলেন। বুঝিয়ে দিলেন, জাতীয় স্তরে বিজেপির প্রধান প্রতিপক্ষ কংগ্রেসই। তবে পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের জোটসঙ্গী বামেরাও বিজেপির আক্রমণের মূল লক্ষ্য। তবে ভোটের বাজারে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দলকেও ছেড়ে দিতে রাজি নন অমিত।
যদিও পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের বিরুদ্ধে কতটা আক্রমণ শানানো হবে, তা নিয়ে দলের মধ্যেই দ্বিমত রয়েছে। কারণ, রাজ্যসভায় গরিষ্ঠতাহীন বিজেপি অনেক ক্ষেত্রেই তৃণমূলকে পাশে পাচ্ছে। ভোট দিয়ে, না-দিয়ে কিংবা সভায় গরহাজির থেকে অনেক বিল ইতিমধ্যেই উতরে দিয়েছেন মমতার সাংসদরা। তাই তৃণমূলকে তেড়েফুঁড়ে আক্রমণ করার প্রশ্নে দলের একাংশে যে দ্বিধা রয়েছে, বিজেপির এক নেতা তা স্বীকারও করেন এ দিন। তাঁর বক্তব্য, দলের ওই অংশটি মনে করেন, পশ্চিমবঙ্গে এ বারের ভোটে বিজেপি যদি ক্ষমতা দখলের অবস্থায় না-ই আসতে পারে, তা হলে অহেতুক মমতাকে চটিয়ে লাভটা কী? বরং কংগ্রেস ও বামেরা যেহেতু সব সময়েই বিজেপির বিরোধিতা করে যাবে, তাই পশ্চিমবঙ্গে তাদের জোটকে দুর্বল করাই লক্ষ্য হওয়া উচিত । চেষ্টা করা উচিত, কোনও রাজ্যেই কংগ্রেস যাতে শক্তি বাড়াতে না পারে এবং আর বেগ না দিতে পারে রাজ্যসভায়।
দলের সভাপতি হিসেবে অমিত কিন্তু চান, চরম প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে নিজেদের শক্তি বাড়িয়ে অন্তত একটি সম্মানজনক অবস্থায় আসা যায় এবং সেটাই করা উচিত। দলের সভাপতি হিসেবে এটিও তাঁর কাছে একটি চ্যালেঞ্জ। আরএসএস-ও চায়, বিধানসভায় শক্তি বাড়িয়ে বিজেপি আগামী লোকসভা ভোটের জন্য ভিত আরও মজবুত করে রাখুক।
সেই অঙ্ক থেকেই অমিত আজ আজ বুঝিয়ে দিলেন, জাতীয় স্তরে কংগ্রেস প্রধান শত্রু হলেও পশ্চিমবঙ্গের ভোটে মমতাকেও তিনি কোনও ভাবে রেয়াত করতে রাজি নন। তাই দলের ভিন্ন দু’টি অবস্থানের মধ্যে তিনি একটি ভারসাম্যের লাইন নিতে চাইলেন। বিজেপি সূত্রের ব্যাখ্যা, ভোটের সময় নীতীশ কুমারকেও কোনও ভাবে রেয়াত করেননি প্রধানমন্ত্রী মোদী। কিন্তু ভোটের পরে এখন কিন্তু নীতীশের সঙ্গেও সখ্য রাখতে চান প্রধানমন্ত্রী। নিছকই যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর ধর্ম মানার দায় থেকে নয়, এর পিছনে স্পষ্ট একটি রাজনৈতিক কারণও আছে।
আগামী লোকসভায় ভোটে কংগ্রেস যাতে এই ধরনের আঞ্চলিক শক্তিগুলিকে সামনে রেখে মোদী-বিরোধিতার জোট গড়ে তুলতে না পারে, সেটিও সুকৌশলে সুনিশ্চিত করতে চাইছেন মোদী।
বিজেপি সভাপতি এ দিন সরকারের কাজকর্মের কথা মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ডাক দিয়েছেন দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে। বৈঠকে হাজির থাকলেও প্রধানমন্ত্রী এ দিন এই বিষয় নিয়ে মুখ খোলেননি। কাল বৈঠকের শেষ লগ্নে বলবেন তিনি।