সংসদেই অধীর চৌধুরীর অভিযোগের জবাব দিলেন অমিত শাহ।
জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের শান্তিনিকেতন সফরের একটি ঘটনা নিয়ে মঙ্গলবার তীব্র রাজনৈতিক উত্তাপ ছড়াল সংসদে। লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরীকে বিঁধলেন অমিত। আর তার সঙ্গে জড়িয়ে গেল পশ্চিমবঙ্গ, শান্তিনিকেতন এবং গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম।
বিষয়টির সূত্রপাত সোমবার। লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর অভিযোগ করেছিলেন, জানুয়ারিতে বীরভূম সফরে গিয়ে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যবহৃত চেয়ারে বসে নোবেলজয়ীকে অপমান করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। মঙ্গলবার সংসদে দাঁড়িয়েই অমিত যার জবাবে বললেন, অধীরের অভিযোগ ‘ভুল’। কংগ্রেস সাংসদকে বিঁধে অমিতের মন্তব্য, ‘‘উনি সঠিক তথ্য জানেন না। আমার কাছে সঠিক তথ্য রয়েছে। সত্যিটা হল, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ওই চেয়ারে বসেছিলেন। আরেক প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গাঁধী তাঁর সোফায় বসে চা-ও পান করেছিলেন।’’
শান্তিনিকেতনে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু।
তাঁর বক্তব্যের প্রমাণে নেহরু এবং রাজীবের শান্তিনিকেতন সফরের সময়কার ছবিও লোকসভায় দেখান অমিত। এবং দাবি করেন, শান্তিনিকেতন সফরকালে গুরুদেবের চেয়ারে নয়, তিনি বসেছিলেন জানালার ধারে একটি চেয়ারে। ওই বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীও। লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতাকে তিনি সরাসরি চিঠি লিখে জানিয়েছেন, অমিতকে নিয়ে তাঁর দাবি ‘অসত্য’। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দাবিকে মান্যতা দিয়ে বিদ্যুৎ চিঠিতে আরও লিখেছেন, ‘উত্তরায়ণ’-এ জানালার ধারের ওই অস্থায়ী আসনটিতে বসেছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা বিশ্বভারতীর আচার্য পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাটিল এবং প্রণব মুখোপাধ্যায়ও। ওই আসনটি গুরুদেবের নয় বলেই জানিয়েছেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য। অমিতের সফরের ছবি অধীরকে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো হয়েছে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করেছেন বিদ্যুৎ। বিষয়টি ‘স্পষ্ট’ করতে অধীরকে বিশ্বভারতীতে আমন্ত্রণও জানিয়ে রেখেছেন উপাচার্য।
শান্তিনিকেতনে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গাঁধী।
গত ২০ জানুয়ারি শান্তিনিকেতনে গিয়েছিলেন অমিত। সেখানে তিনি বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর পরিদর্শন। ঘুরে দেখেন কবিগুরুর স্মৃতি বিজড়িত বিভিন্ন ভবনও। কিন্তু সেই সফরের পরেই অমিতের রবীন্দ্রপ্রেম নিয়ে শোরগোল শুরু হয় বঙ্গ রাজনীতিতে। অভিযোগ ওঠে, শান্তিনিকেতনে গিয়ে গুরুদেবের চেয়ারে বসে তাঁকে ‘অপমান’ করেছেন অমিত। সোমবার সেই অভিযোগই আরও এক বার সংসদে করেছিলেন অধীর। কিন্তু অমিত সরাসরি অধীরের মোকাবিলা করেন তথ্য এবং চিত্র দিয়ে। যা থেকে রাজনৈতিক মহলের একাংশের ব্যাখ্যা, রাজ্যে বিধানসভা ভোটের আগে অমিতের বিরুদ্ধে কবিগুরুকে ‘অপমান’ করার অভিযোগ উঠলে ধাক্কা খাবে বাংলা এবং বাঙালির আবেগ। তাই কালক্ষেপ না করে মঙ্গলবার সংসদে কোমর বেঁধে নেমে পড়েন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
অধীরের অভিযোগ এবং অমিতের জবাবের সূত্রে আরও এক বার নেহরুকে নিয়ে শাসকদলের গলায় অভিযোগের সুর। কাশ্মীর সমস্যা, পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ইতিবৃত্ত, চিনের সঙ্গে সীমান্ত সঙ্ঘাত— এমন নানা ঐতিহাসিক বিষয় নিয়ে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নেহরুকে কাঠগড়ায় তোলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এ বার তাঁর সতীর্থ অমিতও নেহরুর বিরুদ্ধেই রবীন্দ্রনাথকে ‘অপমান’ করার অভিযোগ আনলেন। সেই নেহরু, যাঁর কন্যা ইন্দিরা বিশ্বভারতীর ছাত্রী ছিলেন পরবর্তীকালে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন।