ফাইল চিত্র
সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি সম্পর্কে তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের বক্তব্যের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করছে না কেন্দ্র। একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের দাবি, মহুয়ার বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হবে না বলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে মোদী সরকার।
বাজেট অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের উপর আলোচনার সময় কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া টেনে আনেন দেশের বিচারব্যবস্থা প্রসঙ্গ। পরে টুইটারে সেই বক্তব্যের অংশ বিশেষ তুলে ধরে মঙ্গলবার মহুয়া লেখেন, ‘দেশের বিচারব্যবস্থা পবিত্র নেই। যে দিন শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি নিজেই নিজের বিরুদ্ধে ওঠা যৌন হেনস্থার অভিযোগের বিচার করেছেন, সেই দিন থেকে ভারতীয় বিচার ব্যবস্থার পবিত্রতা নষ্ট হয়েছে। নিজেকে দোষমুক্ত ঘোষণা করা এবং অবসর নেওয়ার তিন মাসের মধ্যে রাজ্যসভার সাংসদ হিসাবে নিজের মনোনয়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, পেয়েছেন জেড ক্যাটেগরির নিরাপত্তা’।
মোটের উপর এই কথাগুলোই সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন মহুয়া। তার পরেই উত্তাল হয় পরিস্থিতি। আগের অনেকগুলি ভাষণের মতো তাঁর এই বক্তব্যও ভাইরাল হয় নেটমাধ্যমে। কেন্দ্রীয় সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী জানান, মহুয়ার মন্তব্যের জন্য তাঁর বিরুদ্ধে ‘স্বাধিকার ভঙ্গের প্রস্তাব’ আনা হতে পারে। কারণ, তিনি প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈকে আক্রমণ করেছেন বলে জোশীর দাবি।
সোমবার সন্ধ্যায় জোশী এ কথা জানালেও, মঙ্গলবার একেবারে উল্টো অবস্থান নিল কেন্দ্রীয় সরকার। যদিও মহুয়া নিজের অবস্থান থেকে নড়তে নারাজ। তাঁর বিরুদ্ধে স্বাধিকার ভঙ্গের অভিযোগ আসতে পারে জেনেও একের পর এক টুইটে মঙ্গলবার নিজের পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন তিনি।
সংসদে দেওয়া নিজের ভাষণের নির্বাচিত অংশ ভিডিয়ো হিসাবে টুইটারে পোস্ট করে তিনি একের পর এক কথা লিখেছেন। অভিযোগ তুলেছেন, দেশে ‘অঘোষিত জরুরি অবস্থা চলছে’। মহুয়ার ঠাট্টা, ‘সত্যি কথা বলার জন্য আমার বিরুদ্ধে স্বাধিকার ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়, তাহলে নিজেকে সৌভাগ্যবান বলে মনে করব’।
মহুয়ার বক্তব্য নিয়ে পাল্টা টুইটারে আক্রমণ করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও আসানসোলের বিজে্পি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়। তিনি মহুয়ার ভাষণ নিয়ে প্রকাশিত একটি খবরের কিছু অংশ সম্পাদনা করে লিখেছেন, ‘লোকসভায় মহুয়া মৈত্রের দেওয়া ভাষণ এ ভাবে পড়তে হবে (লাইনের ভিতরে ভিতরে পড়তে হবে)। আসলে উনি (মহুয়া মৈত্র) এই কথাগুলি বলার সময় নিজের রাজ্যের কথাই বলেছেন। বলেছেন পশ্চিমবঙ্গে তাঁর ‘স্বৈরতান্ত্রিক প্রধান’-এর কথা’।
মহুয়ার ভাষণে বিচার ব্যবস্থার পাশাপাশি, উঠে এসেছিল কৃষক আন্দোলনের প্রসঙ্গও। সেখানেই দেশে অঘোষিত জরুরি অবস্থার কথা তুলেছিলেন মহুয়া। এমন ‘ভিতু’ কেন্দ্রীয় সরকার এর আগে দেশে কখনও দেখা যায়নি বলেও আক্রমণ করেন মহুয়া। সেই শব্দবন্ধ নিয়েও পরবর্তীতে আপত্তি ওঠে।
ওই টেলিভিশন চ্যানেলের দাবি, কেন্দ্রীয় সরকার মুখে যাই বলুক, আইনি দিক থেকে দেখতে গেলে মহুয়ার বিরুদ্ধে এখনই ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব নয়। কারণ, তিনি একজন প্রাক্তন বিচারপতির নামে কথা বলেছেন। ফলে তা নিয়ে সরাসরি আইনি প্যাঁচে ফেলা যাবে না মহুয়াকে।