সাংবাদিকদের মুখোমুখি উদ্ধব ঠাকরে। বুধবার মুম্বইয়ে। পিটিআই
শুরুতেই গেল গেল রব! সন্ধ্যায় খবর রটল— শিবসেনার সঙ্গে আলোচনা তো দূর, অভিন্ন ন্যূনতম কমর্সূচি নিয়ে কংগ্রেস-এনসিপির বৈঠকই নাকি ভেস্তে গিয়েছে! এনসিপির অজিত পওয়ার বৈঠক ছেড়ে চলে গিয়েছেন বারামতী। তার কিছু ক্ষণ আগেই মুখ খুলেছেন অমিত শাহ। চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেছেন, ‘‘ক্ষমতা থাকলে সরকার গড়ুক অন্যেরা। দু’দিনের বদলে আমরা (পরেই শুধরে নিয়ে বলেন রাজ্যপাল) ছ’মাস সময় দিয়েছি।’’
ফলে দিল্লি থেকে মুম্বই— শুরু হয়ে যায় জল্পনা। তা হলে কি শাহ মাঠে নামতেই রণে ভঙ্গে দিলেন বিরোধীরা! এমন সময়ে এনসিপি নেতা জিতেন্দ্র আহদ সবাইকে আশ্বস্ত করে বললেন, ‘‘আসলে কিছু বিষয় গোপন রাখতে হয়। তাই অজিত পওয়ার বৈঠক বাতিলের কথা বলেছিলেন। বৈঠক হচ্ছে। অজিতও সেখানে উপস্থিত।’’ কংগ্রেস নেতা পৃথ্বীরাজ চহ্বাণও টুইট করেন, ‘‘দু’দলের বৈঠক চালু রয়েছে।’’ তবে বৈঠক বাতিলের কথা কেন রটল, তা নিয়ে মুখে কুলুপ দু’পক্ষেরই।
মহারাষ্ট্রের পরিস্থিতি নিয়ে নীরবতা ভেঙে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ আজ জানান, শিবসেনার ‘নতুন’ দাবি মানা সম্ভব নয়। শাহের কথায়, ‘‘আমি ও প্রধানমন্ত্রী বহু বার বলছি, আমাদের জোট ক্ষমতায় এলে দেবেন্দ্র ফডণবীস মুখ্যমন্ত্রী হবেন। তখন কেউ আপত্তি করেননি। এখন নতুন দাবি জানাচ্ছেন।’’ শিবসেনা অবশ্য ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকেই দাবি করছে যে, মুখ্যমন্ত্রিত্ব ভাগাভাগির কথা দেন শাহই।
এ দিন রাজ্যপালের সুপারিশকে সমর্থন করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘‘১৮ দিনেও কেউ সরকার গড়তে না পারায় রাষ্ট্রপতি শাসনের সুপারিশ করেন রাজ্যপাল। তিনি যা করেছেন, নিয়ম মেনেই করেছেন।’’
হাতে সময় পেয়ে কাল রাত থেকেই সরকার গড়ার লক্ষ্যে নতুন করে ঝাঁপিয়েছে বিজেপি। পৃথ্বীরাজ চহ্বাণের অভিযোগ, ‘‘অপারেশন লোটাস শুরু করেছে বিজেপি। শুরু হয়েছে দল ভাঙানোর খেলা।’’
তাই দেরি না করে আজ সকাল থেকেই পাল্টা মাঠে নামে শিবসেনা-কংগ্রেস-এনসিপি। উদ্ধব ঠাকরে দেখা করেন সনিয়া গাঁধীর ঘনিষ্ঠ আহমেদ পটেলের সঙ্গে। অভিন্ন ন্যূনতম কর্মসূচি নিয়ে কথা হয় তাঁদের। এর পর দুপুরেই দু’দলের পাঁচ জন করে নেতাকে নিয়ে কমিটি গড়ে ফেলে কংগ্রেস-এনসিপি। পৃথ্বীরাজের কথায়, ‘‘এক-দু’দিনের মধ্যেই অভিন্ন ন্যূনতম কর্মসূচির খসড়া তৈরি হয়ে যাবে। তার পরেই শিবসেনার সঙ্গে বসবে কমিটি। চূড়ান্ত কর্মসূচি সনিয়া গাঁধী, শরদ পওয়ার ও উদ্ধব ঠাকরের ঐকমত্যের ভিত্তিতে পাশ হবে।’’ আপাতত তিন দলের লক্ষ্য, পাঁচ থেকে সাত দিনের মধ্যে সরকার গঠন করে ফেলা।
তবে সূত্রের খবর, অভিন্ন কর্মসূচির প্রথম কাঁটা ভোটপ্রচারে কংগ্রেসের দেওয়া মুসলিমদের জন্য ৫ শতাংশ সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি। এই প্রতিশ্রুতি রাখতে তারা বদ্ধপরিকর। প্রশ্ন হল, কট্টর হিন্দুত্ববাদী শিবসেনার পক্ষে কি ওই দাবি মানা সম্ভব? সেনা শিবির অবশ্য বলছে, দলের মনোভাব সময়ের সঙ্গে পাল্টেছে। আদিত্য ঠাকরের মতো নতুন প্রজন্মের নেতারা সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলার নীতিতে বিশ্বাসী। ঠাকরেরা যদি সত্যিই সরকার গড়তে আগ্রহী থাকেন, তা হলে মুসলিমদের সংরক্ষণ নিয়ে আদৌও কোনও সমস্যা হবে না বলেই দলের বড় অংশের মত।
এনসিপি সূত্র জানিয়েছে, ক্ষমতার বিন্যাস নিয়ে শরদ পওয়ার ইতিমধ্যেই শিবসেনাকে বার্তা দিয়েছেন। তাঁর মতে, ১৯৯৫ সালের সমীকরণ মেনে সরকার গড়া হোক। তখন মুখ্যমন্ত্রিত্ব ছিল শিবসেনার হাতে। উপমুখ্যমন্ত্রিত্ব ও গুরুত্বপূর্ণ দফতর শরিক বিজেপি-কে দেওয়া হয়েছিল। পওয়ার চান, এ বারও মুখ্যমন্ত্রিত্ব শিবসেনার হাতে রেখে স্বরাষ্ট্র, অর্থ, পূর্ত, সড়কের মতো দফতর শরিকদের দেওয়া হোক।
শিবসেনার গলার দ্বিতীয় কাঁটা হল মুখ্যমন্ত্রিত্বের মেয়াদ। বিজেপির কাছে অর্ধেক সময়ের জন্য মুখ্যমন্ত্রিত্ব দাবি করার পরে এখন তা তিন ভাগ করার নীতি মেনে নেওয়া তাদের পক্ষে মুশকিল। বিকল্প প্রস্তাব হল, প্রথম ৩০ মাস শিবসেনার মুখ্যমন্ত্রী থাকুন। তার পর ১৫ মাস করে মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসুক এনসিপি-কংগ্রেস।
তবে কংগ্রেসের একাংশ এখনও শিবসেনার সঙ্গে সরকারে যেতে নারাজ। তাঁরা চান দল পিছনে থেকে সরকারকে সমর্থন দিক। যদিও দলীয় বিধায়কদের মতে, সরকারে না-গেলে কর্নাটকের মতো দল ভাঙাবে বিজেপি।