অমিত শাহ। —ফাইল চিত্র।
উত্তর-পূর্বে অনুপ্রবেশ রুখতে কড়া অবস্থান নেওয়ার ইঙ্গিত দিল ভারত। শনিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ অসমের তেজপুরে দাঁড়িয়ে জানান, মায়ানমার সীমান্ত ধরে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হবে। মূলত অনুপ্রবেশ রুখতেই কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত বলে জানা গিয়েছে। গুয়াহাটিতে অসম পুলিশের একটি কর্মসূচিতে শাহ বলেন, “বাংলাদেশ সীমান্তের মতোই ভারত-মায়ানমার সীমান্তকে সুরক্ষিত করা হবে।” একই সঙ্গে তিনি বলেন, “অসমের সমস্ত বন্ধু্কে জানাতে চাই, নরেন্দ্র মোদীর সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, মায়ানমার সীমান্ত ধরে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হবে।”
সীমান্ত অঞ্চলে বসবাসকারী মায়ানমারের বাসিন্দা বেশ কিছু গোষ্ঠীর সঙ্গেই সম্পর্ক রয়েছে উত্তর-পূর্ব ভারতে বসবাসকারী অনেক জনজাতির। সে কথা মাথায় রেখেই, সীমান্ত এলাকা থেকে একটি বিশেষ দূরত্ব পর্যন্ত এলাকার বসবাসকারীরা এত দিন ভিসা ছাড়াই ভারতের নির্দিষ্ট অংশ পর্যন্ত আসতে পারতেন। এ বার ১৯৭০ সাল থেকে চলে আসা সেই ‘ফ্রি মুভমেন্ট রেজিম’ তুলে দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন শাহ। তিনি বলেন, “সরকার ফ্রি মুভমেন্ট রেজিমের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে দেখছে।” ‘ফ্রি মুভমেন্ট রেজিম’ তুলে দেওয়া হলে বৈধ ভিসা নিয়েই ভারতে আসতে হবে মায়ানমারের বাসিন্দাদের।
বেশ কয়েক মাস ধরে অশান্ত মায়ানমারও। সে দেশের তিন বিদ্রোহী গোষ্ঠী— ‘তাঙ ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি’ (টিএনএলএ), ‘আরাকান আর্মি’ (এএ) এবং ‘মায়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মি’ (এমএনডিএএ)-র জোট ‘ব্রাদারহুড অ্যালায়্যান্স’ নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে সে দেশের সামরিক জুন্টা সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেছে। ওই অভিযানের পোশাকি নাম ‘অপারেশন ১০২৭’। বিদ্রোহীদের হামলার জেরে ইতিমধ্যেই সে দেশের অর্ধেক এলাকা সরকারি সেনার হাতছাড়া হয়েছে। উত্তর এবং উত্তর-পশ্চিম মায়ানমারের শান, চিন আর সাগিয়াং প্রদেশ রয়েছে এই তালিকায়।
এই পরিস্থিতিতে বিদ্রোহীদের চাপে মায়ানমারের ৬০০ সেনা গত তিন মাস ধরে মিজ়োরামের লংতোলাই জেলায় আশ্রয় নিয়েছেন। এর আগে অনুপ্রবেশ রুখতে এবং মায়ানমারের ওই সেনাদের দেশে ফেরানোর বিষয়ে উদ্যোগী হওয়ার জন্য কেন্দ্রকে আর্জি জানায় মিজ়োরাম সরকার। মায়ানমারের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সীমান্ত ভাগ করা আর এক রাজ্য মণিপুরের নিরাপত্তা উপদেষ্টা কুলদীপ সিংহ বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জানান, সে রাজ্যের সাম্প্রতিক হিংসার ঘটনায় মায়ানমারের জঙ্গিদের হাত থাকতে পারে। তবে এই বিষয়ে এখনও পর্যন্ত যে কোনও তথ্যপ্রমাণ নেই বলে জানান তিনি। এই আবহেই মায়ানমার সীমান্ত ধরে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার কথা ঘোষণা করলেন শাহ।