ফাইল চিত্র।
গত লোকসভা ভোটের আগে জল্পনা ছিল, নরেন্দ্র মোদী এ বার বারাণসীর সঙ্গে পুরী থেকেও ভোটে লড়বেন! শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। সারা দেশে মোদী ম্যাজিক সত্ত্বেও পুরীতে হারেন সম্বিত পাত্র। গুজরাতের সোমনাথ থেকে উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যা-বারাণসী জয়ের পরে পুরীতে বিজেপির রথ আটকে পড়ায় নিশ্চিত ভাবেই নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ খুশি হননি। এক বছর পরে আজ মোদী-শাহ জুটি পুরীর রথযাত্রায় যাতে বাধা না পড়ে, তা নিশ্চিত করতে সচেষ্ট হলেন।
চার দিন আগে সুপ্রিম কোর্ট পুরীর রথযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। বিজেপিও সমর্থন জানিয়েছিল। একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে সোমবার আদালতে মোদী সরকার সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পক্ষে সওয়াল করল। সুপ্রিম কোর্ট রথযাত্রার ছাড়পত্র দেওয়ার পরে গোটা বিজেপি নেতৃত্ব ‘জয় জগন্নাথ’ বলে এর পুরো কৃতিত্ব নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহর হাতেই তুলে দিয়েছে। ওড়িশার বিজেপি সভাপতি সমীর মোহান্তির বক্তব্য, ‘প্রভু জগন্নাথের পরম ভক্ত’ নরেন্দ্র মোদীর তৎপরতার জন্যই এ বছর রথযাত্রা হবে।
‘তৎপরতা’-র শুরু রবিবার সন্ধ্যা থেকে। প্রথমে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অমিত শাহর সঙ্গে কথা বলেন। তার পরে অমিত শাহ ফোন করেন পুরীর রাজা গজপতি দিব্যসিংহ দেব ও পুরীর শঙ্করাচার্য নিশ্চলানন্দ সরস্বতীকে। রথযাত্রার উপরে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে দু’জনেরই আপত্তি ছিল। ওই দু’জনের মতামত অমিত শাহ প্রধানমন্ত্রীকে জানান। সোমবার সকালে অমিত কেন্দ্রের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতার সঙ্গে কথা বলেন। নির্দেশ যায়, কেন্দ্রকে রথযাত্রার পক্ষেই সওয়াল করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমি পুরীর গজপতি রাজা, শঙ্করাচার্যের সঙ্গে কথা বলি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সোমবার সকালে সলিসিটর জেনারেলকেও সব দেখতে বলি।
অমিত শাহ
প্রথমে রায়কে স্বাগত জানালেও রবিবারই ওড়িশার বিজেপি নেতারা রথযাত্রা নিশ্চিত করতে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের দাবি তোলেন। সম্বিত রথযাত্রার উপরে নিষেধাজ্ঞার রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি জমা করেন। তিনি সোমবার শুনানির জন্য উপোস করেন। আজ সুপ্রিম কোর্ট ভক্তদের জমায়েত ছাড়া রথযাত্রার অনুমতি দেওয়ার পরে অমিত শাহ বলেন, “আমার মতো দেশের কোটি কোটি ভক্তদের আনন্দের কথা যে প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁদের আবেগ বুঝেছেন। এই মামলার যাতে ইতিবাচক ফল মেলে, তার জন্য চেষ্টা করেছেন। ফলে রথযাত্রার মহান পরম্পরা বজায় থাকছে।”
আরও পড়ুন: করোনা সংক্রমণে অল্প দিনেই কি রাশিয়াকে ছোঁবে ভারত
বিজেপি মনে করছে, এই ‘মন্দির রাজনীতি’-তে তারা আজ এক ঢিলে দুই পাখি মারল। এক, রথযাত্রার উপরে সুপ্রিম কোর্ট নিষেধাজ্ঞা জারি করায় ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়কের দিকে আঙুল উঠেছিল। রথযাত্রা নিশ্চিত করে বিজেপি পুরো কৃতিত্ব নিল। জগন্নাথের রথযাত্রা ঘিরে ওড়িশার মানুষের আবেগকে যে বিজেপি বোঝে, সেই বার্তা দেওয়া গেল। গুজরাতের সোমনাথ, অযোধ্যার রাম, কাশীর বিশ্বনাথের পরে পূর্ব ভারতে জগন্নাথ বা কৃষ্ণ ভক্তদের কাছেও পৌঁছনো গেল।
আরও পড়ুন: গরিব কল্যাণে ‘বঞ্চনা’, সরব অভিষেক-অধীর
দুই, ওড়িশাতে বিজেপির মূল লড়াই নবীনের সঙ্গে হলেও, জাতীয় রাজনীতিতে নবীনের বিজু জনতা দল বিজেপির পাশেই থাকে। সূত্রের খবর, নবীনের সরকারও বিপাকে পড়ে কেন্দ্রের সহযোগিতা চেয়েছিল। তাঁকেও অস্বস্তি থেকে উদ্ধার করা গিয়েছে। ওড়িশার মানুষকে বার্তা দিতে অমিত শাহ আজ ওড়িয়াতে টুইটও করেন। সুপ্রিম কোর্ট যাতে আগের রায় শুধরে রথযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়, তা নিশ্চিত করতে আজ সলিসিটর জেনারেল যুক্তি দেন, করোনা-সঙ্কটের সঙ্গে আপস না করে মানুষের বিশ্বাসকে মর্যাদা দিতে হবে। রথযাত্রার পক্ষে সওয়াল করতে মেহতার সঙ্গে প্রাক্তন সলিসিটর জেনারেল হরিশ সালভে, মোহন পরাশরন, রঞ্জিত কুমার, প্রাক্তন অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল মনিন্দর সিংহ, কে ভি বিশ্বনাথ, পি ভি নরসিংহ এবং মহেশ জেঠমালানি, সি এস বৈদ্যনাথন, অরিজিৎ প্রসাদের মতো বাঘা আইনজীবীদের নামানো হয়। কিন্তু বিজেপি যে প্রথমে রথযাত্রা বন্ধের রায়কেই সমর্থন করেছিল? বিজেপির এক প্রবীণ নেতার জবাব, “শবরীমালার ক্ষেত্রেও বিজেপি প্রথমে আয়াপ্পার মন্দিরে মহিলাদের প্রবেশকে স্বাগত জানিয়েছিল। পরে অবস্থান পাল্টে এর বিরোধিতা করে। রামমন্দির আন্দোলনের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে, বিজেপির ১৯৮৪-র ইস্তাহারেও রামমন্দিরের কোনও উল্লেখ ছিল না। পরে রামমন্দিরের দাবিতে আডবাণীর রথযাত্রাকে কেন্দ্র করেই বিজেপির উত্থান।”
পুরীর রথযাত্রাকে ঘিরে এ বার বিজেপি পূর্ব ভারতে এখনও অধরা জমিতে রথ ছোটানোর স্বপ্ন দেখছে।